Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

নতুন ইসির প্রথম নির্বাচন এই দৃষ্টান্ত অব্যাহত থাকুক

ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৭, ০৬:১৪ এএম


নতুন ইসির প্রথম নির্বাচন এই দৃষ্টান্ত অব্যাহত থাকুক

গণমাধ্যম এই খবর পরিবেশন করেছে যে, রাঙামাটির বাঘাই ছড়ি পৌরনির্বাচন গত শনিবার শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচনে সরকার দলীয় প্রার্থী জাফর আলী খান বিজয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী, তৃতীয় অবস্থানে ছিলেন বিএনপির প্রার্থী। বাঘাইছড়ি পৌরসভা নির্বাচনে এবার ৩ জনই প্রার্থী ছিলেন। কাউন্সিলর পদে ২৫ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সরকার দলীয় প্রার্থী জাফর আলী খান ৩ হাজার ৭৯৮ ভোট পেয়ে বেসরকারি ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী পেয়েছেন ২ হাজার ২২৭ ভোট, বিএনপি প্রার্থী ওমর আলী ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ১ হাজার ৭৯৮ ভোট। সূত্র জানাচ্ছে, সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত ভোটাররা উৎসব মুখর পরিবেশে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ছিলো চোখে পড়ার মতো। কোথাও কোথাও মৃদু বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করে। বাঘাইছড়ি পৌরসভায় ভোট পড়েছে ৭০ শতাংশ। পত্রিকার ছবিতে দেখা গেছে, অশীতিপর এক বৃদ্ধা আনসারদের কাধেঁ ভর দিয়ে ভোট প্রদান করছেন। এই নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়েছে। নির্বাচনের আগে প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময় করেছিলেন কমিশনার শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেছেন, এ নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে নেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এই কমিশনের অধীনে সব নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হবে। বোঝা যাচ্ছে, নির্বাচন কমিশন কীভাবে এবং কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রশাসনকে মোটিভেট করেছিলেন। ইসির নতুন ও প্রথম দায়িত্বপালন আপাতত ভালোভাবে সম্পন্ন হলো। অবশ্য এই নির্বাচনে বিএনপি তৃতীয় অবস্থানে ছিলো বলে কোনো অভিযোগ ওঠেনি, নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হলে ইসির কপালে দুঃখ ছিলো। মাত্র একটা পৌর সভার নির্বাচন দিয়ে কিছু যাচাই করা যায় না, তবুও ইসি তাঁর এই যাত্রাকালীন নির্বাচনে আমানত খেয়ানত করেননি, এ জন্য তারা ধন্যবাদ পেতে পারে। সরকারি দলও সংযমের পরিচয় দিয়েছে, এ জন্য তারাও ধন্যবাদ পেতে পারে। ভালোকে ভালো এবং মন্দকে মন্দ না বললে দেশের জন্য মঙ্গলকর হয় না। সরকারকে দোষারোপ করার জন্য এক পায়ে খাড়া থাকা মোটেও ভালো কথা নয়। সরকার মানেই ‘নন্দঘোষ’ আর বিরোধী দল মানেই ‘ধোয়া তুলসিপাতা’ এমন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণযোগ্য নয়। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে বিরোধীদলের দায়িত্ব শুধু সরকারের লাগাতার সমালোচনা নয়, কার্যক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা। সরকারকেও ১০০ ভাগ সাবধান থাকতে হবে অতি উৎসাহীদের ব্যাপারে। অতি উৎসাহীরা সব সময় পরিবেশ ঘোলাটে করে। এদের দমন করতে পারলে সরকারের ভবমূর্তিতে কোনো রকম আঁচড় লাগবে না। দলীয় সরকারের অধীনে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে ভারতের মতো নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণ ধীরে ধীরে আস্থাশীল হবে। আমাদের সংবিধান কার্যকর থাকবে। সামনে আরো নির্বাচন আছে ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে। যেমন নির্বাচন কমিশনকে তেমন সরকারকে পদে পদে অগ্নি পরীক্ষা দিতে হবে। দেশি-বিদেশি অনেক লোকজন, অনেক সংস্থা, মিডিয়া এবং রাজনৈতিক বিশ্লেকরা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছেন নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের দিকে। ভূমিকা পালনে পান থেকে চুন খসলেও হৈ চৈ পড়ে যাবে। এটাকে আমরা মন্দ বলি না। 

তবে সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলার মনোবৃত্তি উন্নত হলে দেশের উপকার হবে। আমরা আশা করবো, সকল পক্ষ যদি কেবল নির্বাচনটাই সুষ্ঠু হোক চান, তাহলে সামনের সব নির্বাচন এই ইসির অধীনেই সুষ্ঠু হবে। এই প্রক্রিয়ায় গণতন্ত্র বাংলাদেশে গৌরবজনক স্থানে চলে যাবে। ক্ষমতা কারো পৈতৃক সম্পত্তি নয়, জনগণ যাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় পাঠাবে তারাই ক্ষমতায় যাবে। জনগণের ভোটাধিকার কেউ হরণ করুক, আমরা তা কিছুতেই চাইতে পারি না।