Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

গণহত্যার ডাকটিকিট ছড়িয়ে যাক দেশ-বিদেশে

মার্চ ১৮, ২০১৭, ০৫:৪৯ এএম


গণহত্যার ডাকটিকিট ছড়িয়ে যাক দেশ-বিদেশে

আসছে ২৫ মার্চ পালিত হবে গণহত্যা দিবস। জাতীয় সংসদে প্রস্তাব পাস হওয়ার পর প্রথম বারের মতো এবারই দিবসটি পালিত হবে। একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিলো তার স্মরণে দিবসটি পালিত হবে। একই সঙ্গে দিনটিতে মুক্তিযুদ্ধে শহিদদেরও ম্মরণ করা হবে। দিবসটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ডাক বিভাগ প্রথম বারের মতো বিশেষ একটি ডাক টিকিটের অ্যালবাম প্রকাশ করতে যাচ্ছে। সেই সময়ের গণহত্যার বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরা হবে ডাকটিকিটে। তাতে ঘটনার একটি বিবরণও থাকবে। জাতীয় গণহত্যা দিবস উপলক্ষে শিগগিরই অ্যালবামটি আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উন্মোচন করবেন। ডাকটিকিটটি বিদেশি অতিথিদেরও উপহার দেয়া যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে ডাকটিকিটের কাজ চলছে। জানা গেছে, এর ডিজাইন, লেখা, টিকিটের সংখ্যা ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করে দিয়েছেন তিনি। শিগগিরই সেগুলোর ছাপার কাজ শুরু হবে। মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন দিবস স্মরণ ও ঘটনা নিয়ে এর আগে ডাকবিভাগ থেকে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়। কিন্তু গণহত্যার ওপর কোনো ধরনের ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়নি। এ ছাড়া প্রথম বারের মতো এবারই অ্যালবাম আকারে ডাকটিকিট প্রকাশিত হচ্ছে। ১৯৭১ সালকে স্মরণীয় করে রাখতে অ্যালবামে রাখা হচ্ছে ৭১ টি ডাকটিকিট। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী তারানা হালিম বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ এবং শরণার্থীর বিষয়গুলো আমরা তিনটি ভাগে ভাগ করেছি। ওই অ্যালবামে তিন পর্যায়ের ডাকটিকিট ও বিবরণ থাকবে। গণহত্যা কেন্দ্রিক অ্যালবাম অংশে থাকবে সব গণহত্যার ছবি। ধর্ষণকা-ের ছবিগুলোয় নারীর প্রতি সহিংসতা এবং লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ ও শরণার্থীর ঘটনাক্রম নিয়ে ৭১ টি ছবির অ্যালবাম সাজানো হবে। তিনি বলেন, গণহত্যার সময় সাংবাদিকরা যে সব ছবি তুলেছিলেন সেগুলোকেই ডাকটিকিটে রূপান্তর করা হচ্ছে। প্রত্যেকটি ডাকটিকিটে সংযুক্ত ছবির ব্যাখ্যা থাকবে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায়। সর্বোপরি থাকবে একটি ভূমিকা। এবারই প্রথম ২৫ মার্চ, জাতীয় গণহত্যা দিবস পালিত হচ্ছে সে বিষয়টিও এই অ্যালবামের ভূমিকাতে থাকবে। সংকলনটি তৈরির ক্ষেত্রে মূলত কাজ করেছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার অপচেষ্টাকে রুখে দেয়া। গণহত্যা একটি স্পর্শকাতর বিষয়, মর্মাহত হওয়ার মতো ঘটনা। এ বিষয় নিয়েও বিতর্ক তোলার চেষ্টা করা হয়। এর সর্বশেষ সংযোজন হচ্ছে পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত একটি বই। পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের নির্দেশনায় লেখা হয়েছে বইটি। সেখানে নির্জলা মিথ্যাচার করা হয়েছে। এই মিথ্যাকে রোধ করার চিন্তা থেকে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস পালনের তাগিদ বাঙালির মধ্যে জেগে উঠেছে। সেই একই প্রেরণা ও দায়িত্ববোধ থেকে গণহত্যার ডাকটিকিট প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ডাকটিকিটে গণহত্যার নায়ক ইয়াহিয়া খানের সেই ভয়ঙ্কর ছবিটি থাকবে, যে ছবিটি ১৯৭১ সালে অঙ্কন করেছিলেন শিল্পী কামরুল হাসান। ছবিটির নিচে লেখা ছিলো, ‘এই জানোয়ারদের হত্যা করুন।’ এই পরিকল্পনাকে আমরা মনেপ্রাণে স্বাগত জানাই। মনে হচ্ছে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ শেষ হয় নি। এই ডাকটিকিট প্রকাশও তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধেরই কাজ করবে। আমাদের বিভ্রান্ত প্রজন্মও সজাগ হবে। আমাদের চেতনা শানিত করার কাজ করবে প্রকাশিতব্য ডাকটিকিট। আমরা আশা করছি ডাকটিকিটটি দেশ-বিদেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। প্রবাসী বাঙালিরা উদ্যোগ নিয়ে গণহত্যার ডাকটিকিট কিনে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে পারেন। এতে পাকিস্তানের নরখাদকের জান্তব চেহারা প্রকাশ পাবে। আমাদের দেশের স্বাধীনতা বিরোধীদেরও সজাগ করবে। ইয়াহিয়া খানের দানব চেহারাটি এই প্রজন্মের সামনে উঠে আসবে। আমরা চাই গণহত্যার ডাকটিকিট এবারের ২৫ মার্চেই প্রকাশিত হোক, জনগণের হাতে হাতে পৌঁছে যাক। জেগে উঠুক জনগণ গণহত্যাকারীদের বিরুদ্ধে।