Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

চীনা নাগরিক খুন বিদেশি হত্যা প্রতিরোধ জরুরি

ডিসেম্বর ১৮, ২০১৬, ০৬:২০ এএম


চীনা নাগরিক খুন বিদেশি হত্যা প্রতিরোধ জরুরি

বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য ব্যাপারটি খুবই উদ্বেগজনক যে, আবারো একজন বন্ধুরাষ্ট্রের নাগরিককে হত্যা করলো দুর্বৃত্তরা। পত্রিকা সূত্রে এ খবর জেনে আমরা উদ্বিগ্ন হয়েছি, যশোর জেলা সদরের উপশহর এলাকায় পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে গত বুধবার ১৪ ডিসেম্বর এক চীনা নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ গত বৃহস্পতিবার সকালে নিহতের লাশ উদ্ধার করে। নিহত চীনা নাগরিকের নাম চেং হি সং। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো মাত্র ৪৫ বছর। সংশ্লিষ্ট এলাকায় ওই চীনা নাগরিক চীন থেকে ইজিবাইকের যন্ত্রাংশ আমদানি করে তা গুদামে রেখে ব্যবসা করতেন। সকালে যশোর উপশহরের মহিলা কলেজের পাশে ২নং সেক্টরের ৩৪ নং বাড়ির নিচ তলায় আমদানি করা যন্ত্রাংশের গুদাম থেকেই তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। এই অপ্রত্যাশিত ঘটনায় চীনা নাগরিকের ব্যবসার কেয়ারটেকারসহ ২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে আটক ২ জন বলেছে, ব্যবসার টাকা-পয়সা লুট করার জন্য গত বুধবার বেলা ১১ টার দিকে তারা এ ঘটনা ঘটায়। ৭ মাস আগে ব্যবসা করার জন্য এই বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিলেন চেং হি সং। তাঁর ঢাকায় বাসা থাকলেও ব্যবসার জন্য প্রায়ই তাঁকে যশোর থাকতে হতো। যশোরে তিনি থাকতেন শহরের জেলরোড এলাকায়। হত্যাকারীরা চেং হি সংকে হত্যা করার সময় তাঁর মোবাইল বন্ধ করে রেখেছিলো। তাঁর স্ত্রী ঢাকায় থাকেন। তিনি কয়েক দফা ফোন করে তাঁর স্বামীকে না পেয়ে কেয়ারটেকার নাজমুল হাসান পারভেজকে ফোন করেন। উত্তরে নাজমুল জানায়, স্যারকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তারপর চেং হি সংয়ের স্ত্রী ঘটনাটি থানায় জানান। নাজমুলকেই খুনি সন্দেহ করে তাকে পুলিশ আটক করে। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পুলিশ মুক্তাদির নামের আরেকজনকে আটক করে। পুলিশ জানিয়েছে, তাদের কাছে আটক এই ২ জন হত্যার দায় স্বীকার করেছে। একটি বিমানে করে চেং এর স্ত্রী যশোর চলে আসেন। স্বামীর মৃত্যুতে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। পত্রিকায় তাঁর ক্রন্দনরত ছবি ছাপা হয়েছে, মনে হয়েছে যেন এক বাঙালি নারীই কাঁদছে তাঁর স্বামীশোকে। নাজমুল ও মুক্তাদিরকে তাঁর সামনে আনা হলে উত্তেজিত হয়ে তিনি ওদের কিলঘুষি মারতে থাকেন। চীনা ভাষায় তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বিলাপ করতে থাকেন। পুলিশের অনুমান মিথ্যে নয় যে, টাকা আত্মসাৎ করার কু-মতলবে নাজমুল ও তার বেড়াতে আসা ভাতিজা মুক্তাদির একজন দক্ষ ব্যবসায়ী চেং হি সংকে প্রথমে পিটিয়ে তারপর শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয়েছে, চেংকে লোহার রড দিয়ে পিটানো হয়েছিলো। সূত্রে জানা গেছে যে, বুধবার রাতে ব্যবসায়িক হিসেব নিয়ে চেং এর দোভাষী ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা নাজমুল হাসান পারভেজের সঙ্গে তাঁর গোলযোগ হয়। এ সময় নাজমুল ও মুক্তাদির চেংকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে পরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এই অমানবিক ঘটনার প্রতিক্রিয়া ছোট পরিসরে হবার নয়। এর ক্ষতি চীনের ততটা নয় যতটা বাংলাদেশের। বর্তমানে চীনের সঙ্গে আমাদের গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চলছে। বন্ধুপ্রতীম ও দাতা রাষ্ট্রের একজন নাগরিক এ ভাবে খুন হওয়ার খবর তাঁরা পেয়েছে এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের বিরূপ ধারণা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। চেং ব্যবসা করতেন ও সপরিবারে থাকতেন বাংলাদেশে। তাঁর ব্যবসায়িক লেনদেন দ্বারা বাংলাদেশ উপকৃত হতো। চীনারা ব্যবসাসহ যে কোনো কাজে সৎ, নিষ্ঠাবান ও দক্ষ। চীনের নাগরিকরাই সততা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়ে চীনকে উন্নতির চরমপর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। এমন দক্ষ চীনা নাগরিক-যাঁরা বাংলাদেশে নানা পেশায় নিয়োজিত আছেন, তাঁদের দ্বারা বাংলাদেশও উপকৃত। চেং ব্যবসা করতেন এ দেশের নাগরিকদের সঙ্গে, সহযোগী রাখতেন এদেশের লোক। এতেওতো আমাদের নাগরিকরা উপকৃত হতো। তাহলে কোন্ কারণে এমন নিষ্ঠুরভাবে একজন উপকারী অতিথি নাগরিককে হত্যা করা হলো? এই ঘোর কৃতঘœতার জবাব কী? বহুদিন ধরে প্রবাদ প্রচলিত আছে যে, ‘লোভে পাপ পাপে মৃত্যু।’ চেং এর যে দোভাষী লোভের কালহাত দিয়ে তাঁকে হত্যা করেছে, তাঁর স্ত্রীকে অকালে বিধবা করেছে, তার পরিণতিও মৃত্যুর দিকে গড়াবে। আমরা এই পাশবিকতার তীব্র নিন্দা জানাই। এর আগেও বিদেশি নাগরিকদের হত্যা করা হয়েছে। সরকারকে এ ব্যাপারে কঠোর সতর্ক হওয়ার এবং চেং হি সং এর খুনীদের উপযুক্ত বিচার করার দাবি জানাচ্ছি।