Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

বিশ্বব্যাংক নিয়ে উত্তপ্ত সংসদ মানহানির মামলা করা উচিত

ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৭, ০৬:১৮ এএম


বিশ্বব্যাংক নিয়ে উত্তপ্ত সংসদ মানহানির মামলা করা উচিত

কানাডিয়ান আদালতে প্রমাণিত হয়েছে, পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতির যে অভিযোগ তুলেছিলো বিশ্বব্যাংক তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের একদল জনবিচ্ছিন, ঈর্ষাকাতর লোকজনের উস্কানিতে প্রভাবিত হয়ে, পদ্মাসেতুতে র্দুনীতি হয়েছে-এই অজুহাত দেখিয়ে ১২০ কোটি টাকার ঋণ বাতিল করে দেয়। এতে তখন শেখ হাসিনার সরকার খুব বিপাকে পড়েছিলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনায় মুখর হয়েছিলো। ব্যক্তিগত ভাবে প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েছিলেন। তিনি তখন অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে বোঝাবার চেষ্টা করেছিলেন যে, বিশ্বব্যাংক আমাদের টাকাই বরাদ্দ করেনি, সেখানে র্দুনীতির প্রশ্নই আসে না। বিশ্বব্যাংককে খুশি করার জন্য তখনকার যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোনেকে মন্ত্রীত্ব থেকে বরখাস্ত করা হয়। সৈয়দ আবুল হোসেন একজন বিদ্যোৎসাহী, গুণী মানুষ, লেখালেখি করেন। পরিশ্রম করে জীবনে বড় হয়ে উঠেছেন। তিনি মান-সম্মান খোয়ালেন বিশ্বব্যাংকের কারণে। এখন তাঁর ভাবমূুর্তি তিনি ফিরে পাবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ সঙ্গত কারণে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্যবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তাঁর ফেসবুকে দীর্ঘ বিবৃতি দিয়েছেন। তাতে তিনি স্পষ্টভাবে নোবেলবিজয়ী ড. ইউনুস ও মার্কিন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে সরাসরি দোষারোপ করেছেন। এদের পরামর্শে বিশ্ব ব্যাংক পদ্মাসেতুর ঋণ বাতিল করে সরকারকে বিপাকে ফেলেছিলো বলে মন্তব্য করেন জয়। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের সুশীল সমাজের একটি অংশ-যারা বিশ্বব্যাংকের পক্ষ নিয়ে সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন, তাদের সরকারের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। গত রোববার সংসদে উত্তপ্ত আলোচনা হয়েছে। আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমরা চোর নই, আমরা বীরের জাতি, তা কানাডার আদালতে প্রমাণিত হয়েছে। জাতীয় সংসদে জোরালো দাবি উঠেছে, বিশ্বব্যাংককে ক্ষমা চাইতে হবে। বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করার কথাও উঠেছে সংসদে। 

দেশের যারা বিশ্ব ব্যাংককে সমর্থন করেছিলো, ঋণ বাতিলে উল্লাস করেছিলো, তাদের দেশোদ্রোহী আখ্যা দেয়া হয়েছে। তাদের শাস্তির আওতায় আনার কথাও বলা হয়েছে। সংসদে উঠে এসেছে ড, ইউনুস, ড, কামাল হোসেন ও হিলারি ক্লিনটনের নাম। বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ বাতিলের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুব আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে বলেছিলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু হবে। একটা জাতি যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে, সে জাতি কেন একটা পদ্মাসেতু বানাতে পারবে না? নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মাসেতু দ্রুত সম্পন্ন হতে চলেছে। আমাদের ধারণা, ২০১৯ সালে পদ্মাসেতু উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনে নামবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সততার শক্তি ছিলো বলেই বিশ্ব ব্যাংকের ওই অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পেরেছিলাম। আমার পরিবার এমন কাজ করবে না, যাতে দেশের মানুষের মান-সম্মান খোয়া যায়। আমরা দেশকে ভালোবাসি, দেশের মানুষকে ভালোবাসি। কানাডার আদালতে বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। আপনাদের কাছে দোয়া চাই যেন মান-সম্মান বজায় রেখে চলতে পারি। জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্যরা বলেছেন, ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা না নিলে তারা ষড়যন্ত্র থামাবে না। এটা ঠিক যে, ষড়যন্ত্রের বিষদাঁত না উপড়ানো পর্যন্ত ষড়যন্ত্র থামে না। বঙ্গবন্ধু তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’-তে বলেছেন, ‘পরশ্রীকাতর’ শব্দটি পৃথিবীর অন্যকোনো দেশে নেই আমাদের দেশ ছাড়া। এ দেশের পরশ্রীকাতর লোকজন প্রতিহিংসার বশে দেশেরই বড় মাপের ক্ষতি করতে চেযেছিলেন। ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। কানাডার আদালতে সেই কল নড়ে উঠেছে। এই ঘটনার ভেতর দিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্বে আলোকিত হয়েছে। সরকারেরও স্বচ্ছতা প্রমাণিত হয়েছে, তার ইমেজ বৃদ্ধি পেয়েছে। সামনের নির্বাচনে তা নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে। ষড়যন্ত্রকারীদের মুখে চুনকালি লেগেছে। যদি প্রধানমন্ত্রী পদ্মাসেতুর কাজ শুরু না করতে পারতেন, কী হতো? বিশ্ব ব্যাংকের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা হওয়া উচিত।