Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

ফ্লাইওভারে বাড়ছে অপরাধ দরকার নিয়মিত পর্যবেক্ষণ

অক্টোবর ৩, ২০১৬, ০৫:৫৯ এএম


ফ্লাইওভারে বাড়ছে অপরাধ দরকার নিয়মিত পর্যবেক্ষণ

‘ফ্লাইওভারে বাড়ছে অপরাধ’-এই শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক আমার সংবাদে। যানজট নিরসনের লক্ষ্যে, মানুষের পারাপারের সুবিধার্থে সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে রাজধানীতে ফ্লাইওভার দিয়েছে। সেই ফ্লাইওভারে হচ্ছে নানা ধরনের ক্রাইম। এটাতো দেশের জন্য দুর্ভাগ্যজনক খবর।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীর ফ্লাইওভারগুলোতে রাতের বেলায় মাদকসেবী ও মাদকব্যবসায়ীসহ সন্ত্রাসীদের আড্ডা জমে উঠে। আর মাঝে মধ্যেই পথচারীরা নানা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। এর ফলে ফ্লাইওভার দিয়ে চলাচলকারী ভুক্তভোগীরা নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন। এ সব ফ্লাইওভার যানজট নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রেখে চলেছে। অথচ ফ্লাইওভারগুলোর নিচে দিনের আলোতেই প্রকাশ্যে চলে মাদকসেবন ও মাদকবিক্রি এবং সন্ধ্যার পর শুরু হয় ছিনতাইকারীদের উৎসব। তারা গাড়ি পার্কিং করে সাধারণ মানুষের মতো আড্ডা দেয় এবং শিকার ধরার জন্য অপেক্ষা করে। রাতের বেশির ভাগ সময় ফ্লাইওভারের ওপরে থাকে অন্ধকার। পুলিশ কাছাকাছি থাকলেও তাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। রাতে অরক্ষিত ফ্লাইওভার ব্যবহারকারীরা বিপদে পড়ে সহযোগিতার জন্য খোঁজ করেও পান না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তেমন কোনো নিরাপত্তা রক্ষার ভূমিকা চোখে পড়ে না। প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে, মহাখালী, কুড়িল ফ্লাইওভারে সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন জনকে হত্যা করে লাশ ফেলে যায়। পরে পুলিশ তা উদ্ধার করে। সন্ত্রাসী, মাদকসেবী ও অপরাধীরা ফ্লাইওভারগুলো বেছে নিয়েছে অপকর্মের স্পট হিসেবে। জানা যাচ্ছে, রাত একটু গভীর হলে, নির্জনতা নেমে আসলে ফ্লাইওভারে জড়ো হয় সন্ত্রাসীরা। তারা পথচারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে টাকা-পয়সা, সোনাগহনা ছিনতাই করে। সূত্রটি বলছে, ২০১৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর রাতে মহাখালী ফ্লাইওভারের ওপর সাইফুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থীকে গুলি করে ও কুপিয়ে তার মোটরসাইকেল কেড়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি ছিলেন ঢাকা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র। তিনি মোটরসাইকেল যোগে রাত ৮ টার দিকে উত্তরা এক আত্মীয় বাড়িতে যাচ্ছিলেন। মহাখালী ফ্লাইওভারের ওপর অবস্থান নেয়া মাইক্রোবাস থেকে ৪ জন দুর্বৃত্ত তার গতিরোধ করে মোটরসাইকেলটি ছিনিয়ে নেয়। এমন কমপক্ষে ২৫টি উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে; একটির দৃষ্টান্ত এখানে তুলে ধরা হলো। এমন ঘটনাও ঘটেছে এবং ঘটছে যে বনানী-মিরপুর ফ্লাইওভারের ওপর থেকে এক পথচারীকে আটক করে, অস্ত্র ঠেকিয়ে, ডাচ বাংলা ব্যাংকের এটিএম কার্ড দিয়ে ৪০ হাজার টাকা উঠিয়ে নিয়েছে ছিনতাইকারীরা। এরপর দুর্বৃত্তরা কুড়িল ফ্লাইওভারে তাকে ফেলে চলে যায়। নির্জনস্থান হিসেবে ফ্লাইওভারগুলো ছিনতাই করার জন্য বেছে নিয়েছে সন্ত্রাসীরা। প্রকাশ্য দিবালোকে ফ্লাইওভারের নিচে বিক্রি হচ্ছে ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক। আর এ সব মাদক কেনার টাকা যোগাড় করতে ফ্লাইওভারের পথচারীদের টার্গেট করছে সন্ত্রাসীরা। দিনের বেলায় নামকাওয়াস্তে পুলিশের পাহারা থাকলেও রাতের বেলা ফাঁকা। এ সময় পুলিশ পাহারা থাকে না। অনেক সময় ফ্লাইওভারগুলোতে রাতে বাতিও থাকে না। রাজধানীর শাজাহানপুর এলাকার কয়েকজন ভুক্তভোগী জানিয়েছেন যে, ছিনতাইকারীদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না কোনো শ্রেণি-পেশার মানুষ, এমন কী পুলিশ সদস্যরাও। সন্ধ্যার পর খিলগাঁও ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে অনেকেই যাতায়াত করার সাহস পান না। এ সব অপরাধীর বিরুদ্ধে পুলিশ রহস্যজনকভাবে নিরব। ফ্লাইওভারগুলোতে সিসিটিভি, ল্যাম্পপোস্ট ও যথাযথ পুলিশ পাহারা না থাকায় এমন সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটে চলেছে অনায়াসে। তাছাড়া রাজধানীর চানখাঁর পুল থেকে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের দুই ধারের উঁচু ভবন, ক্রমানুসারে যানবাহনগুলোর চলাচলে যে কেউ মুগ্ধ হবেন। শুধু তাই নয়, এ উড়াল সড়ক দিয়ে চানখাঁরপুল থেকে গুলিস্তান যেতে সময় লাগে ২ মিনিট। কিন্তু নিচের দৃশ্য ভিন্ন। দেখা যাবে উল্লাসে মেতে উঠেছে গাঁজাসেবীরা। বিক্রি হচ্ছে মাদক। নারী কেলেঙ্কারির ঘটনাও ঘটছে এখানে।


আমরা যৎপরোনাস্তি উদ্বিগ্ন হয়েছি এমন ক্রাইমের খবরে। যদি পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ফ্লাইওভারের ওপর ও নিচের জঘন্য অপরাধ দৃঢ় পদক্ষেপে দমন না করে এবং সর্বক্ষণ পর্যবেক্ষণ না করে তাহলে সারাদেশে এই অপরাধ ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়বে। সিটি মেয়র দ্বয়কেও আমরা অনুরোধ জানবো বিষয়টি নজরে নিতে।