ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৭, ০৫:৫০ এএম
ভাবতে আমাদের কষ্ট হচ্ছে, জাতির অভিভাবক শিক্ষকদের একটি অংশ এবার এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। তাহলে আমাদের ভাবতে হবে, জাতির মেরুদণ্ডে ঘুন ধরেছে। শিক্ষা নিয়ে চোরাকারবারি হলে, কালোবাজারি হলে জাতির মেরুদ- চুরমার হয়ে যাবে। পাকিস্তানি শাসকরা চেয়েছিলো বাঙালিকে একটি মেরুদ-হীন, মেধাহীন জাতিতে পরিণত করতে। এ জন্য তারা অনেক ষড়যন্ত্র করেছে, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত অগণিত বুদ্ধিজীবী হত্যা করেছে। আর এ কথা কে না জানে যে, পরীক্ষায় নকল করে বুদ্ধিজীবী হওয়া যায় না। আধা শিক্ষিতরা গাধার সমতুল্য। আর নকলবাজরা গাধা ছাড়া কী হবে? অবাক হলাম গত বুধবারের পত্রিকা পড়ে যে, চলমান এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নপ্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছেন পরীক্ষাকেন্দ্রে দায়িত্ব পালনকারী একশ্রেণির শিক্ষক। নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানকে ফলের দিক থেকে এগিয়ে রাখতে তারা কেন্দ্রের প্রশ্নপত্রের প্যাকেট দু-এক ঘন্টা আগে খুলে ফেলেন বলে তথ্য পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই অনৈতিকতার দায়ে ২০ জন শিক্ষক-কর্মচারীর এমপিওভুক্তি স্থগিত করেছে শিক্ষামন্ত্রণালয়। শিক্ষামন্ত্রীতো যথার্থই দুঃখ করেছেন যে, আমাদের সবচেয়ে আস্থার জায়গা শিক্ষকরা। তাদের মধ্যেও কিছু দুর্নীতিবাজ ঢুকেছে। দুর্নীতিবাজদের হাত ধরে প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার ভুয়া প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা-পুলিশ। তাদের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এই শিক্ষা-জালিয়াতির কাজে প্রযুক্তির অপব্যবহার করা হচ্ছে। সামাজিক গণমাধ্যমে প্রশ্নপত্র ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। এর চেয়ে সর্বনাশ জাতির জন্য আর কিছু হতে পারে না। এমনিতে প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলছে ধনীদের টাকার খেলা, তারা টাকার জোরে শিক্ষা মেনুফ্যাচার করতে চায়, তারপর আবার যদি শিক্ষকরা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে ছেলেমেয়েদের হাতে তুলে দেন, তাহলে তো ছেলেমেয়েদের মাথা চিবিয়ে খাওয়া হবে। একটা কথা পরিস্কার জানিয়ে দেয়া দরকার যে, শিক্ষা অর্জনের কোনো কোনাকুনি পথ নেই। শিক্ষার সঙ্গে সাধনা ও সততার প্রসঙ্গ জড়িত। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে শিক্ষা অর্জন করতে হয়। খাঁটি শিক্ষার জন্য বার বার অনুশীলন করতে হয়। শিক্ষার সঙ্গে অধ্যাবসায় কথাটিও জড়িত। আয়েশ করে, আরাম করে শিক্ষা অর্জন করা যায় না। এই কথাগুলো বিদ্যায়তনের শিক্ষকরাই ছাত্রছাত্রীদের জানাবেন। বোঝাবেন। তা না করে উল্টো অসৎ পন্থা শেখাচ্ছেন? এ সবতো জাতির মেরুদ-ে কুঠার মারার সমতুল্য। আমরা কি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছেলেমেয়ে পাঠাই শিক্ষক-শিক্ষিকার কাছ থেকে চুরিবিদ্যা শেখার জন্য? পরীক্ষা নেয়া হয় কি কেবল চোরাইপথে স্টার প্লাস ধরিয়ে দেবার জন্য? তাতে তো মেধা যাচাই হয় না। সরকার দেশের জনগণের কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে শিক্ষার অবকাঠামো উন্নতি করছে মেধাবী প্রজন্ম তৈরি করার জন্য, ফাঁকিবাজ, আধাশিক্ষিত গাধা-প্রজন্ম তৈরি করার জন্য নয়। এ সমস্ত দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদের জন্য স্টার প্লাস পাওয়া ছেলেমেয়েরা কোনো ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষায় টিকতে পারে না, স্টার তখন মাটিতে গড়াগড়ি খায়। বেদনা ও পরিতাপের সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করছি যে, খাঁটি শিক্ষার কোনো গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না, শুধুই স্টার প্লাস নিয়ে তৎপর হতে দেখা যাচ্ছে। এতেই শিক্ষার পবিত্রতার মধ্যে প্রবেশ করছে অনৈতিকতা, লোভ ও মেকি শিক্ষা। তারপর মেকি শিক্ষার্থীরা মেধাযাচাই পরীক্ষায় ধপধপ করে অকৃতকার্য হচ্ছে। একে তো কওমী মাদ্রাসার শিক্ষা অদক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি করে, গরুভার হয়ে চেপে বসেছে জাতির ঘাড়ে, তারপর যদি পাবলিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষকরা ফাঁকিবাজ, আধাশিক্ষিত গাধা-প্রজন্ম জাতির কাঁধে চাপিয়ে দেন, তাহলে দুঃখের সীমা থাকে না। অনেক বেতন-প্রমোশন-সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন শিক্ষকরা, সেই সুবিধা গলাধঃকরণ করে যারা নকল সাপ্লাই দিয়ে জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন, তাদের কঠোর শাস্তির দাবি করছি আমরা। অবিলম্বে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের পথ রুদ্ধ করতে হবে। দেশে নৈতিক শিক্ষা বৃদ্ধি করতে হবে।