Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড বহাল অবিলম্বে রায় কার্যকর হোক

সেপ্টেম্বর ১, ২০১৬, ০৬:৪২ এএম


মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড বহাল অবিলম্বে রায় কার্যকর হোক

৩১ আগস্টের প্রায় প্রতিটি জাতীয় পত্রিকায় মীর কাসেম আলীর গলায় ফাঁসির দড়িযুক্ত ছবি ছাপা হয়েছে। এতে বোঝা যায়, সে আর ফাঁসি থেকে রেহাই পাচ্ছে না। ১৯৭১-র মানবতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সে এখন রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারে। তাতেও তাঁর প্রাণ রক্ষা পাবে বলে মনে হয় না। রাষ্ট্রপতির দয়ার দ্বার মীর কাসেম আলীর মতো জাঁদরেল যুদ্ধাপরাধীর জন্য চিরতরে বন্ধ। ১৯৭১ সালে তাঁর অপরাধের ফিরিস্তি পত্রিকায় এসেছে। অর্থ-বিত্তের, গাড়ি-বাড়ির, ক্ষমতার, দাপটের মালিক সে। সেই দাপট ব্যবহার করেছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর, স্বাধীনতাপ্রিয় মানুষের ওপর। এমন কী নৃশংস হালাকু খানের মতোই এ ব্যক্তিটি- জামায়াতে ইসলামী নামের একটি সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান। তাঁর পক্ষে হরতালও ডাকা হয়েছে। এ সব যুদ্ধাপরাধীরা একবারও ভাবেনি, তলিয়ে দেখেনি ১৯৭০ সালের নিরঙ্কুশ রায় বৃথা যেতে পারে না। এমন সাধারণ প্রবাদও মনে রাখে নি। বেলুচিস্তানের কসাই নামে পরিচিত জেনারেল টিক্কা খানকে এরা আগ বাড়িয়ে সমর্থন দিয়েছিলো। ১৯৬৪ সালে টিক্কা খান আইয়ুবের নির্দেশে বেলুচিস্তানে প্লেন থেকে গুলিবর্ষণ করে মানুষ হত্যা করেছিলো ঈদের দিন। ১৯৭১ সালে মীর কাসেম আলীর মত প্রতাপশালী অপরাধীরা পবিত্র কোরান-হাদিস অবমাননা করেছে প্রতিটি মুহূর্তে। সংখ্যালঘু নারীদের বলেছে,‘গণিমতের মাল’। বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে বলেছে,‘ভারতের চর’। কখনো ভাবেনি বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা, কৃষক-শ্রমিক, মধ্যবিত্ত স্বাধীনতার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। ভূট্টোর নোংরা আচরণে বাঙালিরা অধৈর্যের চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছিলো, তারা অস্ত্র হাতে তুলে নিতে বাধ্য হয়েছিলো। 

১৯৭১ সালে মীর কাসেম আলীরা বিবেক ও মানবতা সবটুকু বন্ধক রেখেছিলো পাকিস্তানি খান সেনাদের ক্যান্টনমেন্টে। তাই তারা বুঝতে পারেনি বাংলাদেশের মানুষের অস্তিত্বের ওপর দ-ায়মান পাকসেনারা মানুষের জন্য চরম অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেদিন বাঙালি নারীদের ইজ্জতের নিরাপত্তা ছিলো না, শিশু-কিশোর-যুবক-বৃদ্ধ কারোর জান-মালের নিরাপত্তা ছিলো না। বাঙালিরা শখ করে স্বাধীনতা চায় নি। ঘাড়ের ওপর থেকে ফেরাউন, সাদ্দাত, আবু জেহেলের মতো দানবদের দ্রুত নামিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়ার জন্য স্বাধীনতা চেয়েছিলো। মহান মুক্তিযুদ্ধে এমন কিশোরও অংশ নিয়েছিলো যার হাতের রাইফেল তাঁর চেয়েও উঁচু ছিলো। ১৯৭১ সালে মীর কাসেম আলীরা ১০০ ভাগ দেশদ্রোহিতায় জড়িয়েছিলো। বিশ্ব বিবেকের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলো।
ভেবেছিলো, চীন-আমেরিকা থাকতে আবার ভাবনা কি? তারপর চোখের পলকে পতন হয়ে গেছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর আবার মীর কাসেম আলীরা মাথা তুলে দাঁড়ায়। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার রাজনীতিতে নেমে পড়ে। খুনখারাবিতে অংশ নেয়। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব অস্বীকার করতে শুরু করে। তারা বুক টান করে, চোখ বড় বড় করে বলতে থাকে,‘ ১৯৭১ সালে কোনো মুক্তিযুদ্ধ হয় নি, হয়েছে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ। যুদ্ধে মুসলমানদের পরাজয় হয়েছিলো।‘ কস্মিনকালেও তারা ১৯৭১ সালের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা করে নি।
এই মীর কাসেম আলীরা তাদের অর্থ-বিত্ত, ধন-সম্পদ ব্যয় করে বাংলাদেশে জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের জন্ম দিয়েছে। মীর কাসেম আলীদের শাস্তি জনগণের প্রত্যাশা মাফিকই হচ্ছে। গণজাগরণ মঞ্চের আহবানে শাহবাগে জড়ো হয়ে জনগণ জানিয়ে দিয়েছিলা, তারা মীর কাসেম আলীদের বিচার চায়। আমরাও দাবি জানাচ্ছি, বিলম্ব না করে মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকর হোক।