Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

৭ মার্চের অগ্নিঝরা ভাষণ স্বাধীনতার সবুজ সংকেত

মার্চ ৭, ২০১৭, ১২:৪৬ পিএম


৭ মার্চের অগ্নিঝরা ভাষণ স্বাধীনতার সবুজ সংকেত

আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। এই দিন বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণ ছিল পৃথিবীর সেরা ভাষণগুলোর একটি। ১৮৬৩ সালের ১৯ নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন গেটিসবার্গে যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তার সঙ্গেও তুলনা করা হয় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে। ভাষণটি ছিল বহুমুখী তাৎপর্যপূর্ণ। ছিল অগ্নিগর্ভ। অত্যন্ত প্রজ্ঞাসম্পন্ন ও কুশলী। বলতে গেলে তিনি এ ভাষণে স্বাধীনতার যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন কিন্তু পরিস্থিতির আলোকে সরাসরি একথা বলেননি, ‘আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন।’ এটা ছিল সুগভীর কৌশল। একটু ঘুরিয়ে শব্দ চয়ন করে বলেছেন, ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ জনগণ যা বোঝার তা বুঝে গিয়েছিল। স্বয়ং রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছিল আমাদের জন্য গ্রিন সিগন্যাল।’ অর্থাৎ সিগন্যালটি ছিল সেনাবাহিনীর জন্য। বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষকে এ ভাষণটি যুদ্ধের জন্য মনস্তাত্ত্বিকভাবে প্রস্তুত করেছিল। স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে যুদ্ধচলাকালীন সময়ে প্রতিদিন নয় মাস পর্যন্ত ভাষণটি বাজানো হয়েছে। এতে সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাসহ সমগ্র বাঙালি অনুপ্রাণিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতির কাজ করেছে ভাষণটি। এ ভাষণে তিনি তাঁর নির্ধারিত আবেগ ব্যবহার করেছেন। পাকিস্তানের ২৩ বছরের দুঃশাসনের ইতিহাস সংক্ষেপে তুলে ধরেছেন। কীভাবে বাঙালিরা গেরিলা যুদ্ধ রচনা করবে তার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সেনাবাহিনীকে বলেছেন, তোমরা আমার ভাই, তোমরা ব্যারাকে থাকো, কেউ তোমাদের কিছু বলবে না। বলেছেন, আর আমার বুকের ওপর গুলি চালাবার চেষ্টা কোরো না। ইয়াহিয়া খানকে বলেছেন, দেখে যান কীভাবে আমার মানুষের ওপর গুলি করা হয়েছে, কীভাবে আমার মায়ের কোল খালি করা হয়েছে। তখন পাক বর্বররা সারা দেশে যে নিরস্ত্র নাগরিকদের হত্যা করেছিল তার একটি খতিয়ান তুলে ধরেছেন বঙ্গবন্ধু। দেশ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত বাঙালিদের যুদ্ধ চলবে, এ ভাষণে এমনই নির্দেশ দিয়েছিলেন। অত্যন্ত তাৎপর্য সহকারে ভাষণে বঙ্গবন্ধু ‘রক্ত’ শব্দটি একাধিকবার ব্যবহার করেছেন। ভাষণে তিনি দৃঢ়তা ব্যক্ত করার জন্য উত্তম পুরুষে উক্তি করেছেন। বলেছেন, রক্ত যখন দিয়েছি আরো দেব। বাঙালিদের কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না এ ঘোষণাটিও তিনি দিয়েছিলেন। ইতিহাস পর্যালোচনা থেকে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ সকাল থেকে চিন্তিত ছিলেন, ভাষণে তিনি কী বলবেন? অনেকে লিখিত-অলিখিত নানা ধরনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। শুধু বেগম মুজিব বলেছিলেন, ‘তোমার মনে যা আসে তাই নিশ্চিন্তায় বলে দেবা।’ তাতেই কাজ হয়েছে। এ জন্যই ভাষণটিতে ছিল স্বতঃস্ফূর্ততা। তাঁর হৃদয়ের তলদেশ থেকে উৎসারিত ভাষণটি কবিতার মতো প্রভাবসঞ্চারী হয়েছে, অলঙ্কার ও সঠিক শব্দ, ছন্দ, প্রয়োজনীয় উপমা ব্যবহার করেছেন। এ জন্য আমেরিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ সাপ্তাহিক ৭ মার্চের ভাষণকে কবিতাই বলেছেন। বঙ্গবন্ধুকে বলেছেন, ‘রাজনীতির কবি।’ বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার পর এমন একটি রাজনীতির কবিতা আমারা পেলাম বাংলাভাষায়। ‘বিদ্রোহী’ কবিতা ব্রিটিশকে বিতাড়িত করেছে। আর ৭ মার্চের ভাষণ পাকিস্তান বিদায় দিয়ে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রনায়কের ভাষণ এতবার বাজানো হয়নি। আজ প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে ভাষণটি বাংলার মাঠেঘাটে বাজানো হচ্ছে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বাঙালি ভাষণটি বাজিয়ে চলবে। এই ভাষণ শোনার পিপাসা কখনো নিবৃত হবে না। স্বাধীনতার দলিলপত্রে লেখা আছে, জিয়াউর রহমান এ ভাষণকে অস্ত্র হাতে তুলে নেবার ইঙ্গিত বলে মনে করেছিলেন। যতদিন বাংলাদেশের অস্তিত্ব থাকবে ততদিন ৭ মার্চের ভাষণ বাজতেই থাকবে। কেউ থামাতে পারবে না।