Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪,

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন পরিচ্ছন্ন ও সুষ্ঠু কাম্য

ডিসেম্বর ২১, ২০১৬, ০৬:৩০ এএম


নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন পরিচ্ছন্ন ও সুষ্ঠু কাম্য

 মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকেই নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের সকল প্রচারণা বন্ধ। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল ২২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার। ২০১৬ সালের শেষ এবং ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে এই গুরুত্বপূর্ণ সিটি নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনের ফলাফল হবে ২০১৬ সালের সর্বশেষ আলোড়িত ঘটনা। এই নির্বাচন নিয়ে তিনটি পক্ষ টেনশনে আছে, সরকারি দল, বিএনপি ও নির্বাচন কমিশন। এটা মিডিয়ার যুগ। ইচ্ছে করলেই কোনো পক্ষ দিনকে রাত আর রাতকে দিন করতে পারবে না। রাজনীতিতে জনগণের সমর্থনের বিকল্প নেই। এই নির্বাচনে দু’টি বড় দল, দু’জন যোগ্য প্রার্থী প্রতিদ¦ন্দ্বিতা করছে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে আমরা আভাস পাচ্ছি। গত নির্বাচনে বিএনপি আইভীকে সমর্থন দিয়েছিলো শামীম ওসমানকে পরাজিত করার জন্য। সেই শামীম ওসমান এমপি এখন, সমর্থন দিয়েছেন আইভীকে। বিএনপি লড়াই করছে আইভীর বিরুদ্ধে। এমনই হয় রাজনীতির পাশাখেলা। নারায়ণগঞ্জ রাজধানী ঢাকা সংলগ্ন একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। এখানকার রাজনীতি বাংলাদেশের রাজনীতির ওপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে। এই নির্বাচনের ফলাফলও জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনই সামনের জাতীয় নির্বাচনের সব ফলাফল জানিয়ে দেবে। বাংলাদেশের কোনো কোনো পক্ষের এমন প্রচারণা ঠিক নয়। মাত্র ১টি সিটি নির্বাচন সামনের জাতীয় নির্বাচনের ৩০০ আসনের ফলাফলের আভাস দেবে, এটা বিশ্বাসযোগ্য কথা নয়। আমাদের পক্ষ থেকে লেশমাত্র উস্কানিমূলক বিশ্লেষণ দিতে চাই না। কেউ কখনো কল্পনা করেনি মার্কিন নির্বাচনে সুপার স্টার হিলারি ক্লিনটন হেরে যাবেন। কিন্তু ঘটনা তাই ঘটলো। ভোট প্রদান জনগণের সম্পূর্ণ মনের ব্যাপার। আমরা বরং জোর দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করবো-হারজিৎ সহজ ভাবে সকল পক্ষকে মেনে নেবার। আর এই নির্বাচনেই চূড়ান্ত হারজিৎ হবে না, সামনে আরো লড়াই আছে সকল পক্ষের। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো যেদিন থেকে নির্বাচনকে সহজভাবে গ্রহণ করবে, হারজিৎকে সহজ ভাবে মেনে নেবে, পরিচ্ছন্ন প্রতিযোগিতাকে বড় করে দেখবে, সেদিন বাংলাদেশে পূর্ণগণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে এগিয়ে যাবে। সরকার বোধ করি স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে ভালোই করেছে, এই সুবিধা বিএনপিও ভোগ করছে। লড়াইটা হচ্ছে এখন ধানের শীষ আর নৌকার মধ্যে। দু’টো প্রতীকই বাঙালির জাতীয় ঐতিহ্যের ধারক। বাংলার সাধারণ মানুষ ও কৃষকের সঙ্গে নৌকা ও ধানের শীষের সম্পর্ক ওৎপ্রোত। এই নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের একটা অগ্নিপরীক্ষা হবে। গত ইউপি নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের অনেক বদনাম হয়েছে। তারা যথার্থ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। এই নির্বাচনে তেমন কিছু না হোক, সেটা আমাদের প্রত্যাশা। আর এটাও খুশির খবর যে নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনী প্রচারণার সময় পরস্পর কাদা ছোড়াছুড়ি হচ্ছে খুব কম। এ পর্যন্ত কোনো হানাহানির খবর পাওয়া যায় নি। যে কোনো নির্বাচনে পরিচ্ছন্ন প্রতিযোগিতা জনগণের কাম্য। মায়ের কোল খালি হওয়া নির্বাচন আমরা চাইতে পারি না, যা ইউপি নির্বাচনে হয়েছে। দুই প্রার্থীর লোকজন মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছে ভোট চাইতে কিন্তু কোনো পক্ষই কদর্য ভাষায় কারো নিন্দা চর্চা করছে না, উস্কানিমূলক ভাষা ব্যবহার করছে না, এটা খুবই আনন্দের ব্যাপার। এমন কি ওসমান পরিবারও ভারসাম্যমূলক আচরণ করছে। বিএনপির একটি চিরাচরিত অভ্যেস হলো, যে কোনো নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি করা। এই নির্বাচনেও দাবি করেছিলো, তবে তেমন জোর দাবি জানায়নি। নির্বাচনে বিজিবি দায়িত্ব পালন করবে। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে, পুলিশ প্রশাসনের কাছে এবং বিজিবির কাছে দল নিরপেক্ষ কঠোর কর্তব্য পরায়ন ভূমিকা আশা করছি। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় প্রজাতন্ত্রের প্রশাসনের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। ডিসেম্বরের শীতের আমেজের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু, পরিশীলিত ও নির্ঝঞ্ঝাট হোক তা আমাদের একান্ত প্রত্যাশা। গণতন্ত্রের জয় হোক।