Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

ছাত্র রাজনীতির বন্ধ্যাত্ম জ্ঞানভিত্তিক চর্চার প্রত্যাশা

মার্চ ৯, ২০১৭, ০৫:৪৮ এএম


ছাত্র রাজনীতির বন্ধ্যাত্ম জ্ঞানভিত্তিক চর্চার প্রত্যাশা

দৈনিক আমার সংবাদে ছাত্রসংগঠনের ওপর যে প্রতিবেদনটি ছাপা হয়েছে, তার শিরোনাম, ‘আদর্শের পাঠ নেই ছাত্র সংগঠনে।’ এ কথার সত্যতা অস্বীকার করা যায় না। ছাত্ররাজনীতি দিন দিন সৃজনশীলতা হারাচ্ছে। নানাধরনের বিতর্কিত কাজে এবং অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েছে। এমন কী সঠিক রাজনীতির চর্চাও নেই ছাত্রসংগঠনগুলোতে; সংস্কৃতি চর্চাতো নেই-ই। একটি দেশের তরুণ সমাজ ছাত্ররাজনীতির দ্বারা প্রভাবিত হয়। তারুণ্যের দীপ্তিতে ঘুন ধরলে, তারুণ্যের শক্তি ক্ষয়িষ্ণুতার শিকার হলে দেশের ভবিষ্যতের ক্ষতি। অন্তত বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ রাজনীতি না করে পারবে না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে ছাত্ররাজনীতির মৌলিক ভূমিকা আছে। দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরই ছাত্ররাজনীতির অধপতন আমরা লক্ষ্য করে আসছি। দেশ স্বাধীনের পরে আমাদের ছাত্রনেতারা কেন যেন মাথা ঠিক রাখতে পারলেন না। হঠকারিতায় জড়িয়ে পড়লেন। দেশ স্বাধীনের পর ছাত্রনেতাদের হাত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সঠিক শিক্ষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, যুক্তি ও শিল্প-সাহিত্য চর্চা। সেই যে ৭ টি ছেলেকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করলো এক ছাত্রনেতা, সেই থেকে শুরু। এরপর হেন অপকর্ম নেই যার সঙ্গে জড়িত নেই ছাত্রনেতারা। দলমত নির্বিশেষে যে কোনো ধরনের অন্যায়ের প্রতিবাদ করার ক্ষমতা রাখে ছাত্রসংগঠনগুলো। কিন্তু কই? তাদের তো কোনো কার্যক্রমই দেখছি না। সহসা পত্রপত্রিকায় তাদের কোনো বিবৃতিও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এই যে পাঠ্যপুস্তক নিয়ে তর্কের তুফান চলছে, সমাজে এখনো মৌলবাদের দাপট দেখা যাচ্ছে, ধর্মের নামে জ্ঞান-বিজ্ঞান-মুক্তচিন্তাকে প্রতিহত করা হচ্ছে, কথায় কথায় প্রগতিশীল লেখকদের হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে, এ ব্যাপারে ছাত্র সংগঠনগুলোর ধারালো বক্তব্য থাকতে পারতো। কিন্তু তা নেই। আদালত প্রাঙ্গণের একটি ভাস্কর্য নিয়ে যে কুতর্ক, হুমকি চলছে তা নিয়েও ছাত্র সংগঠনগুলো যৌক্তিক বক্তব্য দিতে পারতো। প্রায় সর্বক্ষেত্রে ছাত্রসংগঠন নিরবতা পালন করছে। আমাদের জাতীয় দিবসগুলোতেও ছাত্র সংগঠনগুলোর কোনো ভূমিকা নেই। ভাবখানা এমন যে, যা করার তা ‘আপা’ আর ‘ম্যাডাম’-ই করে দেবেন। এই অন্ধ নির্ভরতা, অন্ধ স্তূতি ছাত্ররাজনীতিতে বন্ধ্যাত্ম ডেকে এনেছে। আত্মকলহ, হানাহানি আর খুনখারাবিতে জড়িয়ে পড়ছে তারা অন্ধবিশ্বাসের কারণে। অর্থাৎ পা চাটলেই বড় হওয়া যায়, যোগ্যতা অর্জনের প্রয়োজন নেই এমনই ধারণা ছাত্ররাজনীতিতে বড় হয়ে উঠেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্বাচন নেই বলেও ছাত্ররাজনীতির দীনতার অন্যতম কারণ। অতি সম্প্রতি মহামান্য রাষ্ট্রপতি ডাকসু নির্বাচনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে একটি মূল্যবান বক্তৃতা দিয়েছেন। তাঁকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। ষাটের দশকে এমন কি সত্তরের দশকের ছাত্রনেতারা বিদ্বান ছিলেন, লেখাপড়া ও জ্ঞান চর্চা করতেন। তাঁরা কেউ কেউ গবেষকও ছিলেন। ঐতিহাসিক ১১ দফার প্রণেতা ছাত্ররাই, সেই সময়ের মেধাবী ছাত্ররা। স্বাধীনতার ইস্তেহার রচনা করেছিলেন ছাতরা। আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জেলে বসে বই লিখেছেন, ক্ষুরধার কলাম লেখক তিনি। সাবেক ছাত্রনেতা সিরাজুল আলম খান তাত্ত্বিক হিসেবে পরিচিত। এই জ্ঞানভিত্তিক ঐতিহ্য আর প্রসারিত হয় নি। সমকালীন ছাত্রনেতাদের আচরণ, টাকার প্রতি লোভ, গ্রুপিং, মারামারি, খুনাখুনি দেখলে হতাশ না হয়ে পারা যায় না। ছাত্ররাজনীতির এই নৈরাশ্যজনক অবস্থা থেকে উত্তরণের প্রচেষ্টা চালাতে হবে। না হলে দেশের ক্ষতি হবে। যে বক্তব্য ছাত্রনেতারা দিতে পারবেন, যে কঠিন সত্যেচ্চারণ ছাত্রদের শোভা পায় তা মূল সংগঠনের নেতারা দিতে পারবেন না। তাই আমরা চাই ছাত্র সংগঠনগুলোতে জ্ঞান ও আদর্শ চর্চা শুরু হোক।