Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক শুরু হোক নতুন মাত্রায়

অক্টোবর ১৫, ২০১৬, ০৫:৫১ এএম


চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক শুরু হোক নতুন মাত্রায়

পঞ্চাশের দশকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চীন সফরে গিয়ে তাঁর সফর সঙ্গী পশ্চিম বঙ্গের ঔপন্যাসিক মনোজ বসুর কাছে বলেছিলেন, ‘পূর্ব বাংলাকে আমি একটি ধর্মনিরপেক্ষ স্বাধীন দেশে রূপদান করবো।’ ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে সর্বপ্রথম সম্পর্ক স্থাপন করেন। তাঁর আমন্ত্রণে চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ-এন লাই পূর্ব পাকিস্তান সফরে এসেছিলেন। তাঁকে যথাযথভাবে সংবর্ধনা দেবার দায়িত্ব নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। চৌ-এন লাই বঙ্গবন্ধুর সাংগঠনিক দক্ষতা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু দু’বার চীন সফর করেছিলেন।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আমরা চীনের আনুকূল্য পাইনি। তারপরও বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিদ্ধস্ত বাংলাদেশের শাসনভার হাতে নেবার পর চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী ছিলেন। তাঁর জীবদ্দশায় তিনি চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের গোড়াপত্তন করে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে চালু করেন রক্ষশীলতামুক্ত, উদার মনের রাজনীতি। সেই বাস্তব দৃষ্টির প্রতিফলন হিসেবে আজ চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত মজবুত। এ বছরের গোড়ার দিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ চীনা ভাষায় অনুদিত হয়েছে। তা চীনের বইয়ের বাজারে বিক্রি হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। এর গুরুত্ব অনেক। সমগ্র এশিয়ায় এখন চীন মহাশক্তিধর রাষ্ট্র। অর্থনীতিতে চীন বর্তমানে মিশ্র প্রক্রিয়া অবলম্বন করে ক্রমাগত উন্নতির শিখরে চলে গেছে; তাদের উন্নতি অব্যাহত আছে।

১৯৮৬ সালে তৎকালীন চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। এর পর এলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। বাংলাদেশের মানুষের মনে এক নবতর প্রত্যাশা জেগেছে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের আগমনে। তিনি ২০১০ সালেও একবার ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতিও ২০১৪ সালে চীন সফর করে এসেছেন। অর্থাৎ চীনের সঙ্গে আমাদের বর্তমান সম্পর্ক গভীরে প্রবেশ করেছে। চীনের প্রযুক্তি বিশ্বের সেরা।

বাংলাদেশ চীনের প্রযুক্তির দ্বারা উপকৃত হতে চায়। চীনের হেকমত, কর্মদক্ষতা, নিষ্ঠা আমাদের দেশে অনুকরণ করার প্রয়োজন আছে। আমাদের পোশাক শিল্পের ব্যাপারেও চীনের গভীর আগ্রহ আছে। চীন আমাদের পোশাক আমদানিকারক একটি বড় দেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত মঙ্গলবার গণভবনে চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা সিনহুয়াকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরে দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কে নতুন যুগের সূচনা হবে। বহু প্রতীক্ষিত এ সফরের মধ্যে দিয়ে আমরা এই সম্পর্ককে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই।

গত ৩০ বছরের মধ্যে চীনের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শুক্রবার সফরে এসেছেন শি জিনপিং। দু’দিনের এ সফরে দু’দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে। চীনের জনসাধারণও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরকে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশে আসছেন এ জন্য আমরা খুবই খুশি ও সম্মানিত বোধ করছি। এ সফরে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে দু’দেশের মধ্যে নিবিড় সহযোগিতার নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের এ সফর দক্ষিণ এশিয়ার জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীন আমাদের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার।

আমরা দেশটিকে আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নেও বিশ্বস্ত হিসেবে বিবেচনা করি। অর্থায়ন, পুঁজি, সরবরাহ ও প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে বাংলাদেশের অনেকগুলো বৃহৎ প্রকল্পের ক্ষেত্রে চীন মূল চালিকা শক্তিও বটে। চীনা প্রেসিডেন্টের এ সফর সব দিক থেকে সুফল বয়ে আনুক, এটা আমাদের প্রত্যাশা।