Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

খাদিজার হামলাকারীর যাবজ্জীবন বিচার ব্যবস্থার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

মার্চ ১০, ২০১৭, ০৬:২২ এএম


খাদিজার হামলাকারীর যাবজ্জীবন বিচার ব্যবস্থার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

সে ছিলো খাদিজার গৃহশিক্ষক, তারপর আবার সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা। প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ২০১৬ সালের ৩ অক্টোবর কলেজছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করেছিলো যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত বদরুল। যে চাপাতি সন্ত্রাসী জঙ্গিরা ব্যবহার করে, সেই চাপাতি দিয়ে নির্দয়ভাবে কুপিয়েছে বদরুল খাদিজাকে। তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিনে নারী দিবসে মহামান্য আদালত বদরুলের বিচারের রায় ঘোষণা করেছেন। রায়ে ওই বিকৃত প্রেমিক বদরুলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। হয়তো খাদিজা চিকিৎসার সর্বোচ্চ লড়াইয়ে বিজয়িনী হয়ে বেঁচে আছেন বলে বদরুল ফাঁসির দড়ির আওতায় পড়েনি। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার ইতিহাসে এটা একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকলো। বর্তমান সরকারের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগের নেতা বদরুল সরকারের অনুকম্পা স্পর্শ করতে পারে নি। দুষ্ট গোয়ালের চেয়ে শূন্য গোয়াল অনেক ভালো। শুধু ছাত্রলীগ নয়, সমগ্র ছাত্ররাজনীতি থেকে বদরুলদের মতো বিকৃত নারী লিপসুদের উপড়ে ফেলা উচিত। আদালত তার রায়ে বলেছেন, খাদিজা অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া এক জীবন্ত কিংবদন্তী নারী। প্রেমে প্রত্যাখ্যাত পাষণ্ড প্রেমিকের চাপাতির নৃশংস আঘাতে ক্ষতবিক্ষত খাদিজা দীর্ঘদিন পাঞ্জা লড়ে মৃত্যুর কাছে হেরে না যাওয়া বিশ্ব নারী সমাজের প্রতিভূ, বিজয়িনী, প্রতিবাদকারিণী। আসামীর ওপর শাস্তি আরোপের মাধ্যমে প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হাজার হাজার বদরুল ভবিষ্যতে এমন কাণ্ড থেকে বিরত থাকবে। নারী সমাজ সুরক্ষিত হবে। মহামান্য আদালতের বিশ্লেষণ মাথা পেতে নিতে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। একই সঙ্গে মনে রাখা দরকার, বর্তমান সরকার খাদিজার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করেছে বিধায় চিকিৎসকরা খাদিজাকে প্রাণপণ সেবা দিয়ে বাঁচিয়ে তুলতে পেরেছেন। বর্তমান সরকার, বর্তমান আদালত নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধেও একটি মহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। খাদিজার রায় বদরুলদের মতো নারী লিপসুদের প্রতি চরম হুশিয়ারি। সাহিত্য- সংস্কৃতি চর্চাকে যারা বিলাসিতা ভাবে, তারাও এই রায় থেকে শিক্ষা নিতে পারে। সংস্কৃতির মধ্যেই শালীনতা, সৌন্দর্য, সংযমের কথা বলা হয়েছে। যারা সংস্কৃতিবান তারা কখনো জবরদস্তি ও নিষ্ঠুরতায় বিশ্বাস করে না। তারা অপেক্ষা আর ধৈর্যে বিশ্বাস করে। প্রেমের অপর নামতো ত্যাগ। ফুল জোর করে ফোটাতে গেলে ঝ’রে যাবে তবু কোমল হয়ে ফুটবে না। বদরুলের সম্ভাবনাময় জীবনও ফুলের মতো ঝ’রে গেলো। সে ছাত্ররাজনীতিতে ভালো অবদান রাখতে পারতো। মেধাবী ছাত্র না হলে প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারতো না। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী শিক্ষক, বাঙালি বিবেকের কণ্ঠস্বর ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। বদরুলের অপকর্মজনিত ঘটনা বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার একেবারে ভেতরের দিকে তাকাবার তাগিদ দেয়। যে ছাত্রনেতা একজন ছাত্রীকে গৃহে শিক্ষাদানের দায়িত্ব নিয়েছিলো, সে কেমন করে বিশ্বাস ভঙ্গ করে, নৈতিকতা হত্যা করে তারই ছাত্রীর দিকে হাত বাড়ালো? বদরুল একা নয়, সমাজে আরো হাজার হাজার বদরুল আছে। তাদের কারো কারো কথা পত্রিকায় বা মিডিয়ায় আসছে, অনেক খবরই গোপন থাকছে। প্রশ্ন দেখা দেয়া স্বাভাবিক, দেশটা কি শুধু উড়াল সেতুর উপর দিয়ে এগিয়ে যাবে? না নৈতিক দিক থেকেও উন্নত হবে? উন্নতি কাকে বলে? দেশের যুব সমাজের চারিত্রিক, নৈতিক উন্নতি না হলে দেশের উন্নতিই হয় কী ভাবে? যে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সেই সংগঠনের নেতৃস্থানীয় একজন ছাত্র এমন জঘন্য কাণ্ড করলে সাধারণ ছাত্ররা কী করবে? বদরুল মানুষের সরল বিশ্বাসের ওপর আঘাত করেছে। ছাত্রছাত্রীরা গৃহশিক্ষক না রেখে পারবে না। সবটুকু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া যায় না। এখন সোমত্ত মেয়ের অভিভাবকরা একজন মেধাবী গৃহশিক্ষক রাখতে দশবার ভাববে। এতে ক্ষতি হলো অন্য শিক্ষা ব্যবস্থার, ক্ষতি হলো অন্য চরিত্রবান মেধাবী গৃহ শিক্ষকদের। এই অনৈতিকতার বিরুদ্ধে একটা সাংস্কৃতিক বিপ্লব হওয়া দরকার। সমাজে মানবিক মূল্যবোধ বাড়ানো দরকার। কুমিল্লার তনু হত্যা ও চট্টগ্রামের মিতু হত্যার বিচার সমাজ কাঠামোর মধ্যে আটকে আছে।