Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

কলেজছাত্রের লাশ পুকুরে আইনের প্রয়োগ কাম্য

ডিসেম্বর ১৯, ২০১৬, ০৭:১১ এএম


কলেজছাত্রের লাশ পুকুরে আইনের প্রয়োগ কাম্য

সাতক্ষীরায় অপহরণের ৫ দিন পর ১৯ বছরের কলেজছাত্র গৌতমের লাশ পাওয়া গেলো এক পুকুরে। গত শনিবার সকালে পুলিশ মহাদেব নগর নামক গ্রামের একটি পুকুর থেকে হতভাগা ছাত্র গৌতমের লাশ উদ্ধার করেছে। তাঁর হাত-পা বাঁধা ছিলো, মুখে লাগানো ছিলো স্কচটেপ। অপহরণকারীরা গৌতমের বাবার কাছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছিলো। তা পরিবার দিতে সক্ষম হয়নি বলে এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটালো দুর্বৃত্তরা। গৌতমের বাবা একজন ইউপি সদস্য। সীমান্ত আদর্শ ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলো গৌতম। গৌতমকে অপহরণ করে একই গ্রামের প্রতিবেশি-লোকজন। লাশ উদ্ধারের পর বিক্ষোভে ফেটে পড়ে গ্রামবাসী, তা পড়ারই কথা। সবাইতো আর মানুষ নামধারী জন্তু-জানোয়ার নয়। সব মানুষ এখনো মানবতা বিক্রি করে দেয়নি। ভুলে যায় নি, ‘মানুষ মানুষের জন্য।’ তাই উত্তেজিত জনতা মিছিল করে দুই অপহরণকারীর বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। গৌতম অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় পুলিশ ৫ দুর্বৃত্তকে আটক করেছে। এটা একটা সাফল্য। গত ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় গৌতমকে মোবাইল ফোনে স্থানীয় বাজার থেকে ডেকে নিয়ে যায়। তারপর তাঁর বাবার মোবাইল ফোনে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পত্রিকাসূত্রে জানা গেছে, শুধু মুক্তিপণ নয়, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ব্যক্তিগত ক্রোধ। কয়েকদিন আগে ওই এলাকার জামসেদ নামের এক ঘরজামাইকে পুলিশ আটক করে। তাকে ছাড়ানোর জন্য ওই পরিবারের পক্ষ থেকে গৌতমের বাবা, মেম্বার গনেশ সরকারের ওপর চাপ আসে। গনেশ তাতে সাড়া দিতে পারেন নি। জামসেদ থানা থেকে ছাড়া পেয়ে প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে গৌতমকে অপহরণ করায় এবং হত্যা করায়। জামসেদ থানা থেকে ছাড়া পেলো কী ভাবে? সে প্রশ্নটি মাথা তুলে দাঁড়ায়। যারা গৌতমকে অপহরণ করে হত্যা করেছে, তাদের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় পত্রিকায় আসেনি। পুলিশের উচিত তাদের খোঁজ-খবর নেয়া যে, তারা পেশাদার ও ভাড়াটিয়া খুনি কিনা। তারা আরো অমানবিক ঘটনার সঙ্গে জড়িত কিনা, তাদের দলে আরো দুর্বৃত্ত আছে কি না। মুক্তিপণের দাবিতে এর আগে আরো হত্যার ঘটনা ঘটেছে এবং এ সব মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেই চলেছে। এটা একটা সামাজিক ব্যাধি। এর প্রতিকার হওয়া দরকার। সমাজে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা দুর্বৃত্তরা ক্রমাগত অমানবিক ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে। সমাজে প্রতিদিন অসংখ্য পরিবারের বুকচাপড়ানো আর্তনাদ পত্রিকায় ছাপা হচ্ছে। মাত্র ১ দিনের একটি পত্রিকায় এসেছে, রাজধানীর মালিবাগ চৌধুরী পাড়ায় ২৪ বছরের গৃহবধূ সাদিয়া ইসলাম মনিকে হত্যার অভিযোগে তার স্বামী ও দেবরকে গত শনিবার দুপুরে পুলিশ আটক করেছে। রাজশাহী গোদাগাড়ী উপজেলায় ধর্ষণের শিকার হয়ে এক স্কুলছাত্রী বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। ৭ম শ্রেণিতে পড়–য়া মাত্র ১৪ বছরের কিশোরী খালেদা খাতুন গত শুক্রবার গভীর রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। গত ৩ নভেম্বর রাতে খালেদাকে বাসায় একা পেয়ে তার স্কুল-লাইব্রেরিয়ান ধর্ষণ করে। এমন পাশবিক ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় খালেদা গত ১১ ডিসেম্বর বিষপান করেছিলো। বগুড়ার শেরপুর হাসপাতাল থেকে এক প্রসূতিকে তাড়িয়ে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। খোলা আকাশের নিচে ওই প্রসূতি এক কন্যা শিশু জন্ম দিয়েছিলেন। চিকিৎসা ও পরিচর্যার অভাবে কন্যা শিশুটি মারা যায়। জানা গেছে, গত ২৯ নভেম্বর রাত ১১ টার দিকে চাতাল শ্রমিক ইলিয়াছ উদ্দিনের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মাজেদা বিবি প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নারী ওয়ার্ডে ভর্তি হতে যান। ওয়ার্ডের নার্স পাশের একটি ক্লিনিকে ভর্তি হতে বলেন মাজেদাকে। এক পর্যায়ে রাত ১ টার দিকে অন্তঃসত্ত্বা ও প্রসব যন্ত্রণায় কাতর মাজেদাকে বের করে দেয়া হয়। তখন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের সামনে খোলা আকাশের নিচে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন মাজেদা। কিন্তু কন্যা শিশুটিকে বাঁচানো সম্ভব হয় নি। এই মানবতা লংঘনের ঘটনায় মহামান্য আদালত হস্তক্ষেপ করেছে জেনে আমরা আনন্দিত। এমন হরহামেশা অমানবিক ঘটনার সব খবরই কি পত্রিকায় বা গণমাধ্যমে আসে? প্রতিদিন যা পাচ্ছি তাতেই দম বন্ধ হবার উপক্রম। গৌতম হত্যা, খালেদার আত্মহত্যা, মালিবাগের গৃহবধূ হত্যা, মাজেদার নবজাতকের মৃত্যুকে সামনে রেখে বিবেকের মধ্যে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক যে, দেশে দুর্বৃত্তের সংখ্যা কমছে না বাড়ছে? দুর্বৃত্তের দাপট কমছে না কেন? দেশের আইনের শাসনের সুপ্রয়োগ চাই আমরা। দুর্বৃত্তরা ধর্মের কথা শুনবে না, চাই প্রতিকার।