Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

সিটি নির্বাচন নিয়ে জনভাবনা ও সেনাবাহিনীর নিরবতার প্রশংসা

মে ৩, ২০১৫, ১১:২৪ এএম


সিটি নির্বাচন নিয়ে জনভাবনা ও সেনাবাহিনীর নিরবতার প্রশংসা

 সেনাবাহিনী রাষ্ট্রের স্বাধীন ও সাংবিধানিক অর্গান। স্বাধীনতার যুদ্ধ এবং স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত দেশের অনাকাংখিত দুর্যোগ, উন্নয়ন, শান্তি, জনকল্যাণ ও বিদেশে জাতিসংঘের নিয়োজিত শান্তি মিশনে এদেশের দেশপ্রেমিক গর্বিত সেনাবাহিনী সবিশেষ ভূমিকা রেখে চলছে। যার প্রশংসা করেছে জাতিসংঘের মহাসচিবসহ অনেকেই। ১৯৭৪ সালে জরুরী আইনে কম্বাইন্ড অপারেশন, ২০০২ সালের অপারেশন ক্লিনহার্ট ও ২০০৭ সালের ওয়ান ইলেভেন এবং দেশের বিভিন্ন নির্বাচনে জননিরাপত্তা ও শান্তি শৃংখলা বিধানে সেনাবাহিনী যথেষ্ট গুরুত্ব, শ্রম, মেধা ও স্বচ্ছতার নিরিখে অর্পিত দায়িত্ব পালন করে। সেহেতু গর্বিত সেনাবাহিনীর প্রতি দেশের জনগণের আস্থা, বিশ্বাস ও প্রত্যাশা অনেকাংশেই বেশী। যে কারণে দেশে অনাকাংখিত কোন ঘটনার উদ্ভব হলে এবং জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে ইউপি, পৌরসভা, উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন, শূন্য আসনে জাতীয় সংসদসহ অন্যান্য নির্বাচনে তফসিল ঘোষনা মাত্রই ভোটার, জনগণ, প্রার্থী, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও দেশের সকল স্তরের মানুষ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের প্রত্যাশা করে থাকে। ইসি ২৮/৪/১৫ ইং ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রামের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দিন তারিখ ঘোষনার পর থেকে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচন প্রার্থী অধিকাংশ মেয়র, কমিশনার, সুশীল সমাজ, ভোটার ও জনগণ ইসি ও সিইসির নিকট সেনা মোতায়েন প্রত্যাশা করে। এমনিভাবে ভোটার প্রার্থী, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক দল ও জনদাবীর প্রেক্ষীতে ২০১১ সালে নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আগের দিন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার সেনা মোতায়েনের কথা বললেও, সব কিছুকে চমক লাগিয়ে নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা হয়নি।

তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে সিইসি কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ বার বার বলেন, ১৯/৪/১৫ ইং নির্বাচনে আইন শৃংখলার ব্যাপারে যৌথ সভা হবে এবং সমন্বিতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হবে। এরই মধ্যে সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঢাকা চট্টগ্রামে বেশ কয়েকটি অনভিপ্রেত ও অসহনশীল ঘটনা ঘটে যায়। যা প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে সচিত্র প্রতিবেদন আকারে প্রকাশিত হয়। ফলে সিটি নির্বাচনগুলোতে সেনা মোতায়েনের জনদাবী ও প্রত্যাশা আরো বেড়ে যায়। ফলশ্র“তিতে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে ২১/৪/১৫ ইং সশস্ত্র বাহিনীকে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তাতে উল্লেখ করা হয়, ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটিতে মোট তিন ব্যাটালিয়ন সৈন্য মোতায়েন করা হবে।

২৬ থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত ৪ দিন মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী। সূত্র ও তথ্যে আরো জানা যায়, ২১/৪/১৫ ইং মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারকে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠান নির্বাচন পরিচালনা- ২ শাখার উপসচিব মোঃ শামসুল আলম। বলা হয়, ১৯ এপ্রিল ইসির অনুষ্ঠিত আইন শৃংখলার বৈঠকে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার এ চিঠি দেয়া হয়।

সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ মঙ্গলবার ২১/৪/১৫ ইং সাংবাদিকদের বলেন, এখনও পর্যন্ত আইন পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকার পরও ভোটারদের মনে স্বস্থি আনতে নির্বাচনে ২৬ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এবং শান্তি শৃংখলা রক্ষার্থে সেনাবাহিনী চারদিন মাঠে থাকবে। সিইসি আরো বলেন, আমাদের কাছে অনেক অভিযোগ আসছে। একই অভিযোগ রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছেও যাচ্ছে। সব অভিযোগ খতিয়ে দেখে রিটার্নিং অফিসার ব্যবস্থা নেবেন। নির্বাচন কমিশন সব কিছু মনিটরিং করছে। তিনি আরো বলেন, আমাদের সেনাবিহনী গর্বের সংস্থা এবং সুনামের সঙ্গে জাতিসংঘের মিশনসহ বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলায় দায়িত্ব পালন করছে। আশা করি সিটি নির্বাচনেও তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। আরো জানা যায়, সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ভোটাররা যাতে নিরাপদে ও নির্বিঘেœ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সেজন্য প্রতিটি সিটি নির্বাচন এলাকায় ১ ব্যাটলিয়ন সেনাবিহনীর সদস্য ২৬ থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এ সংখ্যা দেড় হাজারের মতো হতে পারে বলে ইসি সূত্র নিশ্চিত করে। ফৌজদারী কার্যবিধির ৯ম ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত ইনস্ট্রাকশন রিগার্ডিং এইড টু সিভিল পাওয়ারের ৭ম ও ৯ম ক্ষমতার নিয়মানুযাযী সেনাবাহিনী পরিচালিত হবে। নির্বাচনে কে জয় লাভ করবে, কে পরাজিত হবে এসব কিছু না ভেবে নির্বাচনে সেনা মোতায়েন জনগণ, ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে এ ঘোষনায় প্রাণের সঞ্চার হয়। সেনা মোতায়েনে নির্বাচনে স্বচ্ছতা, ভোটারদের নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হবে বলে ভোটার ও জনমনে আশা ও ভাবনার সৃষ্টি হয়।

ভোটার, জনগণ, প্রার্থী, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও জনগণের মধ্যে সেনা মোতায়েনে প্রত্যাশিত আনন্দের বার্তা বইলেও, তথ্য, সূত্র, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে জানা যায়, একদিনের ব্যবধানে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগকে সেনাবাহিনী চেয়ে দেয়া ইসির চিঠি সংশোধন করে পুনরায় ২২/৪/১৫ ইং চিঠি পাঠানো হয়। ২২/৪/১৫ ইং বুধবার দ্বিতীয় দফায় পাঠানো ইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, প্রতি সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এক ব্যাটালিয়ন করে সেনাবাহিনীর সদস্য ২৬ থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। তবে তারা মূলতঃ সেনানিবাসের অভ্যন্তরেই রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে অবস্থান করবেন এবং রিটার্নিং অফিসারের অনুরোধে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করবেন। অথচ একদিন আগে পাঠানো চিঠিতে ওই অংশে বলা হয়েছিল সেনাবাহিনী সার্বক্ষণিক স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। এখানে রিটার্নিং অফিসারের অনুরোধ সম্বলিত কোন শব্দ ছিল না। সিইসি ২৩/৪/১৫ ইং বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনকালীন সেনাবাহিনীর জন্য বেস্ট পজিশন ক্যান্টনমেন্ট। সেনা মোতায়েনে প্রথম চিঠিতে ভুলত্র“টি হয়ে থাকতে পারে উল্লেখ করে, পরে আগের চিঠিটি সংশোধিত আকারে প্রতি স্থাপিতের কথাও বলা হয়। আর নির্বাচন কমিশনার শাহ নেওয়াজ জানান, ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী চিঠি দেয়া হয়েছে। সেনাবাহিনী কোথায় থাকবে, মঙ্গলবারের ওই চিঠিতে উল্লেখ ছিল না। নির্বাচনে সেনাবাহিনী টহল দিবেন না বলেও জানান তিনি। সিইসি এবং ইসির বক্তব্যে যথেষ্ট অমিল পরিলক্ষিত হলে এ নিয়ে জনগণ, ভোটার, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক মহল, দেশবাসী ও প্রার্থীদের মধ্যে যথেষ্ট প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। তদোপরি একরাতের ব্যবধানে নির্বাচনে সেনা মোতায়েন নিয়ে ইসি ও সিইসির এমন সিদ্ধান্তে সুশীল সমাজ ও বিশিষ্টজনরা নির্বাচনে নিরাপত্তা ও শান্তি শৃংখলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। যা ২৪/৪/১৫ ইং বিভিন্ন গণমাধ্যম ও মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়।

এ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার রফিকুল হক বলেন, রিজার্ভ নয়, ষ্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনীকে মাঠে নামাতে হবে। তিনি আরো বলেন, সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দিয়ে মাঠে নামানো সন্ত্রাসী ও গডফাদাররা যে দলেরই হোক, ভয়ে কাপড় খুলে পালাবে। ভয়ে এলাকা ছেড়ে দিবে, বুড়ীগঙ্গাঁয় ডুবে মরবে। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে মন্তব্য করে তিনি বলেন, শুধু পুলিশ আর র‌্যাব দিয়ে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ করা সম্ভব নয়। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে চাইলে, সেনাবাহিনীকে ক্যান্টনমেন্টে বসিয়ে না রেখে মাঠে নামাতে হবে এবং দায়িত্ব দিয়ে কাজে লাগাতে হবে। বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) এবং সাবেক ইসি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীকে ডাকা হল, তারা রাস্তায় দাঁড়িয়েও থাকল- তাতে কোন লাভ হবেনা। সেনাবাহিনী সদস্যরা যাতে তাদের দায়িত্ব যথাযথ পালন করতে পারেন, সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমার তো মনে হয় সেনাবাহিনী মোতায়েন নিয়ে নির্বাচন কমিশন চতুরতার আশ্রয় নিয়েছে। তারা বলছে, নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনী ক্যান্টনমেন্টে রিজার্ভ হিসেবে থাকবে। রিটার্নিং অফিসার ডাকলে ছুটে আসবে। প্রশ্ন হচ্ছে, সেনাবাহিনী তো ক্যান্টনমেন্টেই থাকে। তারাতো আর বাহিরে থাকেনা। পুরো বিষয়টাই হাস্যস্পদ লোক দেখানো বলে তিনি মনে করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, সেনাবাহিনী মোতায়েন নিয়ে ইসি অহেতুক বির্তক ও ধুম্রজালের সৃষ্টি করছে। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর সেনা সদস্যদের ডেকে কি হবে? ঘটে যাওয়ার ঘটনা ইসি এবং সিইসির নিতে হবে। কিন্তু অবস্থা দৃষ্টে দেখা যায়, ইসি ও সিইসি পূর্বের আদেশ থেকে সরে এসে সেনাবাহিনীকে ক্যান্টনমেন্টে রিজার্ভ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ফলে সেনাবাহিনী ক্যান্টনমেন্টেই থেকে যায়। তদোপরি নির্বাচনের কেন্দ্রগুলোতে মারদাঙ্গা মহড়া হলেও, রিটার্নিং অফিসারদের পক্ষ হতে সেনাবাহিনীকে ডাকার কথাও শোনা যায়নি। সেনাবাহিনী যেখানে যে অবস্থায় ছিল, সেখানেই থেকে যায়।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ২৮ এপ্রিলের ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রামের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে শান্তি শৃঙ্গলা ও নিরাপত্তা দায়িত্বে আনসার, পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি থাকা সত্ত্বেও যে মর্মান্তিক অবর্নণীয় ও ন্যাক্কারজনক ঘটনা ভোট কেন্দ্র লন্ড ভন্ড, প্রতিপক্ষ পুলিং এজেন্টদের মারধর, জাল ভোটের সীমাহীন মহোৎসব তিন সিটি নির্বাচনে দায়িত্ব প্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ভোট দেয়ার যে ন্যাক্কারজনক দৃশ্যপটসহ অবর্ননীয় ঘটনার অবতারণা হয়েছে, তা নির্বাচন কমিশন ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের জন্য ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের পর আরেকটি নিকৃষ্টতম উদাহরণ বৈ কারো পক্ষে অন্য কিছু বলার সুযোগ একেবারেই পরাহত। কোন ক্রিমিনাল অপরাধ করে অনেক সময় তা দামাচাপা দেয়ার কমবেশী সুযোগ থাকে, এ নির্বাচনে ওপেন সিক্রেট অপরাধ ধামাচাপা দেয়ারও কোন সুযোগ থাকেনি বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। তারপরও ইং ২৮/০৪/২০১৫ তারিখের নির্বাচনের পর রাতের সংবাদে ও ২৯/০৪/১৫ ইং বিভিন্ন কাগজে সিইসির অবাধ, সুষ্ট, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের বয়ান শুনে দেশবাসী, তিন সিটি এলাকার জনগণ, রাজনীতিক সুশীল সমাজ হতাশ ও নির্বাক।

শুধু ইং ২৮/০৪/২০১৫ তারিখের তিন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনই নয় ২০১৪ সনের ৫ জানুয়ারী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচনে সেনা মোতায়েনে সকালে এক কথা, রাতে আরেক কথা এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরণের প্রক্লাম্যাশন প্রদান করে ইসি ও সিইসি যথেষ্ট আলোচিত হয়েছেন।

২০১১ সালে নারায়নগঞ্জের সিটি নির্বাচন ও ২৮ এপ্রিল ২০১৫ সালের তিন সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন নিয়ে নির্বাচন কমিশন এত কিছু করলেও, আনন্দ ও গর্বের বিষয় নিরপেক্ষ দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর কোন কর্নার থেকেই কোন মন্তব্য করা হয়নি। এমনকি আই.এস.পি.আর বা আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরও কোন প্রেস রিলিজ প্রদান করেনি। সেনাবাহিনীর এ নীরবতা ও নিশ্চুপ দেশের সকল মহলে নির্বাচনে তাদের নিরপেক্ষতার উজ্জ্বল ভাবমূর্তির দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তারা প্রমান করেছে সেনাবাহিনী রাষ্ট্রের স্বাধীন ও সাংবিধানিক সংস্থা। যে কারণে দেশের জনগণ ও দেশবাসীর নিকট সেনাবাহিনী প্রজাতন্ত্রের অহংকার, গৌরবদীপ্ত ও প্রশংসার দাবীদার। ঘুরে দাঁড়ানো দেশ রক্ষার এ সমুজ্জ্বল গৌরবদীপ্ত বাহিনীকে দয়া করে কোন কিছুতেই বিতর্কে না জড়ানোই উচিত। ৫ জানুয়ারী নির্বাচনের পর ২৮/০৪/২০১৫ ইং সিটি নির্বাচনগুলোতে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া প্রত্যক্ষ নির্বাচন অবজারভেশন সূত্র, টিআইবি ও অন্যান্য মনিটরিং সংস্থা নির্বাচনে ভোটের নামে যে অরাজকতা, লোমহর্ষক ঘটনা ও নজিরবিহীন কারচুপির কথা তুলে ধরছে দেশ ও বিদেশে যা উম্মোচিত হয়েছে তাতে ইসি ও সিইসির ন্যাক্কারজনক ব্যর্থতার চিত্র পরিষ্ফুটিত।

এসব কিছু থেকে আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী তাদের গৌরবদীপ্ত প্রশংসা ধরে রেখেছে। অন্য কোন সংস্থা ইসি ও সিইসির মতো সেনাবাহিনী প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া, সংবাদ কর্মি ও প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে কোন ধরণের মন্তব্য করলে, আজ সিটি নির্বাচনের অপবাদের আংশিক দায়ভারও তাদের বহন করতে হতো। জাতীয় উন্নয়ন, দূর্যোগ মোকাবিলা ও মিশনে সেনাবাহিনীর প্রশংসার যে স্বীকৃতি মিলেছে, তেমনি সিটি নির্বাচনে কোন মন্তব্য না করে, নীরব থাকার প্রেক্ষাপট তাদেরকে করেছে আরো সুবিন্যস্ত, সুশৃংখলিত ও সুপ্রশংসিত।

নিরপেক্ষতা, সুশৃংখলতা ও নিয়মানুবর্তিতা মধ্যে এমনিভাবে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর আগামী দিনের অগ্রযাত্রা হোক আরো সুন্দর, গণতান্ত্রিক, নিয়মতান্ত্রিক ও সুসংহত। দার্শনিক এ্যারিষ্টটল বলেছেন, ‘‘আইন মেনে চলা দাসত্ব নয়, আইন মেনে চলাই মুক্তির পথ’’।