Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪,

১০ টাকা কেজির চাল বিতরণে অনিয়ম তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক

অক্টোবর ১৪, ২০১৬, ০৫:৩১ এএম


১০ টাকা কেজির চাল বিতরণে অনিয়ম তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক

 দৈনিক আমার সংবাদ পর পর দু’দিন ১০ টাকা কেজির চাল বিতরণে অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। গত ১০ অক্টোবরের খবরের শিরোনাম, ‘ভিক্ষুক আবেজান বিবির ভাগ্যে জোটেনি ১০ টাকা কেজির চাল, ‘১১ অক্টোবরের শিরোনাম, ‘জয়পুর হাটের দরিদ্রদের ১০ টাকা কেজির চাল নিয়ে চালবাজি।’ অন্যান্য সহযোগী দৈনিকেও ১০ টাকা কেজি চাল বিতরণে অনিয়ম, অব্যবস্থার সংবাদ পড়েছি। সরকারের জন্য খবরগুলো অস্বস্তিদায়ক। বাজারে হঠাৎ করে চালের দাম বেড়ে গেছে, দুস্থদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এ সময়ে দুস্থরা ১০ টাকা কেজিতে চাল কিনতে পারলে তাদের উপকার হোতো। বাজারে যেমন অসৎ ব্যবসায়ীরা চালের দাম ইচ্ছে মত বাড়াচ্ছে, তেমনি এক শ্রেণির অসৎ লোকেরা দুস্থদের চাল নিয়ে কালোবাজারি করছে। এত সরকারের ক্রেডিবিলিটি নষ্ট হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর মহৎ পরিকল্পনায় আঘাত লাগছে।

প্রধানমন্ত্রী আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ঘোষণা দিয়েছিলেন, দেশে কোনো দুস্থ থাকবে না। তাঁর সদিচ্ছার প্রতিফলন তখনই হবে যখন ব্যবস্থাপনার কাঠামো সুন্দর হবে। শিয়ালের কাছে মুরগি বিতরণের দায়িত্ব পড়লে, বিড়ালের কাছে ভাজা মাছ পাহারার দায়িত্ব বর্তালে তা মাঠে মারা যাবে- এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রথমেই সরকারের সতর্ক হওয়া উচিত ছিলো, বাজারে চালের দাম চড়া, বিতরণকারীদের ভেতর থেকে ১০ টাকা কেজির চাল কালোবাজারে বিক্রি করবে এমন সম্ভাবনা আছে। তাই আগেই বাছাই করা সৎ লোকের ওপর চাল বিতরণের দায়িত্ব দেয়া যেতো। তাহলে এত অনিয়ম হোতো না। দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধুর সরকার প্রচুর রিলিফ দিয়েছিলো, খোলা বাজারে কমদামে প্রচুর চাল, গম, তেল ছেড়েছিলো, বাজার সয়লাব করে ফেলেছিলো। বড়ই দুঃখের বিষয় তা সুষ্ঠুভাবে বিতরণ হয় নি।
যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশের মানুষের মূল্যবোধের বিপর্যয় ঘটেছিলো। তাই আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে একদল কালোবাজারি বঙ্গন্ধুর ভিক্ষে করে আনা গম, চাল, টিন, গুড়াদুধ, কম্বল সুষ্ঠুভাবে গরিবের দরজায় পৌঁছানোর পরিবর্তে নিজেরা আত্মসাৎ করে কালোটাকার মালিক হয়েছিলো।
এদেরই বঙ্গবন্ধু ‘চাটার দল’ বলেছিলেন। বক্তৃতায় তিনি দুঃখ করে বলেছিলেন,‘ আমি বিদেশ থেকে ভিক্ষে করে চাল আনি গরিবের জন্য- আর চাটার দল সব খেয়ে ফেলে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে কতদিকে খেয়াল করবেন? তিনি কি মফস্বলে গিয়ে স্বহস্তে চাল বিতরণ করবেন? তাতো সম্ভব না। প্রধানমন্ত্রীর মহৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে সৎ মানুষ দিয়ে টিম গঠন করতে হবে। টিম ওয়ার্ক করতে হবে। দলের সমন্বয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সৎ লোক দিয়ে টিম গঠন করে যদি ১০ টাকা কেজির চাল বিতরণের ব্যবস্থা হতো তা হলে পত্রিকায় প্রতিদিন চাল বিতরণে অব্যবস্থার খবর আসতো না। যারা চাল দুস্থদের না দিয়ে আত্মসাৎ করে কালোবাজারে বিক্রি করছে, তারা ওই চাটার দল। তারাতো প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছার মূল্য দেবে না।
সরকারের বদনামের কথা ভাববে না। তারা নিজেদের মোনাফার কথাই ভাববে। টিমের লোক সৎ হলে সরকারের ভাবমূর্তির কথাটা ভাববে এবং ১০ টাকা কেজিতে চাল যাদের প্রাপ্য তারাই পাবে। ব্যতিক্রম সব কাজেই থাকে। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, স্থানীয় প্রশাসনে এবং দলে সব লোক সৎ পাওয়া যায় না। এর পরেও সৎ লোকের অভাব নেই, সরকার যত বেশি সৎ লোক কাছে টানবে, তত বেশি লাভবান হবে। জনগণের উপকার করতে হলে সৎ ও ত্যাগী লোকের ওপর বেশি বেশি দায়িত্ব দিতে হবে।
এ ক্ষেত্রেও তাই করা উচিত ছিলো, ১০ টাকা কেজির চাল বিতরণে বেছে বেছে নির্ভরযোগ্য সৎ লোকের ওপর দায়িত্ব দেয়া উচিত ছিলো। চাল বিতরণ এখনো শেষ হয় নি। আমরা আশা করবো, সৎ লোক দিয়ে সুষ্ঠুভাবে দুস্থদের মাঝে ১০ টাকা কেজির চাল বিতরণ করা হবে।