Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪,

উদ্ভট হালচাল! বদলাতে হবে এ রীতি

অক্টোবর ১৬, ২০১৬, ০৬:৪৩ এএম


উদ্ভট হালচাল! বদলাতে হবে এ রীতি

একটি মেয়ে শারীরিকভাবে ধর্ষিতা হয় একবার। কিন্তু ধর্ষিতা মেয়েটি সেটা প্রকাশ করলে কিংবা বিচার প্রাপ্তির আশায় বিচারালয়ের দ্বারস্থ হলে তাকে ধর্ষিতা হতে হয় অজস্রবার। পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র সবাই একত্রিত হয়ে এবার ধর্ষণ করতে শুরু করে। পরিবার তাকে বাঁকা চোখে দেখে, সমাজ তাকে আর আশ্রয় দিতে চায়না এবং রাষ্ট্র আইনকে এমনভাবে জটিল করে রেখেছে যার কারণে ধর্ষিতাকে সাক্ষ্য উপস্থাপন করে সে যে ধর্ষিতা হয়েছে তা প্রমাণ করতে হয়। বিচারালয়ে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্তদের পক্ষের উকিল এমনভাবে জেরা করে যাতে ধর্ষিতা প্রতিটি বাক্যবানে বারবার ধর্ষিতা হতে থাকে। ‘টু ফিঙ্গারিং’ টেস্টের মত জঘণ্য ব্যাপারের মুখোমুখিও হতে হত ধর্ষিতাকে। একক কিংবা গণধর্ষণের শিকার হয়ে একজন ধর্ষিতা যদি কখনো ভাগ্যগুনে প্রাণে বেঁচে যায় কিন্তু সে মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পায়না কখনো। ধর্ষণের চিত্র বাংলাদেশে বেশ প্রকট অথচ যারা ঘরে-বাইরে ধর্ষিতা হচ্ছে তার নগণ্য শতাংশই প্রকাশ পায়। কেননা দেশের রীতিতে ধর্ষিতা হয়ে সেটা প্রকাশ করলে যে যন্ত্রণা তার চেয়ে চুপ থাকলে যন্ত্রণা কম। আমাদের দেশের রীতিগুলো বেশ উদ্ভট। এখানের মেয়েরা যেমন ধর্ষকদের ভালোবাসে তেমনি বহু মায়েরা ধর্ষক প্রসব করে। বিচিত্র সব কারবার। গর্ব করে বলতে পারি, এশিয়ার সর্ববৃহৎ জেল আমাদের দেশে অবস্থিত ! নেদারল্যান্ডের মত রাষ্ট্রে যখন কয়েদীর অভাবে একের পর এক জেলখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তখন বাংলাদেশের প্রতিটি জেলার জেলখানায় কয়েদীদের উপচে ভরা ভীড়। কলা, কচু আর বেগুন চোরদের দিয়ে একের পর এক জেলখানা ভরে ফেলা হচ্ছে। পাঁচ-দশটা খুনের মামলার আসামী বুক ফুলিয়ে সমাজে নেতৃত্ব দিচ্ছে, হাজার কোটি টাকার ঋণখেলাপিরা আবার কারো কারো অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা ! বড় বড় অপরাধের সাথে যুক্তদের ব্যানার-ফেস্টুনে রাস্তার পাশে ইঞ্চি পরিমান খালি জায়গা চোখে পড়ে না। রাঘব-বোয়াল টাইপের যে সকল অপরাধীরা রাজনৈতিক দ্বিমতে জেলে আছে-যাচ্ছে তারা আবার ভিআপির মর্যাদা পাচ্ছে ! কি আজব রীতি ! অপরাধীদের আবার স্ট্যাটাস। এটা বোধহয় শুধু বাংলাদেশেই সম্ভব। সবার চেয়ে একটু আলাদা না থাকলে আমরা কিসের বাংলাদেশি! এটা সেই দেশ যেখানে বিবাহ করার জন্য আপনাকে চাকরি পেতেই হবে। তাতে আপনার বয়স তিরিশ-চল্লিশ যাই হোক ! ভাবী জীবনের দুই-তৃতীয়াংশ পার হওয়ার পর ঘরের খিল আটকানোর জন্যই বোধহয় বিবাহের কাজ সম্পন্ন করতে হয়। রাষ্ট্র সেশনজট দিয়ে বছরের পর বছর নষ্ট করবে আবার ঘুষ ছাড়া চাকরি তো এখানে কল্পনাবিলাস। এসব কথা বলতে গেলে আপনি ভালো মানুষ নন ! অন্যায়-অবিচার যত চাপিয়ে রাখবেন আপনি তত সাধু পুরুষ ! এখানে ধর্ষণ কিংবা পরকীয়া বৃদ্ধির সুযোগ দেয়া হবে তবু বিবাহের সুযোগ দেয়া হবে না। বিবাহ করার পর বোধহয় আর লেখাপড়া হয়না, কেউ আর কোমড় সোজা করে দাঁড়াতে পারে না। সব আজগুবি কাজ-কারবার। সমাজকে যদি কিছুটা বদলানো যেতো তবে সামাজিক স্থিতিশীলতা ও শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হতো। পরিকল্পনা তো বেশ ভালো, চিন্তাও উর্বর কিন্তু বেড়ালের গলায় ঘন্টি বাঁধার কাজে কে এগিয়ে আসবে ? এখানে সর্বদা সরকারি দলের লোক বেশি। দেশের সাধারণ মানুষের চেয়ে নেতা বেশি। আবার নেতার চেয়ে হাঁক-হুমকি বেশি। সেই উপুড় করে দে মা লুটে পুটে খাওয়ার অবস্থাতেই সবাই বিরাজমান। এখানে যে যতবেশি নীতিকথা বলে তার চুরির ফিরিস্তটা ততবেশি লম্বা। আদালত অপরাধী স্বীকৃতি দেয়ার পরেও এখানে সরকারের অংশ থাকা যায়। রিলিফের চাল চুরি করে বিক্রি করা যায়, আবার পাঁচ টাকার সরঞ্জাম আমদানি করে ৫ লাখ টাকার বাউচার করা যায়। একজন ব্যাগের ভেতরের জিনিস খেতো আরেকজন ব্যাগসহ গিলে খায়-পার্থক্য তো শুধু এটুকুই !