Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

বিদেশে নারীকর্মী পাঠাতে অনীহা নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা উচিত

সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৬, ০৬:৪০ এএম


বিদেশে নারীকর্মী পাঠাতে অনীহা নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা উচিত

নারী শক্তিকে কাজে লাগানোর প্রয়োজন কেবল দেশেই নয়, বিদেশেও অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। বিগত কয়েকবছর উল্লেখযোগ্য হারে নারী জনশক্তি বিদেশে রফতানি করছে বাংলাদেশ। এতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হচ্ছে। কিন্তু ২৫ সেপ্টেম্বর আমার সংবাদ-এ প্রকাশিত খবরটি উদ্বেগজনক। বলা হয়েছে, বাংলাদেশি নারী কর্মীদের অনেকেই বিদেশে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এর দায়ভার এসে পড়েছে রিক্রুটিং এজেন্সির ওপর। এতে বিপাকে পড়েছেন রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা। এ কারণে এজেন্সিগুলো বিদেশে নারীকর্মী পাঠাতে চাচ্ছে না।

এ ধরনের বিড়ম্বনা এড়ানো না গেলে সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করেন বায়রা নেতারা। আমাদের নজরে আছে যে, সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্নদেশে পুরুষের পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে বাড়ছে নারীশক্তি রফতানি। হিসেব নিলে দেখা যাবে, মুসলিম বিশ্বেই বাঙালি নারীরা সবচেয়ে বেশি কাজ করছে। অর্থ উপার্জনের প্রয়োজনে আমাদের নারীরা গৃহবন্দি না থেকে, কুসংস্কার আর অন্ধবিশ্বাসের দেয়াল টপকিয়ে একাই যাচ্ছে বিদেশে শ্রম বিক্রি করতে। এটাতো দেশের জন্য, জাতির জন্য কল্যাণমূলক। ফতোয়া দিয়ে তো পেট ভরবে না। জীবনকে চালিয়ে নেয়ার জন্য দরকার অর্থ। প্রয়োজনের তাগিদেই বাঙালি নারীকে বিদেশে যেতে হচ্ছে নানা ধরনের কাজ করে টাকা উপার্জন করতে। সে ক্ষেত্রে যদি নারীরা নির্যাতনের শিকার হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট এজেন্সি ও সরকার, কোনো পক্ষই দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। গণমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত মোট জনশক্তি রফতানি হয়েছে ৫ লাখ। এর মধ্যে নারীকর্মীর সংখ্যা ৮০ হাজারের বেশি। ভাগ্য বদলের আশায় বিদেশে পাড়ি জমানো এসব নারীদের অনেকেই অপ্রত্যাশিতভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আর এজন্য দায়ী করা হচ্ছে রিক্রুটিং এজেন্সিকে। কিন্তু জনশক্তি রফতানি কারকদের সংগঠন বায়রা নেতারা বলছেন, এ দায় তাদের নয়। এজেন্সি মালিকদের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের বলা হয়েছে, বিদেশে নারীকর্মীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলে তার দায় এজেন্সিকে একচেটিয়া দেয়ার কারণে অনেক ভালো ভালো এজেন্সি এখন নারী শক্তি রফতানিতে আগ্রহ হারাচ্ছে। যারা নারী শ্রমিক রফতানি করে বেশ ব্যবসা করতো, সে সব এজেন্সিও এখন শঙ্কিত।

এ সমস্যার সমাধান না করা হলে শ্রমবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বায়রার মহাসচিব বলেছেন, বিদেশে আমাদের পাঠানো নারীরা ভালো থাকলে আমাদের সুনাম। আমরা চাইবো না যেনতেন ভাবে নারীদের পাঠিয়ে ঘুম হারাম করতে। এ প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, জনসংখ্যা বিবেচনায় বিদেশে নারীকর্মী নির্যাতনের পরিমাণ খুব কম।

এসব ঘটনায় জনশক্তি রফতানিকারকরা অন্যায়ভাবে হয়রানির শিকার হলে তা বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। শতকরা একভাগ নির্যাতনের জন্য বিদেশে শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করা যায় না। নারীকর্মীদের বিদেশে পাঠানোর আগে সেখানকার পরিবেশ, কাজের ধরন এবং ভাষা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়ার পরামর্শ দেন মন্ত্রী। মাননীয় মন্ত্রীর সঙ্গে আমরা সহমত পোষণ করি। কিন্তু নির্যাতনের হার কম বলে বিদেশে নারীকর্মীদের নির্যাতন সম্পর্কে উদাসীন থাকা যায় না, ব্যাপারটিকে ছোট করে দেখায় বিপদ আছে। এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে উদাসীন থাকলে সামনে নির্যাতনের হার বাড়তে থাকবে। এর কুফল জাতীয় লোকসান ডেকে আনবে। নারীরা বিদেশে যেতে আগ্রহ হারাবে। তাতে বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার বিপর্যস্ত হবে। দেশের প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে।

আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, সরকার ও রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সার্বক্ষণিক বিদেশে বাংলাদেশি নারীকর্মীদের সুবিধা-অসুবিধার দিকটি নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা।