Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

জঙ্গিবাদের নতুন চ্যালেঞ্জ প্রতিরোধে চাই বজ্রশপথ

ডিসেম্বর ১০, ২০১৬, ০৫:৩৯ এএম


জঙ্গিবাদের নতুন চ্যালেঞ্জ প্রতিরোধে চাই বজ্রশপথ

পুলিশের আইজিপি একেএম শহীদুল হক বলেছেন, জঙ্গিবাদ বাংলাদেশের নতুন চ্যালেঞ্জ। আইজিপির অভিমত উপেক্ষা করার মতো নয়; বরং ভেবে দেখার মতো। রামায়ণের কাহিনীতে রাবনের দশ মাথা। তাকে বলা হয় দশানন। সে অশুভ শক্তির প্রতীক। তার এক মাথা কাটলে সঙ্গে সঙ্গে দশ মাথা খাড়া হয়ে যায়। মহাকবি বাল্মীকি বুঝাতে চেয়েছেন যে, অশুভ শক্তিকে সহজে নির্মূল করা যায় না। বাংলাদেশের সমাজ কাঠামো থেকে জঙ্গিবাদকেও সহজে নির্মূল করা যাবে না। দীর্ঘ সময় লাগবে। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের সঙ্গে ধর্মীয় কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িক চেতনা ও রাজনৈতিক প্রভাবও মিলেমিশে আছে। জঙ্গিদের প্রশ্রয় দানের রাজনীতি এদেশে আছে ভেতরে ভেতরে। হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফার মধ্যে জঙ্গিদর্শন আছে। জামায়াতে ইসলাম বর্তমানে আন্ডারগ্রাউন্ডে অপরাজনীতির চর্চা করছে। তাদের সঙ্গে জঙ্গিদের গোপন আঁতাত থাকাটা স্বাভাবিক। কেননা যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর করার পর তাদের মধ্যে প্রতিশোধ স্পৃহা কাজ করছে। তারাই হেফাজতসহ সমগ্র জঙ্গি সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে। সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে জঙ্গিদের গলা কাটা, রগকাটা, গুলি করে, চাপাতি-কিরিচ দিয়ে কুপিয়ে মানুষ হত্যা আপাতত স্তিমিত হলেও তা থেমে যায় নি। সরকারের এই তাৎক্ষণিক সাফল্যের কারণে জঙ্গিদের মানুষ হত্যার আকণ্ঠ পিপাসা নিবৃত হয় নি। ধর্মের নামে মানুষ হত্যাও এক ধরনের নেশা, তা আঁফিমের চেয়েও মারাত্মক। 

এই নেশার শেকড় উৎপাটন করা খুব কঠিন। সরকারকে এ ব্যাপারে আত্মতৃপ্তির বদলে অধিকতর সজাগ থাকতে হবে। পত্রিকার খবরে এসেছে, গত ১ ডিসেম্বর রাজধানীর একটি এলাকা থেকে ৬ জন যুবক নিখোঁজ হয়েছে। এখনো তাদের খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি। ব্যাপারটি দুশ্চিন্তার বৈ-কি। এ সব নিখোঁজ যুবকরাই জঙ্গি আস্তানায় ভর্তি হয়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকে।
দেখা গেছে গুলশানের হলি আর্টিজান হামলায় যারা অংশ নিয়েছিলো, তারা কেউ কেউ পরিবার থেকে দীর্ঘদিন নিখোঁজ ছিলো। আরো একটি বিষয় লক্ষণীয় যে বেসরকারি বিশ্¦বিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্য থেকে তরুণ জঙ্গির জন্ম হচ্ছে। গত ১ ডিসেম্বর বনানী থেকে যে ৬ যুবক নিখোঁজ হয়েছে, তার ২ জন নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। হলি আর্টিজান হামলাকারীদের মধ্যেও নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলো। বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে সকলকে। শুধু অস্ত্রের জোর আর প্রশাসনের জোর সবটুকু কাজে আসবে না।
জঙ্গিবিরোধী মতামত গঠন করতে হবে। ধর্মের সঙ্গে অস্ত্রবাজির সম্পর্ক নেই তা বুঝাতে হবে জনগণকে। জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। জনগণকে বঙ্গবন্ধু যেমন পাকিস্তানি দুঃশাসন বিরোধী করেছিলেন, তেমনি বাংলাদেশের জনগণকেও জঙ্গিবিরোধী করে তুলতে হবে। পুলিশের আইজিপি বলেছেন, জঙ্গিদের শক্তি আমরা ভেঙে দিয়েছি। কথাটার মধ্যে সত্যতা থাকলেও নিশ্চিন্ত হওয়ার উপায় নেই জঙ্গিদের ব্যাপারে। জঙ্গিরা বসে থাকে না, তারা জঙ্গিবাদের চর্চা অব্যাহত রাখে। এর প্রমাণ পত্রিকার পাতায় আছে। সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে র‌্যাব ৫ জঙ্গিকে আটক করেছে। এরা প্রত্যেকে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জেহাদের সদস্য। এদের কাছে ছিলো বোমা তৈরির সরঞ্জাম। এতে প্রমাণিত হয় জঙ্গিরা তাদের মিশনের চর্চা অব্যাহত রেখেছে। এটাও জনগণকে বুঝানো দরকার, জঙ্গি নির্মূলের দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়; সমগ্র সমাজের।
একটি সুখী সংসার থেকে যখন একটি মেধাবী তরুণকে বেহেস্তের লোভ দেখিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, বিভ্রান্ত করা হয়, মগজ ধোলাই করা হয়, হাতে অস্ত্র তুলে দেয়া হয়, অস্বাভাবিক পথে টেনে আনা হয়, তখন পুরো সংসারটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জঙ্গিরা কিন্তু সমাজের মেধাবী তরুণদের ধ্বংস করছে। এতে দেশের মেরুদ- ভেঙে যাচ্ছে। পাকিস্তানিরা চেয়েছিলো বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করতে। জঙ্গিরা সেই কাজটি করছে। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে জনগণকে সঠিকভাবে জাগিয়ে তোলা দরকার। ধর্মনিরপেক্ষ-অসাম্প্রদায়িক চেতনারও চর্চা হওয়ার দরকার।