Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

গ্যাং কালচারে গ্যাং পার্টি প্রশাসনের কঠোরতা জরুরি

ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৭, ০৬:০৮ এএম


গ্যাং কালচারে গ্যাং পার্টি প্রশাসনের কঠোরতা জরুরি

অন্ধকার পথে ধেয়ে চলছে আমাদের তরুণ সমাজের একটি অংশ। বিত্তবান পরিবারের এসব কিশোর-তরুণরা পাড়া-মহল্লায় বিশেষ গ্যাং পার্টি গড়ে তুলে সন্ত্রাস ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। মাদকের ভয়াবহ নেশায় জড়িয়ে পড়াসহ ঘটাচ্ছে যৌন হয়রানি ও হত্যাকা-ের মতো জঘন্য ও ভয়াবহ সব অপরাধ। একটি সমাজে যখন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের এমন বিপথগামীতার তথ্য পাওয়া যায় তখন তা সার্বিকভাবে আশঙ্কাজনক এক বাস্তবতাকেই নির্দেশ করে। আরও উদ্বেগের কারণ যে, দিন দিন এ প্রবণতা বাড়ছে, যা নিঃসন্দেহে তরুণদের ভবিষ্যৎকে এক অজানা অন্ধকারের দিকেই ঠেলে দিচ্ছে। একটি সমাজের জন্য এ পরিস্থিতি কিছুতেই স্বস্তিকর হতে পারে না। সহযোগী একটি দৈনিকে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, রাজধানীর উত্তরা, তেজগাঁও এবং মিরপুরে ইতোমধ্যে এ ধরনের গ্যাং পার্টির মধ্যকার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে তিনজন খুন হয়েছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একই এলাকায় গড়ে ওঠা বিভিন্ন গ্যাং পার্টির মধ্যে প্রায়ই ঘটছে সংঘর্ষ ও খুনোখুনির ঘটনা। গ্যাং পার্টির সদস্যরা মাদক সেবন, মাদকের ব্যবসা, ছিনতাই ও বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালাচ্ছে। 

এতে সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। ফলে এটা বলা বাহুল্য নয় যে, রাজধানীকেন্দ্রিক শহুরে জীবনে কৈশোর ও তারুণ্যে ভয়ঙ্কর কালো ছাপ ফেলছে এই গ্যাং পার্টি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্যাং পার্টির অধিকাংশ সদস্যই শিক্ষার্থী। কোনো কোনো দলে নারী সদস্যও রয়েছে। সহপাঠী বা বন্ধুদের কাছ থেকে গ্যাং পার্টির সদস্যদের সম্পর্কে ধারণা পায় আরেক বন্ধু। আবার অনেকে ইন্টারনেটে বিদেশি গ্যাং পার্টির সদস্যদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। কোনো কোনো গ্যাং পার্টি ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেও নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখে। পুলিশ বলছে, রাজধানীতে সক্রিয় বিভিন্ন গ্যাং পার্টির সদস্যরা হিরোগিরি প্রদর্শন করতে বিশ্বাসী। কেউ কেউ দেশি-বিদেশি চ্যানেলে নানা ধরনের ছবি দেখেও গ্যাং কালচারে আকৃষ্ট হয়। আর এভাবেই কিশোর এবং তরুণরা জড়িয়ে পড়ছে ভয়াবহ সব অপরাধে। যা কারও কাম্য হতে পারে না। একজন কিশোর বা তরুণ তার অভিভাবক ও শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে নিজের জীবন আলোকিত করে গড়ে তুলতে সচেষ্ট থাকবে। এর পেছনের কারণগুলোই বা কি তাও সংশ্লিষ্টদের খুঁজে দেখতে হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইন্টারনেট, মোবাইল গেমস ইত্যাদি গ্যাং কালচার বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।
এটা সত্য যে, তথ্যপ্রযুক্তির ভালো দিকের পাশাপাশি নানা নেতিবাচক দিকও রয়েছে। আমরা মনে করি, এ ক্ষেত্রে সন্তানকে সঠিক পথে পরিচালনার দায়িত্ব প্রথমত অভিভাবকদের। আবার দেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সক্রিয় থাকা সত্ত্বেও রাজধানীর পাড়া মহল্লায় কীভাবে এই গ্যাং পার্টি গড়ে উঠতে পারে তা জেনেও বিস্মিত হওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। কিশোররা যখন ভয়াবহ অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে, তখন তাদের প্রতি অভিভাবকদের দায়িত্বশীল হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। সর্বোপরি বলতে চাই, আমাদের তরুণ প্রজন্ম যারা আগামীর উজ্জ্বল তারকা, এদের যথাযথভাবে গড়ে তোলার দায়িত্ব রাষ্ট্র অস্বীকার করতে পারে না।
এদের শনাক্ত করে সংশোধনেরও সুযোগ দেয়া জরুরি। আবার পুলিশ যখন বলছে, এদের অনেককেই আটক করা হয়েছে। যারা কিছুদিন কারাগার থেকে বেরিয়ে আবারও একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ফলে এ ভয়াবহ প্রবণতা রোধে রাষ্ট্রের কর্তব্য হওয়া দরকার কিশোর কিংবা তরুণদের তথ্যপ্রযুক্তি অপব্যবহারের লাগাম টেনে ধরার কার্যকর উদ্যোগ নেয়া। পাশাপাশি খেলাধূলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এদের অংশহগ্রহণ বাড়ানোসহ নির্মল বিনোদনের ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করা। কিশোর ও তরুণদের এই অধঃপতন রোধে সরকার দ্রুততার সঙ্গে প্রশাসনিক কঠোরতা বাড়ানোসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।