Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

বসুন্ধরায় তুলকালাম সহিষ্ণু আচরণ কাম্য

মার্চ ৪, ২০১৭, ০৫:৫৫ এএম


বসুন্ধরায় তুলকালাম সহিষ্ণু আচরণ কাম্য

গত বুধবার দিবাগত রাত ১০ টার দিকে বসুন্ধরায় অ্যাপোলো গেইটে মোটরসাইকেল রাখাকে কেন্দ্র করে আবাসিক এলাকার নিরাপত্তা রক্ষীদের সঙ্গে তিনজন ছাত্রের কথা কাটিকাটি হয়। তারা তিনজনই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এক পর্যায়ে নিরাপত্তা রক্ষীরা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ওপর হামলা করে। এ খবর শুনে আরো ১৫-২০ জন ছাত্র সেখানে গেলে তারাও মারধরের শিকার হন। এরপর রাত থেকেই বিক্ষোভ শুরু করেন নর্থ সাউথের ছাত্ররা। বসুন্ধরায় নিরাপত্তা রক্ষীদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার জের ধরে পার্শ্ববর্তী প্রগতি সরণিতে অবরোধ এবং আবাসিক এলাকার ভেতরের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও ভাংচুর করেছেন ছাত্ররা। নর্থ সাউথের ছাত্র হাসনাথ তপু আহত হলে ছাত্ররা দল বেঁধে রাতেই বিক্ষোভ শুরু করে। গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ফের বিক্ষোভ করতে থাকে তারা। বসুন্ধরা গ্রুপের কয়েকটি স্থাপনায়ও ভাংচুর চালায় ছাত্ররা। এর জের ধরে, উত্তেজনা প্রশমিত করার লক্ষ্যে নর্থ সাউথে শুক্রবারের এম-বি-এ ক্লাসের সব পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি শান্ত করার স্বার্থে শুক্রবারের ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুই ঘন্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে প্রগতি সরণি অবরোধ করে রাখার পর দুপুর থেকে ক্যাম্পাস এলাকায় ছাত্ররা বিক্ষোভ ও ভাংচুর শুরু করে। আবাসিক এলাকার ভেতরে থাকা বসুন্ধরা গ্রুপের করপোরেট কার্যালয়ে ভাংচুর চালায় ছাত্ররা। দায়িত্ব পালনকারী ট্রাফিক সার্জেন্ট জানিয়েছেন, ছাত্ররা বিক্ষুব্ধ হয়ে প্রায় দুই ঘন্টা প্রগতি সরণি অবরোধ করে রাখে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রশাসন যৌথ প্রচেষ্টা নিয়ে প্রগতি সরণি থেকে ছাত্রদের উঠিয়ে নেয়। নর্থ সাউথের প্রক্টর জানিয়েছেন, সকালে বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা ক্ষমা চেয়েছেন। ছাত্রদের দাবিও মেনে নেবেন। বসুন্ধরার নিরাপত্তা রক্ষীরা যা করেছে তা অন্যায়। গর্হিত। ছাত্র বয়সে স্পর্শকাতর হওয়াই স্বাভাবিক। কোনো ছাত্রের গায়ে হাত তোলা মানেই বাংলাদেশের সব ছাত্রের গায়ে হাত তোলার সমতুল্য। নিরাপত্তা রক্ষীরা ধৈর্য ধারণ করে তাদের মালিকদের গোচরে নিতে পারতো ঘটনাটি। তা না করে বুজুর্কি দেখিয়ে পর পর দু’বার নর্থ সাউথের ছাত্রদের গায়ে হাত তুলেছে-মানে পিটিয়ে আহত করেছে। এই লাঠিয়ালগিরি কিছুতেই মেনে নেবার মতো নয়। ছাত্ররা যে সংঘবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করেছে, এটা ঠিক করেছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হওয়া দরকার। তবে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা যে ভাংচুর করেছে তা যুক্তিসঙ্গত হয় নি। ভাবতে হবে, নিরাপত্তা রক্ষীদের মতো নিম্ন পেশাজীবীরা কতটুকুইবা বুদ্ধিজ্ঞান রাখে? কতটুকুই বা দূরদর্শিতা রাখে? অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা দেশের ভবিষ্যত কা-ারি। অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সময় এবং আন্দোলন গড়ে তোলার সময় পাবলিকের সুবিধা-অসুবিধা দেখাটা ছাত্রদের দায়িত্ব সচেতনতার পর্যায়ে পড়ে। একের জন্য অন্যের ক্ষতি করাতো ছাত্রদের দ্বারা হতে পারে না। নিম্ন পেশাজীবী তথা নৈশপ্রহরীদের অন্যায়ের প্রতিবাদ আরো মার্জিত, যৌক্তিক কৌশলে হতে পারতো। গার্মেন্ট শ্রমিকদের প্রতিবাদ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের প্রতিবাদ এক রকম হতে পারে না। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন কাকে বলে, যৌক্তিক প্রতিবাদ কাকে বলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের শেখানোর প্রয়োজন নেই। বিনম্র প্রতিবাদের ধার কখনো কম হয় না। মশা মারতে কামান দাগানোর প্রবণতা আজকাল সকল স্তরে আমরা লক্ষ্য করছি। ভেতরের অসন্তোষ চট করে রাজপথে চলে আসে, রাস্তা অবরোধ করা হয়, লোকজনের দুর্ভোগ ডেকে আনা হয়। এটা কোনো কাজের কথা হতে পারে না। প্রতিবাদ জাতীয় সম্পদের ক্ষতির কারণ হতে পারে না। মহান দার্শনিক মহামতি মার্কসের দ্বন্দ্বিক মতবাদ মানলে সমাজে দ্বন্দ্ব থাকবেই, প্রতিবাদও থাকবে। প্রতিবাদ কখনো থামবে না, প্রতিবাদ করে, লড়াই করে বাঁচতে হবে মানুষকে। তাই প্রতিবাদ যেন নিয়মের মধ্যে থাকে, সে দিকটি চর্চা করা দরকার। শেষ পর্যন্ত বসুন্ধরা গ্রুপের কর্তৃপক্ষ ও দায়িত্বশীলরা ক্ষমা চেয়েছেন, এটা প্রশংসার যোগ্য। ছাত্রদের দাবিও মেনে নিয়েছেন। এতে পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে। সমঝোতার বিকল্প নেই। সকলকেই সংযত, সহিষ্ণু আচরণ করতে হবে।