Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

স্থগিত হলো সার্ক শীর্ষ সম্মেলন চাই শান্তিপূর্ণ সহবস্থান

সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৬, ০৯:৫২ এএম


স্থগিত হলো সার্ক শীর্ষ সম্মেলন চাই শান্তিপূর্ণ সহবস্থান

আগামী নভেম্বরে পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় সার্ক শীর্ষ সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে, এমন তথ্য দিয়েছে নেপালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ, ভারত, আফগানিস্তান ও ভুটান এবারের সম্মেলনে অংশ না নেয়ার কথা জানিয়ে দেয়ার পর সম্মেলন স্থগিতের বিষয় অনিবার্য হয়ে ওঠে। সার্কের সদস্য এই ৪ দেশ ইতোমধ্যে তাদের অপারগতার কথা জোটের বর্তমান চেয়ার নেপালকে জানিয়ে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের পবিত্রস্থানে অন্তত এ বছর আর সার্ক সম্মেলন হচ্ছে না। নিয়ম আছে, জোটের একটি দেশও সম্মেলনে অংশ না নিলে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে না। নেপালও বলেছে, এ অঞ্চলের যা পরিস্থিতি, তাতে সহসা এ সম্মেলন আয়োজন হবে বলে মনে হয় না।

দক্ষিণ এশিয়াকে একসূত্রে গাঁথার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৮৫ সালে গঠিত সার্ক এখন পাক-ভারত উত্তেজনার প্রেক্ষিতে ভণ্ডুল হবার উপক্রম হয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, বাংলাদেশের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে অব্যাহতভাবে পাকিস্তান হস্তক্ষেপ করায় ইসলামাবাদে প্রস্তাবিত সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। গত বুধবার দুপুরে এ তথ্য তিনি জানিয়েছেন। এর যৌক্তিকতা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে যে সম্পর্ক থাকা উচিত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে একটি রাষ্ট্রের অব্যাহত হস্তক্ষেপ এই সম্মেলন আয়োজনের উপযোগী নয়। পাশাপাশি আমরা বলেছি, সার্কের প্রতিষ্ঠাতা দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আঞ্চলিক সহযোগিতা, কানেকটিভিটি ও সার্বিক সহযোগিতার বিষয়টি বিশ্বাস করে। সময় ও সুযোগ যখন হবে তখন বাংলাদেশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবে।

মন্ত্রীর এই যুক্তির মধ্যে কোনো ফাঁক নেই। উস্কানিও নেই। সার্কভুক্ত ৮ টি দেশের মধ্যে ভারত-পাকিস্তান দুটো ভাইটাল দেশ। বাংলাদেশের অবস্থানও গুরুত্বপূর্ণ। ভারত ও বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক অতি সম্প্রতি চরম উত্তেজনায় উঠেছে। তাছাড়া ১৯৭১ সালের পরাজয় পাকিস্তান আজও সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি; ভারত-বাংলাদেশকেও সহজ দৃষ্টিতে দেখে না পাকিস্তান। পাকিস্তানের অভ্যন্তরে অজস্র সমস্যা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে অযাচিত মন্তব্য ও হস্তক্ষেপ করে যাচ্ছে। ভারতের উরিতে ১৮ জন সেনা হত্যার আগেই বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। তদুপরি ভারত-পাকিস্তান দু’টি সার্কভুক্ত দেশের মধ্যেও চলছে চরম উত্তেজনা। একে অপরকে হুমকি দিয়ে চলেছে। যুদ্ধ বিমান আর পারমাণবিক বোমা প্রস্তুত করে রেখেছে একে অপরের বিরুদ্ধে। ২৯ সেপ্টেম্বর, পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে, ভারতের রাজস্থান সীমান্তে বিপুল সৈন্য সমাবেশ করেছে পাকিস্তান।

পাকিস্তানের স্থল বাহিনী এবং বিমানবাহিনী যৌথভাবে এই বিরাট সমাবেশ করেছে। সীমান্ত থেকে মাত্র ১৫/২০কিলোমিটার দূরে পাকিস্তানের এই সামরিক জমায়েতের খবর পেয়ে রাজস্থান সীমান্তে শক্তি বৃদ্ধি শুরু করেছে ভারতও। নিশ্চয়ই এ উত্তেজিত পরিবেশে পাকিস্তানের মাটিতে অনুষ্ঠেয় সার্ক সম্মেলনে যোগ দিতে পারে না ভারত। সঙ্গত কারণে ২০১৬ সালের সার্ক সম্মেলন স্থগিত হয়ে গেলো। পরবর্তীকালে আর সার্ক সক্রিয় হয় কী না তারও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক সহজ হওয়ার পথ প্রায় রুদ্ধ হয়ে এসেছে। মৌলবাদ ও মোল্লাতন্ত্র নির্ভর পাকিস্তানের উস্কানিমূলক আচরণ এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। তবুও আমরা চাই সার্ক সচল হয়ে উঠুক। পাক-ভারত উত্তেজনা প্রশমিত হোক, পরস্পর আলোচনার মাধ্যমে সকল সমস্যা নিরসন হোক। উত্তেজনা চরমে উঠতে উঠতে যদি দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের দামামা বেঁজে ওঠে তাহলে উপমহাদেশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যাবে। এমন সর্বনাশ আমাদের কাম্য নয়।