Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

গর্ব ও মর্যাদার পদ্মা সেতু দ্রুত সম্পন্নের প্রত্যাশা

ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৭, ০৫:৫৪ এএম


গর্ব ও মর্যাদার পদ্মা সেতু দ্রুত সম্পন্নের প্রত্যাশা

পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি-অনিয়মের ষড়যন্ত্র চলছে- এমন অভিযোগ এসেছিল বিশ্বব্যাংকের তরফ থেকেই। কিন্তু শুরুতেই বিপত্তি। সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি হতে পারে- এমন শঙ্কা প্রকাশ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করলেও জনমনে এমন একটি ধারণা গেঁথে যায়- যা রটে তার কিছু তো বটে। এ যেন ‘কান নিয়ে গেছে চিলে’ অবস্থা। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, মন্ত্রীর পদ থেকে সৈয়দ আবুল হোসেনকে সরিয়ে দিলেও বিশ্বব্যাংক তুষ্ট হয়নি। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়। সরকারবিরোধী কয়েকটি রাজনৈতিক দল এবং সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে বলা হতে থাকে, ‘প্রমাণ হয়ে গেল যে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ সঠিক।’ এটাও বলা হয়, মন্ত্রী আগে পদত্যাগ করলে বিশ্বব্যাংক ১২০ কোটি ডলার ঋণ প্রদানের অঙ্গীকার বাতিল এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও অন্য দাতারা সরে দাঁড়াত না। অনেকেই এ ঘটনায় দেশের ভাবমূর্তি ও সম্মান ক্ষুণ্ন হওয়ার অভিযোগ করতে থাকেন। দুর্নীতি দমন কমিশন এ বিষয়ে তদন্ত করে দুর্নীতির প্রমাণ মেলেনি বলে অভিমত দিলে তারও সমালোচনা হতে থাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ‘ধর্মের কল বাতাসে নড়ে’। কানাডার আদালত ব্যাপক অনুসন্ধান শেষে জানিয়ে দেন, মামলাটি ভিত্তিহীন এবং গুজব ও গালগল্পে ভরপুর। এ রায়ে প্রমাণ হয়ে গেল- বিশ্বব্যাংক ভুল পথে চলেছিল। কিন্তু তাদের ঋণ প্রদান বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশের যে ভাবমূর্তি ও সম্মানহানি ঘটেছে, তার ক্ষতিপূরণ কীভাবে সম্ভব? প্রকল্পটিও অন্তত দুই বছর পিছিয়ে গেল। আর দেশের মধ্যে যারা বিশ্বব্যাংকের অন্যায় অভিযোগের সুরে সুর মিলিয়েছেন, তাদের সম্পর্কেই-বা কী বলা যায়? তারাও তো দেশেরই জন্য ক্ষতিকর কাজ করেছেন। তবে ইতিবাচক দিকও রয়েছে। সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী কানাডার আদালতের রায়ের পর সৈয়দ আবুল হোসেনকে মন্ত্রিপরিষদে পুনর্বহালের দাবি করেছেন। হাইকোর্ট রুল দিয়ে জানতে চেয়েছেন- পদ্মা সেতু প্রকল্পে ‘দুর্নীতির মিথ্যা গল্প’ বানানোর ষড়যন্ত্রে যুক্তদের খুঁজে বের করে কেন বিচারের মুখোমুখি করবে না। দুর্নীতির ভুয়া অভিযোগ তুলে সেতুর নির্মাণ কাজ বিলম্বিত করায় বিশ্বব্যাংকের কাছে ১০০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়েছে ১৪ দল। জাতীয় সংসদে সদস্যরা বাংলাদেশে উন্নয়নের পথে বিঘ্ন সৃষ্টির নিন্দা করেছেন। বাংলাদেশে দুর্নীতি-অনিয়ম নেই, এ দাবি সমীচীন হবে না। কিন্তু যেভাবে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের শুরুতেই বাধার প্রাচীর গড়ে তোলা হয়, তা কেবল অনাকাক্সিক্ষত নয়, এর পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র থাকা অস্বাভাবিক নয়। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ে কাজ করে যাওয়া ১৬ জন কর্মকর্তা সম্পর্কে অভিযোগ উঠেছে- তারা শুল্কমুক্ত সুবিধা ব্যবহার করে আনা গাড়িগুলো নিয়ম অনুযায়ী সরকারের কাছে হস্তান্তর করেননি। এর ফলে সরকার শুল্ক থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এটা কি দুর্নীতি নয়? তবে এর প্রতিকারে রাজস্ব বিভাগ নিয়ম-কানুন অনুস্মরণ করছে। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যেতে পারত। কিন্তু তারা নিজেরা ঋণ বাতিল করেছে, অন্যদের তা করায় উৎসাহ জুগিয়েছে। বিশ্বব্যাংক আমাদের উন্নয়ন কর্মকা-ে নানাভাবে সম্পর্কিত রয়েছে। তাদের কাছ থেকে নাম মাত্র সুদে ও দীর্ঘমেয়াদে ঋণ পায় বাংলাদেশ। তবে এটা করুণা নয়। এ প্রতিষ্ঠানের সদস্য হিসেবে, উন্নয়নের সিঁড়িতে নির্বিঘ্নে চলার জন্য আমাদের এ ঋণ পাওয়ার হক রয়েছে। আমরা আশা করব যে, বিশ্বব্যাংক ভুল স্বীকার করবে এবং বাংলাদেশকে শর্তহীন সহায়তা দিয়ে যাবে। পাশাপাশি ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠী, বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে যারাই কাজ করুক তাদেরও জবাবদিহি থাকা চাই। একটি মর্যাদাসম্পন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের দিক থেকে দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ উঠলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই নির্ভার ছিলেন। অনিয়ম-অস্বচ্ছতার কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে বারবার অভিমত ব্যক্ত করেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, তিনি নিজেদের অর্থে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের অবকাঠামো প্রকল্প নির্মাণ করায় উদ্যোগী হয়েছেন। তার এ পদক্ষেপের ফলে প্রকল্পটি হয়ে উঠেছে আমাদের মর্যাদা ও গর্বের প্রতীক। প্রকল্প কাজ নির্বিঘ্নে ও যথাসময়ে সম্পন্ন হবে এবং আমাদের উন্নয়নের চাকা আরও সচল করায় অবদান রাখবে, এখন এটাই কাম্য।