Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

মিয়ানমারের পুলিশ ছাউনিতে হামলা সতর্ক থাকতে হবে আমাদের

অক্টোবর ১১, ২০১৬, ০৬:০১ এএম


মিয়ানমারের পুলিশ ছাউনিতে হামলা সতর্ক থাকতে হবে আমাদের


বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন মিয়ানমারে ৩টি পুলিশ ছাউনিতে আকস্মিক হামলা চালিয়েছে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)। এই চোরাগোপ্তা হামলায় অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৯ জন পুলিশ কর্মকর্তা আছেন। গত রোববার ভোরে মংডুর কাছে এ হামলা চালানো হয়। এ সময় পাল্টা আক্রমণে ৮ হামলাকারী নিহত হয়েছে। সুনির্দিষ্টভাবে জানা না গেলেও মিয়ানমারের পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এই হামলার জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদী রোহিঙ্গা সংগঠন আরএসও-কে দায়ী করেছেন। এ ঘটনায় বাংলাদেশ সীমান্তে সতর্কতা জারি করেছে বিজিবি। মিয়ানমারের পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আক্রমণ কারীরা ৩ টি ছাউনি থেকে ৫০ টির বেশি বন্দুক ও কয়েক হাজার গুলি লুট করে নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় ৪ জন আহত হয়েছে, ১ জন নিখোঁজ রয়েছে। অতীতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বৌদ্ধ ও মুসলিম রোহিঙ্গাদের মধ্যে সহিংসতায় বহু মানুষ নিহত হয়েছে। বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা।

গত রোববার বিকেল থেকে টেকনাফ সীমান্তে বিজিবি অতিরিক্ত সতর্ক ব্যবস্থা নিয়েছে। বিজিবি থেকে জানানো হয়েছে, সব সীমান্ত বিওপি চৌকিতে বিজিবির সদস্য বাড়ানো হয়েছে। মিয়ানমার পুলিশ ক্যাম্পে হামলাকারীরা যাতে বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে তা বিজিবিকে জানায় সে দেশের পুলিশ প্রশাসন। বিজিবি এক কর্মকর্তা জানান,সীমান্ত দিয়ে কেউ যেন প্রবেশ করতে না পারে,সে ব্যাপারে নজরদারি করা হচ্ছে। মিয়ানমার পুলিশ ছাউনিতে হামলার ঘটনার প্রেক্ষিতে টেকনাফ সদর চৌকির বিওপির আওতায় রোববার মিয়ানমারে ট্রানজিট ঘাট বন্ধ ছিলো। মিয়ানমারে পুলিশ ক্যাম্পে হামলার পর টেকনাফ-মিয়ানমার নৌরুটে কোনো যান চলাচল করেনি বলে জানিয়েছে টেকনাফ স্থলবন্দরের অভিবাসন কেন্দ্র। বলা হয়েছে, টেকনাফ-মিয়ানমার রুট দিয়ে বাংলাদেশি কোনো বোট যায় নি এবং মিয়ানমার থেকেও আসেনি।


বাংলাদেশের এই সতর্কতা অমূলক নয়, বরং অপরিহার্য। রোহিঙ্গারা কত ভয়ঙ্কর তা আমরা জানি। বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশেও দীর্ঘদিন যাবৎ পার্বত্য এলাকায় মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গারা অবস্থান করছে। সভ্যভব্যভাবে নয়, অত্যন্ত উৎকট সমস্যা সৃষ্টি করছে বাংলাদেশে। বছর খানেক আগেও পত্রপত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছিলো রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী কর্মকা- সম্পর্কে। তারা সব সময় টেকনাফ-কক্সবাজারের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। কিন্তু তারা শরণার্থীদের মতো সহজ জীবনযাপন করে না। গোপনে গোপনে মৌলবাদীদের সঙ্গে হাত মেলায়। অবৈধ কর্মকা-ে লিপ্ত হয়। গোপনে ভোটার হয়ে মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক দলকে ভোট দেয়। জঙ্গিদের সঙ্গেও রোহিঙ্গাদের যোগাযোগ আছে। চট্টগ্রামের উখিয়ায় যখন বৌদ্ধপল্লীতে সন্ত্রাসীরা গুপ্ত চালায় ধর্ম অবমাননার অজুহাতে,তখন রোহিঙ্গারাও এতে যোগ দিয়েছিলো। পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছিলো যে, বাংলাদেশের নাগরিক পরিচয় দিয়ে রোহিঙ্গারা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গিয়েছে গলাকাটা পাসপোর্ট ব্যবহার করে। সেখানে তাদের নানান ধরনের অপরাধমূলক কাজের জন্য বাংলাদেশের বদনাম হয়েছে এবং বাংলাদেশের বাজার নষ্ট হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শক্ত হাতে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকিয়ে দিয়েছেন। এতে এদেশের মৌলবাদীরা শেখ হাসিনার ওপর নাখোশ হলেও তিনি তাতে কর্ণপাত করেননি। অনেক দেনদরবার করেও বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয় নি।

রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্নতাবাদীরা মিয়ানমার পুলিশ ছাউনিতে যে হামলা চালিয়েছে,১৪ জন মানুষ নিহত হয়েছে ৯ জন পুলিশ অফিসারসহ, আমরা তার নিন্দা জানাই। অনেক ত্যাগ স্বীকার করে, লড়াই করে গণতন্ত্রের নেত্রী অংসান সূচি ক্ষমতায় এসেছেন। দীর্ঘকাল সামরিক শাসন বহাল থাকার পর তিনি নির্বাচনে জিতে গণতান্ত্রিক শাসন চালু করেছেন। এক সময় তিনি বৌদ্ধ-রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করবেনই। তাই আমরা বিচ্ছিন্নতাবাদ সমর্থন করতে পারি না।