Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

বঙ্গবন্ধুর ছবি পোড়ানো মামলা চাই বিদ্বেষমুক্ত রাজনীতি

মার্চ ২, ২০১৭, ০৫:৪২ এএম


বঙ্গবন্ধুর ছবি পোড়ানো মামলা চাই বিদ্বেষমুক্ত রাজনীতি

ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা নরসিংদীর বেলাবতে এই অপ্রত্যাশিত ঘটনাটি ঘটেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অ্যাডভোকেট নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন এমপির ছবি পোড়ানো মামলার ২৬ আসামীকে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন নরসিংদী আদালত। গত সোমবার নরসিংদী আদালতে হাজিরা দিতে গেলে আদালত আসামীদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে ওই ২৬ আসামীকে জেলহাজতে পাঠান। এর আগে শহীদুল্লাহ নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে রিমান্ডে আনে পুলিশ। সল্লাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগের নেতা জাকির হোসেন স্বপন ও মামলার বাদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফায়েজুর রহমান বলেন, জেল হাজতে প্রেরণকারী ২৬ আসামীর মধ্যে বেশিরভাগই বিএনপির সমর্থক। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে তারা আওয়ামী লীগের অফিসে আগুন ধরিয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা, হুমায়ুন কবীর এমপির ছবি, অফিসের শামিয়ানা ও বাঁশের তৈরি একটি নৌকা পুড়িয়ে দেয়। এই আক্রোশমূলক ঘটনা আমাদের যৎপরোনাস্তি আহত করে। বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা যিনি তাঁকে অসম্মান করা প্রায় সার্বভৌমত্বকে অপমান করার সামিল। ইতিহাস বিকৃতির অনেক পথ আমরা পেরিয়ে এসেছি। বঙ্গন্ধুকে বাদ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিকল্প ইতিহাস খাড়া করার চেষ্টা আমরা দেখেছি। দীর্ঘ ২১ বছর রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তাঁর নাম উচ্চারণ করা নিষিদ্ধ ছিলো। তাঁর নামে একটা পাখিও আকশে উড়তে পারতো না। অনেক অশ্রাব্য কটূক্তি তাঁর নামে করা হয়েছে। তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করেন নি, এই ইতিহাস দাঁড় করাবার অনেক অপচেষ্টা আমরা দেখেছি। কবি হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত স্বাধীনতার দলিলপত্র পর্যন্ত সংশোধন করে প্রমাণ করতে চেয়েছে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতাই চান নি। এতেও বঙ্গবন্ধুকে খাটো করার তৃষ্ণা নিবারণ হয় নি। ইতোপূর্বে আরো কয়েকবার দেশের বিভিন্ন জায়গায় বঙ্গবন্ধুর ছবি পদদলিত করেছে বিএনপি সমর্থকরা। এই ঘটনা উস্কানিমূলক, দেশের সাধারণ মানুষ এই ঘটনার স্বীকৃতি দেবে না। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ তাদের জীবন উৎসর্গ করেছে বঙ্গবন্ধুর কথায়, মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য, তারা বঙ্গবন্ধুর অসম্মান মেনে নেবে না। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে আইন সঙ্গত বিচার আমরা প্রত্যাশা করি। বঙ্গবন্ধুকে বা অন্য কাউকে অকারণে অপমান করা, কোনো সম্মানজনক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ছবি পোড়ানো, কোনো রাজনৈতিক দলের অফিসে আগুন দেয়া-তাও গভীর রাতে-নিচতা ছাড়া অন্যকিছু হতে পারে না। এ সব দৃষ্টান্ত সুস্থ রাজনীতিকে অসুস্থ পরিবেশের দিকে ঠেলে দেবে। সবচেয়ে ভালো হতো যদি বিএনপির হাইকমান্ড থেকে এর প্রতিবাদ করা হতো, কিন্তু তা করা হয় নি। রাষ্ট্রের ফাউন্ডারের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা হাস্যকর। তাঁর ছবি পোড়ানো রাষ্ট্রদ্রোহমূলক অপরাধ। নরসিংদীর বেলাবতে পর পর তিনটি ক্রাইম করেছে আসামীরা, জনগণের দ্বারা স্বীকৃত জাতির পিতা, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী এবং জনগণের দ্বারা নির্বাচিত এমপির ছবি পোড়ানো। তারপরের অপরাধ দলীয় অফিসে আগুন দেয়া। হয়তো তারা ভেবেছে, এরকম কাজ করলে রাজনৈতিকভাবে লাভবান হবে। কিন্তু মূলত প্রতিহিংসা কোনো সুফল বয়ে আনে না। এতে রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত হয় মাত্র। একজনকে খাটো করে অন্যকাউকে বড় করা যায় না। প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের লোকদের উচিত অন্তর হতে বিদ্বেষ বিষ নাশ করে সুস্থ রাজনীতি করা। নরসিংদীর আসামীরা যা করেছে তা প্রতিটি সুস্থবিবেক সম্পন্ন মানুষের নিন্দা পাওয়ার মতো কাজ করেছে তারা। আমরা মনে করি, বিএনপির হাইকমান্ডেরও সতর্ক থাকা উচিত যে, তাদের নাম ভাঙিয়ে যেন লোকজনরা এ ধরনের প্রতিহিংসামূলক কাজ না করে। তা না হলে মানুষের মনে ধারণা তৈরি হবে, বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারলে বঙ্গবন্ধুর মর্যাদার ওপর চূড়ান্ত আঘাত হানা হবে। বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করা হলে হিংসার রাজনীতির পথ উন্মুক্ত হবে। তা আমাদের কাম্য হতে পারে না। সম্মান করতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করা থেকে বিরত থাকা উচিত। না হলে দেশ সংঘাতের দিকে এগিযে যাবে। এ সব অপরিণাম দর্শিতা বঙ্গবন্ধুকে তাঁর আপন স্থান থেকে কখনো সরাতে পারবে না। তাছাড়া আমরা সকল পক্ষকে অনুরোধ জানাবো, মৃতদের অসম্মান না করার। ইতিহাসে যার যা প্রাপ্য তা তাঁকে দেবার সদিচ্ছা সকলের থাকা উচিত। ইতিহাসেরই নিজস্ব গতি আছে, নিজস্ব মাপকাঠি আছে। তাকে কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, পারবেও না। হিটলার, মুসোলিনি, ইদিআমিন, আইয়ুব খানের অনেক ক্ষমতা ছিলো। তারাও ইতিহাস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে নি। তারা ইতিহাসের শাস্তি এড়াতে পারে নি। ইতিহাস তাদের স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছে। মনে রাখতে হবে, যাঁরা ইতিহাসের স্রষ্টা বঙ্গবন্ধু তাঁদের একজন। সে ইতিহাস তিনি তিল তিল করে তৈরি করেছেন। কমরেড ফিডেল ক্যাস্ট্রো তাঁকে বলেছেন ‘হিমালয় পর্বত’। তাই তাঁকে অমর্যাদা না করার অনুরোধ জানাবো সকল পক্ষকে। আমরা চাই বিদ্বেষমুক্ত রাজনীতি।