Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

বঙ্গবন্ধুর ৯৮তম জন্মদিন আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি

মার্চ ১৭, ২০১৭, ০৬:২০ এএম


বঙ্গবন্ধুর ৯৮তম জন্মদিন আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি

আজ ১৭ মার্চ, জাতির জনক, স্বাধীনতার স্থপতি, সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ বাঙালি, ‘জুলিও কুরি’- বিশ্ব শান্তির পদকপ্রাপ্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’র ৯৮তম জন্মদিন। ১৯২০ সালের এই দিনে তিনি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মবছর ও জন্মমাস ঐতিহাসিকভাবে তাৎপর্যম-িত। ১৯২০ সালে শুরু হয়েছিলো মহাত্মা গান্ধী ও মওলানা মুহম্মদ আলী- শওকত আলীর নেতৃত্বে ব্রিটিশ বিরোধী অসহযোগ আন্দোলন একই সঙ্গে খেলাফত আন্দোলন। তার প্রায় ৫০ বছর পরে বাংলাদেশে শুরু হয়েছিলো পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক অসহযোগ আন্দোলন এই মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের প্রতিটি দিন গুরুত্বপূর্ণ। ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু পৃথিবী কাঁপানো ভাষণ দিয়েছিলেন। ২৬ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের জন্মদিন আর বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন একই মাসে। বাঙালির জীবনে বঙ্গবন্ধুর আবির্ভাব সৌভাগ্যের প্রতীক। তাঁর নেতৃত্বে একটি দেশ, একটি পতাকা, একটি জাতীয় সঙ্গীত আমরা পেয়েছি। আমরা আজ প্যালেস্টাইনের নাগরিকদের মতো ভূমিহারা, ঘরছাড়া, সার্বভৌমত্ব হারা দুর্ভাগা নাগরিক নই। আমরা সম্পূর্ণ স্বাধীন দেশের গর্বিত নাগরিক। এই স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

তাঁর সারা জীবনের রাজনৈতিক এজেন্ডায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছাড়া আর কিছু ছিলো না। ১৯৪৬ সালের দিকে, ভারত ভাগের আগে শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী-আবুল হাশিমের নেতৃত্বে যে যুক্তবাংলার আন্দোলন হয়েছিলো তার উৎসাহী সমর্থক ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তারপর পঞ্চাশের দশকে চীন সফরে গিয়ে কথাশিল্পী মনোজ বসুকে বলেছিলেন- তিনি বাংলাদেশ স্বাধীন করবেন এবং সেটা হবে ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। তাঁর রাজনীতির প্রতিটি পদক্ষেপ এবং লক্ষ্যবিন্দু ছিলো স্বাধীনতাকে বাস্তব করে তোলা। এর বাইরে আর কোনো সাধনা ছিলো না তাঁর। তিনি এতটা মরিয়া ছিলেন যে বাঙালির স¦াধীনতার জন্য ষাটের দশকে ভারতের কাছে অস্ত্র সহযোগিতা চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তাঁর রাজনীতিকে আন্ডারগ্রাউন্ডে কিংবা হঠকারিতার দিকে নিয়ে যান নি। প্রতিটি বাঙালির মনে তিনি স্বাধীনতার বীজ রোপন করেছিলেন। সেই বীজ ১৯৭১ সালে বাঙালির মানসভূমিতে মহিরুহ হয়ে উঠেছিলো। বাঙালিদের তিনি ধীরে ধীরে জাগিয়ে তুলেছিলেন, ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। ৭ মার্চের ভাষণ দিয়ে বাঙালি জাতিকে সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার মনোবল তৈরি করে দিয়েছিলেন।

১৯৭১ সালে সাড়ে সাত কোটি বাঙালি তাঁর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। প্রত্যেক শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হওয়ার আগে উচ্চারণ করেছে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু। প্রত্যেক বীর মুক্তিযোদ্ধার হাতে ছিলো অস্ত্র আর বুকে ছিলো বঙ্গবন্ধু। তিনি ছিলেন ১২শ মাইল দূরে, পাকিস্তানের কারাগারে। কিন্তু তাঁর নামেই মহান মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। তিনি ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক। তাঁর নামে সরকার গঠিত হয়েছে, তাঁর অনুপস্থিতিতেই তাঁকে রাষ্ট্রপতি করা হয়েছে, তাঁর নির্দেশনাতেই বাংলাদেশের রাজধানীর নামকরণ করা হয়েছে। পাকিস্তান সরকার তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেছে। তাঁর কবর খোঁড়া হয়েছিলো। ভারতের প্রধানমন্ত্রী, মহিয়সী নারী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী তাঁর মুক্তির জন্য পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশ সফর করেছেন। ১৯৭১ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি বিশ্বজয়ী নেতার মতো শিখরস্পর্শী ভাবমূর্তি নিয়ে, বিজয়ের মুকুট পরে বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলেন। যদি ফিরে না আসতে পারতেন দেশের অস্তিত্ব বিপণ্ন হতো, গৃহযুদ্ধ লাগার সম্ভাবনা থাকতো। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের ক্ষমতা হাতে নিয়ে উল্কার মতো কাজ করেছেন। বিশ্বের অধিকাংশ দেশের স্বীকৃতি এনে দিয়েছেন। অত্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যে সংবিধান রচনা করে দিয়েছেন। দেশের শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করে দিয়েছেন। সুস্পষ্ট কণ্ঠে ঘোষণা দিয়েছেন, বাংলাদেশ হবে ধর্মনিরপেক্ষ। বঙ্গবন্ধু ছাড়া এই ঘোষণা কে দিতে পারতেন? ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে মাতৃভাষা বাংলায় ভাষণ দিয়ে বাঙালির মাথা উচুঁ করেছেন।

দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন। এই দুঃসাহস কার ছিলো তিনি ছাড়া? বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন, শোষণহীন সমাজ গড়তে চেয়েছিলেন। রাষ্ট্রক্ষমতা হাতে নিয়েই প্রাথমিক শিক্ষাকে সরকারিকরণ করেছিলেন। শিক্ষার উন্নতির জন্য একেবারে তৃণমূলে হাত দিয়েছিলেন। শিশু-কিশোরদের হাতে বিনামূল্যে বই তুলে দিয়েছিলেন। তাই বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন বাঙালির শুভদিন। তিনি সপরিবারে নিহত হয়েও আমাদের হৃদয়ে জাগ্রত আছেন, কবরে শুয়েই তিনি আমাদের পথ দেখাচ্ছেন, তিনি আমাদের প্রেরণার অনির্বাণ শিখা, তাঁর রেখে যাওয়া আদর্শ আমরা তাঁর কন্যার নেতৃত্বেই বাস্তবায়ন করে চলেছি। তাঁর ৯৮তম জন্মদিন শুভ হোক।