Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

খাদিজা আক্তারের ওপর হামলা সর্বোচ্চ শাস্তির প্রত্যাশা

অক্টোবর ৮, ২০১৬, ০৬:২০ এএম


খাদিজা আক্তারের ওপর হামলা সর্বোচ্চ শাস্তির প্রত্যাশা

গত সোমবার ৩ অক্টোবর, সিলেটের কলেজছাত্রী খাদিজা আক্তারের ওপর হৃদয়হীন হামলা চালিয়েছে বদরুল আলম নামক এক প্রেম প্রত্যাশী বিকৃত কামুক। এক তরফা প্রেমের পরিণতি বদরুল আলমের জন্যও ভালো হলো না। বদরুল যে ঘটনা ঘটিয়েছে তাতে সে তাঁর পরিবারের মানমর্যাদা এবং ঐতিহ্যবাহী ছাত্রলীগের মানমর্যাদা ধরে টান মেরেছে। খাদিজা আক্তারের ঘটনাকে পুঁজি করে অনেকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে। এ ঘটনাকেও আমরা নিন্দা জানাই। বাংলাদেশে খুব কম ছাত্র সংগঠনই ধোয়া তুলসীপাতা। স্বৈরাচারের আমলের এক ছাত্র নেতা নিষিদ্ধ এলাকায় মৃত্যুবরণ করেছিলেন, অন্য একটি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের বুকের ওপর বসে নির্যাতন করেছিলো, সে সব পুরোনো পত্রিকার ফাইল খুললে পাওয়া যাবে। মানবতার দিকটি বিবেচনা করে সব ব্যাপারে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করা ঠিক নয়। অবশ্য এ প্রবণতা বাংলাদেশে কমন। খাদিজা আক্তারের ওপর হামলাকে কেউ পরোক্ষভাবেও সমর্থন করে নি। এমন পৈশাচিক ঘটনাকে কেউ সমর্থন করতে পারে না। ওই নরপশুর শাস্তি দাবি করে অব্যাহত আছে আন্দোলন, মিছিল, বিক্ষোভ। স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, অপরাধী যে-ই হোক তার শাস্তি হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একই কথা বলেছেন। আমরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করছি এ কথা জেনে যে, সরকার খাদিজা আক্তারের চিকিৎসার ব্যয় বহন করবেন। আন্দোলনকারীরা দাবি করেছেন, খাদিজা আক্তারের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আমরা এই দাবি সমর্থন করি। আন্দোলনকারীরা আরও দাবি করেছেন, দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা তাও সমর্থন করি। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, দলীয় পরিচয় মুখ্য নয়; সিলেটের শিক্ষার্থী খাদিজা আক্তারের ওপর হামলাকারী বদরুল আলমের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে। অপরাধী যে-ই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে আইনগত সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভবিষ্যতে যেন এই ধরনের কাজ না ঘটে এবং এ সব ঘটনায় যেন সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করতে না পারে। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেও বদরুল আলমের শাস্তি দাবি করা হয়েছে। এ ব্যাপারটা নিশ্চিত যে, বদরুলকে কেউ ডিফেন্স দেয় নি। চুল পরিমাণ সহানুভূতি পায় নি সে। পত্রিকায় দেখেছি, পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে বদরুল তাদেরই প্রতিষ্ঠিত এক স্কুলে সহকারী প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতো। সেখান থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরাও তার শাস্তি দাবি করেছে। ইতিবাচক একটি দিক হলো, বদরুল পালাবার চেষ্টা করে নি। সে পুলিশের হেফাজতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ক্রুদ্ধ আন্দোলনকারীরা তাকে বেদম প্রহার করেছে। বদরুল পুলিশের কাছে দোষ স্বীকার করেছে। খাদিজা আক্তার তাঁর প্রেমে সাড়া দেয়নি বলে সে খাদিজাকে আক্রমণ করেছে। তার স্বীকারোক্তিও তাকে শাস্তির দিকে সহজেই ঠেলে দেবে। ভেবে অবাক হতে হয়, বদরুল একজন মেধাবী ছাত্র, ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক এবং একটি স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক হয়ে কী করে এত অবুঝ হলো যে, যাকে ভালোবেসেছে তাঁর ওপর চাপাতি চালালো? দুই পক্ষের সমর্থন ছাড়া প্রেম হয় না, এটা জানা কথা। জোর করে প্রেম করা যায় না তাও জানা কথা। একটি নাটকের সংলাপ মনে পড়লো, ‘ জোর করে ফুল ফোটানো যায় না, জোর করে ফুল ফোটাতে গেলে ফুল ঝরে যাবে, তবুও তা কোমল হয়ে ফুটবে না।’ এ ক্ষেত্রেও তাই হলো। খাদিজার জীবন আজ সংকটাপন্ন। একই সঙ্গে বদরুলের জীবনও চিরতরে ধ্বংস হয়ে গেলো। তার ভবিষ্যত এক ফুৎকারে নিভে গেলো। বদরুলের অপকর্ম থেকে আমাদের সমাজের তরুণদের শিক্ষা নেয়া উচিত। এমন ঘটনা কিন্তু আরও ঘটেছে।

রাজধানীর লিটিল উইলস্ ফ্লাওয়ার স্কুলের ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশাকেও এক বিকৃত প্রেমিক হত্যা করে। এটা একটি সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক রোগ, মেয়ে দেখলেই প্রেম নিবেদনের ইচ্ছে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। এ সব বখাটেপনার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন হওয়া দরকার। তাতেই কাজ হবে বেশি। বদরুলের শাস্তি নিশ্চিত করা আমাদের জোরালো দাবি।