Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

৬ মার্চের উপজেলা ও পৌর নির্বাচন আশার ক্ষীণ আলো

মার্চ ৮, ২০১৭, ০৬:১০ এএম


৬ মার্চের  উপজেলা ও পৌর নির্বাচন আশার ক্ষীণ আলো

বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই গত সোমবার, ৬ মার্চ দেশের ১৪ টি উপজেলা ও ৪ টি পৌরসভার নির্বাচন শেষ হয়েছে। একটি সহযোগী দৈনিক মন্তব্য করেছে, দুই দলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও ফলাফলে এগিয়ে আছে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল। গণমাধ্যমে দিনভর দেখা গেছে নির্বাচনী পরিবশে-পরিস্থিতি। কোনো সংঘাত ছিলো না, কোনো রক্তক্ষয় হয় নি। বিএনপির এক এজেন্টকে গণমাধ্যমে বলতে শোনা গেছে, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথেষ্ঠ তৎপর ছিলো।

তারাও স্বস্তিতে ছিলো হাঙ্গামা হয় নি বলে। এরপরও যতটুকু অভিযোগ এসেছে, তা করেছেন পরাজিত প্রার্থী। এটা চিরাচরিত ব্যাপার। কেন ভোটার উপস্থিতি কম হলো, সেটা বিশ্লেষণের বিষয়। সামান্য হেরফের থাকলেও ১৪ টি উপজেলা ও ৪ টি পৌরসভা নির্বাচনেই ভোটারের উপস্থিতির হার কম ছিলো। পত্রিকার বিশ্লেষণে এসেছে, উপ-নির্বাচন বলেই ভোটাররা আগ্রহ বোধ করেনি ভোট প্রয়োগ করতে। গড়ে ৫০ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছে এই ১৪ টি উপজেলা ও ৪ টি পৌরসভা নির্বাচনে।

এই নির্বাচনের মাধ্যমে আশার আলো ফুটেছে এই অর্থে, সদ্য গঠিত নির্বাচন কমিশনের অধীনে গত ৬ মার্চ যে নির্বাচন সমাপ্ত হলো, তাতে কমিশন তাদের দায়িত্ব পালনে বিচ্যুতির পরিচয় দেয় নি। কোনো ধরনের পক্ষপাত প্রদর্শিত হয় নি। অবশ্য বড় দুই দল, তাদের সমর্থক, প্রশাসন কোনো অপচেষ্টায় অংশ নেয় নি হারজিৎ ঘটাবার জন্য। তাতেই পরিবেশ সংঘাতমুক্ত ছিলো।

ভোটাররা নিরাপদে ভোট দিতে পেরেছে। যার যেখানে প্রভাব তিনি সেখানে বিজয়ী হয়েছেন। এই নির্বাচনে কেউ কারো বিজয় ছিনিয়ে নেন নি। সিলেটের ওসমানী নগরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় বিএনপির প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। এই জয় কেউ রোধ করতে পারে নি। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বিএনপির দোদুল্যমানতার মধ্যে না থাকলে আরো ভালো ফল করতে পারতো। নির্বাচনের মাঠে হারজিৎ থাকবেই।

যদি নির্বাচন সুষ্ঠু ও পরিচ্ছন্ন হয় তাহলে আজ যারা পরাজিত হয়েছেন তারা কাল বিজয়ী হবেন। জয় পরাজয় কোনো স্থায়ী ব্যাপার নয়। এর পরিবর্তন আছে। তাই নির্বাচন ব্যবস্থাকে করতে হবে আপাদমস্তক দোষণমুক্ত। এই নির্বাচনে জবরদস্তি, ক্ষমতার অপব্যবহার হয় নি তা গণমাধ্যমেই দেখা গেছে। গত ইউপি নির্বাচনের কদাকার চিত্রও আমরা সরাসরি গণমাধ্যমে দেখেছি। সেই তুলনায় ১৮ টি আসনের নির্বাচন প্রায় পুরোটাই সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে জোর করে জয়ী হবার চেষ্টা লক্ষ্য করা যায় নি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অক্লান্ত পরিশ্রম, দেশের উন্নয়নে তাঁর শতভাগ আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং দেশকে সামনে দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে নেবার পদক্ষেপ, জঙ্গি দমনে আন্তরিকতার প্রভাব এই নির্বাচনে পড়েছে বিধায় নির্বাচনের ফলাফল সরকারের বিপক্ষে যায় নি। এই নির্বাচনেও প্রমাণিত হয়েছে, সরকারকে মোকাবেলা করার ধার বিএনপির অনেকটা ভোঁতা হয়ে গেছে। শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে অংশও নিচ্ছেন আবার বলছেন, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবেন না। এই বক্তব্যগুলো বিএনপির ভোটারদের মনে দোলাচলবৃত্তি তৈরি করছে। আলোচনায় এসেছে, কুমিল্লার পৌরসভা নির্বাচনে দুই দলের সমান লড়াই হবে।

এও জানা গেছে, কুমিল্লায় ক্ষমতাসীন দলের চেয়ে বিএনপির প্রার্থীর অবস্থান ভালো। কারণ, কুমিল্লা আওয়ামী লীগের চিরস্থায়ী দ্বন্দ্ব সূক্ষ্মভাবে রয়েই গেছে, কিন্তু বিএনপি ঐক্যে আসতে সমর্থ হয়েছে। সেখানে আগের মতো বিএনপি বিজয়ী হলে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না। ইচ্ছে করলেই এখন কোনো জনপ্রিয় প্রার্থীকে জোর করে পরাজিত করা যায় না।

আমাদের ধারণা, কুমিল্লায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সময় কোনো ধরনের উত্তেজিত ঘটনা ঘটতে পারে। কুমিল্লার পৌরসভা নর্বাচন স্পর্শকাতর অবস্থানে বিরাজ করছে। আমরা নির্বাচন কমিশনকে শক্ত ভূমিকা নেবার অনুরোধ করবো। এখানে তাদের অভিজ্ঞতা সুখকর নাও হতে পারে। তারপরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ব্যবহার করে নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে সক্ষম হবে বলে আমরা আশাবাদী। সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনেও ইসির ভূমিকা বিতর্কমুক্ত ছিলো, এটাই আশার ক্ষীণ আলো।