সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৬, ০৬:১৮ এএম
চট্টগ্রামের ডেথ ফ্যাক্টরি ডালিম হোটেলের জল্লাদ, বদর নেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। গত শনিবার রাত সাড়ে ১০ টায় ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ফাঁসির দন্ড কার্যকর হওয়ার পর মীর কাসেম আলীর লাশ নিজ জেলা মানিকগঞ্জে না আনার দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে জেলার বিপুল সংখ্যক জনসাধারণ।
মীর কাসেম আলীর জন্মস্থান মানিকগঞ্জের হরিরামপুর পালাগ্রাম। এখানে তার লাশ আনা হচ্ছে কবর দেবার জন্য, এই খবরের প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র এলাকায়। ফুঁসে ওঠে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন। জেলা সেক্টরস কমান্ডারস ফোরামের সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা মঞ্জুর আহমেদ বলেন, মীর কাসেম আলী মানবতার শত্রু, তার নেতৃত্বে নিরীহ অনেক মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। তার ফাঁসি হওয়ায় আমরা সন্তোষ প্রকাশ করছি। সেই সঙ্গে তার লাশ যেন মানিকগঞ্জের মাটিতে দাফন না করা হয় তার দাবি জানাচ্ছি।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার প্রকৌশলী তোবারক হোসেন খান এবং মানিকগঞ্জ জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসেন খান বলেন, তার ফাঁসিতে জাতি কলঙ্কমুক্ত হলো। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মা শান্তি পাবে। মীর কাসেমের গ্রামের বাড়ি সূতালড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম বলেন, নরঘাতক মানবতাবিরোধী এ অপরাধী অনেক মা-বোনের ইজ্জত নষ্ট করেছে। অনেকের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। তার সাজা কার্যকর করার মধ্য দিয়ে বাঙালি নতুন আলোয় আলোকিত হলো। হরিরামপুরের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান আবদুর রব বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে মীর কাসেমের সাজা হয়েছে। আমরা তার লাশকে এলাকায় দাফন করতে দেবো না। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে তা প্রতিহত করা হবে।
ফাঁসির দ-প্রাপ্ত মীর কাসেম আলীর লাশ মানিকগঞ্জে দাফন না করার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জেলা আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজন। বিষয়টি আবেগের পানসিতে ভাসিয়ে দিলে চলবে না।
খোদ এলাকার লোকজন যদি সাক্ষ্য দেয় যে, মীর কাসেম আলী মানবতা লংঘনকারি ও মা-বোনের ইজ্জত হরণকারি ছিলো তাহলে তাকে অভ্রান্ত বলে ধরে নিতে হবে। কারণ এলাকার লোকজন স্বচক্ষে দেখেছিলেন প্রতিটি অত্যাচারি রাজাকারের গণবিরোধী ভূমিকা, তারা গণহত্যায় আর নারী ধর্ষণে মেতে উঠেছিলো। গ্রাম পর্যায়ের জনপদে ধ্বংসলীলা চালাবার দায়িত্ব কাধে তুলে নিয়েছিলো মীর কাসেম আলীর মত বদর নেতা ও রাজাকাররা। অন্যান্য ফাঁসির দন্ডে দন্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের এলাকা থেকেও দাবি উঠেছিলো, তারা যুদ্ধাপরাধীর লাশ এলাকায় দাফন করতে দেবে না।
এটা তাদের জন্য দ্বিতীয় ফাঁসি বলে মনে হওয়া স্বাভাবিক। মৃত ব্যক্তির প্রতি মানুষের সহানুভূতি জেগে ওঠে। কিন্তু যুদ্ধাপরাধীর লাশের প্রতি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কোনো মানুষের সহানুভূতি জাগ্রত হয় নি। বরং এলাকায় লাশ দাফন না করার সোচ্চার দাবি উঠে। ব্যাপারটি তাৎপর্যপূর্ণ একই সঙ্গে শিক্ষণীয়। এটা হচ্ছে জন্মভূমির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার পরিণাম। ইসলাম জন্মভূমির গুরুত্ব দিয়েছে। ইসলামে বলা হয়েছে, ‘দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ’,। মীর কাসেম আলীরা ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে আমাদের জন্মভূমিকে তুলে দিতে চেয়েছিলো।
এমন একজন জল্লাদ, প্রমাণিত অপরাধীর পক্ষে হরতাল ডেকেছে জামায়াতে ইসলাম। অপরাধী হওয়া সত্ত্বে¡ও দলের লোকের পক্ষে অবস্থান নেয়া রাজনীতি হতে পারে- ইসলাম হতে পারে না। এতে প্রমানিত হয় ইসলাম ও জামায়াতে ইসলাম এক জিনিস নয়। তাই মীর কাসেম আলীর এলাকার লোকজন তার লাশ দাফনের যে বিরোধিতা করেছে তার ন্যায্যতা অনস্বীকার্য।