Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪,

বাল্যবিয়ে বিল পাস আইন যথাযথ কার্যকর হোক

মার্চ ১, ২০১৭, ০৫:৩৪ এএম


বাল্যবিয়ে বিল পাস আইন যথাযথ কার্যকর হোক

বাল্যবিয়ে বিরোধী বিল- ২০১৭ সংসদে পাস হয়েছে। বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের বিয়ের সুযোগ রেখে এই বিলটি পাস হয়েছে। এই আইন ছেলেদের জন্যও প্রযোজ্য হবে। গত সোমবার সংসদে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। গত ৮ ডিসেম্বর বিলটি সংসদে উত্থাপন করা হয়েছিলো। ব্রিটিশ আমলে প্রণীত ‘চাইল্ড ম্যারেজ রেসট্রেইন্ট-১৯২৯‘ বাতিল করে নতুন আইন করতে বিলটি সংসদে তোলা হয়। বিলে বলা হয়েছে, কোনো অপ্রাপ্ত বয়স্ক নারী বা পুরুষ বাল্যবিয়ে করলে তিনি সর্বোচ্চ ১ মাসের কারাদ- এবং ৫ হাজার টাকার বদলে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। বিলের ১৯ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের অন্যান্য বিধানে যা কিছুই থাকুক না কেন, বিধি দ্বারা নির্ধারিত কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্ত বয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থে, আদালতের নির্দেশ এবং পিতা-মাতা বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সম্মতিক্রমে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে, বিয়ে সম্পাদিত হলে তা এই আইনের অধীন অপরাধ বলে গণ্য হবে না। প্রস্তাবিত আইনে মেয়েদের ১৮ এবং ছেলেদের ২১ বছর ধরা হয়েছে বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স। বিশেষ ব্যবস্থায় মেয়েদের একটু কম বয়সে বিয়ে দেবার অনুমতি রাখার সমালোচনা করেছেন অনেকে। তারা বলেছেন, এতে বাল্যবিয়ের প্রবণতা বেড়ে যাবে। এর উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিরোধিতাকারীরা বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞান। সমাজ বাস্তবতার কথা বিবেচনায় রেখেই এই বিধান রাখা হচ্ছে। প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০১৪ সালে ইংল্যান্ড-এ গার্লস্ সামিটে ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের এক তৃতীয়াংশ নামিয়ে আনার এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাল্যবিয়ে মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এ লক্ষ্য অর্জনে সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর তিনটি কুপ্রথার বিরুদ্ধেই আন্দোলন করেছিলেন। তিনি বিধবা বিয়ের পক্ষে, বহুবিয়ে ও বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে আজীবন লড়ে গেছেন। কিন্তু তিনি সবটুকু সফল হতে পারেন নি। ধর্মীয় কুসংস্কারের সঙ্গে যা জড়িত তা সহজে সমাজের বুক থেকে উৎখাত করা যায় না। তাই সংসদে আইন পাস করাই সবটা সমাধান এনে দেবে না। বাল্যবিয়ের আইন কীভাবে লংঘন করতে হয় তা এলাকার মাতব্বর ও কাজী মৌলভী সাহেব বাতলিয়ে দেবেন। পুলিশ যেখানে সমাজের খুন-খারবি ও ক্রাইম রোধ করতে পারে না, সেখানে লাঠি উঁচিয়ে বাল্যবিয়ে রোধ করতে পাহারা দেবে সর্বক্ষণ, তা আশা করা যায় না। বাল্যবিয়ে একটি সামাজিক ব্যাধি। এর সঙ্গে আর্থ-সামাজিক অবস্থা জড়িত। দরিদ্র-পশ্চাদপদ জনগোষ্ঠী মেয়েদের খরচ চালাতে না পেরে, স্কুল-কলেজে না পাঠিয়ে, শিশুকালেই বিয়ে দিতে প্রলুব্ধ হয়। 

এর কুফল সম্পর্কে তারা মোটেও সচেতন নয়। গ্রামের আলেম সমাজ আজকাল রাজনীতির ময়দানে নেমে সরকারের দোষ ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তাঁদের চোখের সামনে সমাজে যে ধর্মের বিকৃতি ঘটানো হচ্ছে, টাকার লোভে কাজী মৌলভীরা অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালিকাদের বিয়ে দিচ্ছে, তা লক্ষ্য করেন না। বরং নিজেরা কু ফতোয়া দিয়ে ‘হীলা’ বিয়ে করার জন্য এক পায়ে খাড়া থাকেন। এ অবস্থায় সংসদে বাল্যবিয়ে বিরোধী যে আইন পাস হয়েছে তা বাস্তব সম্মত এবং বাল্যবিয়ের মতো ব্যাধি রোধ করার জন্য একটি দরকারী আইন। সংসদে পাসকৃত যে কোনো আইন রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। এখন প্রয়োজন গ্রামাঞ্চলে এই আইনের সরলার্থ ছড়িয়ে দিয়ে জনগণকে সচেতন করা এবং বাল্যবিয়ের কুফল গণমাধ্যমে তুলে ধরা। বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে হলে সচেতন সমাজ গঠন করার বিকল্প নেই। সরকারের প্রশাসনের পাশাপাশি সমাজের ভেতর থেকে প্রতিরোধ গড়ে উঠলে বাল্যবিয়ে বন্ধ হবে। নচেৎ কেতাবের আইন ফাঁকি দেয়া তেমন কোনো কষ্ট হবে না। আমরা চাই সংসদে পাসকৃত আইটি যথাযথ প্রযোগ হোক।