Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

ভোটের টাকা নিয়ে খুনাখুনি এ খেলা বন্ধ হোক

মার্চ ২২, ২০১৭, ০৫:৪৪ এএম


ভোটের টাকা নিয়ে খুনাখুনি এ খেলা বন্ধ হোক

প্রায় অধিকাংশ পত্রিকায় এসেছে খবরটি, ‘কুসিকে ভোটের টাকা নিয়ে বিরোধে একজন খুন।’ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নগরীর ১৫ নং ওয়ার্ডের কাটাবিল এলাকায় কাউন্সিলর প্রার্থীর টাকা ভাগাভাগি নিয়ে খোরশেদ আলম (৫৫) নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করেছে সমর্থক-সহকর্মীরা। গত সোমবার বেলা সাড়ে ১১ টায় নগরীর কাটাবিল এলাকার একটি বাড়িতে এ হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটে। ১৫ নং ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী সাইফুল বিন জলিলের ভোটের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে সমর্থকদের মধ্যে কলহের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে খোরশেদ আলমকে সমর্থক-সহকর্মীরা পেটাতে থাকে। পিটুনির সময় মাটিতে পড়ে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে যে, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের ও বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের প্রচারে মুখরিত হয়ে উঠেছে মহানগরী। রাত-দিন বিরামহীন চলছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ব্যাপক প্রচার। এদিকে নির্বাচন ঘিরে জমে উঠেছে টাকার খেলাও। এ ধরনের খবর আমাদের কাছে মোটেও কাক্সিক্ষত হতে পারে না যে, নির্বাচনে টাকার খেলা চলবে। একটি খারাপ দৃষ্টান্ত আরেকটি খারাপকে ডেকে আনে। কুসিক নির্বাচনেও তাই হয়েছে। টাকা দিয়ে ভোট কেনা যেমন অন্যায় তেমনি আইন হাতে তুলে নিয়ে কাউকে পিটিয়ে হত্যা করাও ঘোর অন্যায়। যদি টাকা দিয়ে ভোট কেনার ঘটনা না ঘটতো তা হলে এমন হত্যাকা- ঘটতো না। দুটো কাজই জঘন্য অনিয়ম ও বেআইনি। সদ্য গঠিত নির্বাচন কমিশন কঠোর তৎপরতার মধ্যেই আছে। নির্বাচনে কোনো পক্ষই জাল ভোট দেবার সুযোগ পাবে না মনে করেই টাকা দিয়ে ভোট কেনার প্রবণতা জেগে ওঠা অস্বাভাবিক নয়। নির্বাচনে প্রত্যেক প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে যে কোনো উপায়ে নিজ প্রার্থীকে বিজয়ী করার রোখ চেপে যায়। কোনো প্রার্থীই নির্বাচনে ধোয়া তুলসীপাতা থাকতে পারেন না। বিজয়ী হওয়ার নেশায় পেয়ে বসে তাদের। তারা কেউ ফেয়ার নির্বাচনের চিন্তা করেন না, চিন্তা করেন যেকোনো মূল্যে ভোট সংগ্রহের। এমন ক্ষেত্রে চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে টাকার খেলা হওয়া বিচিত্র কিছু নয়। কমিল্লায় যে কমিশনার প্রার্থীর লোকজন এই ন্যাক্কারজনক হত্যাকা- ঘটিয়েছে তারা বিএনপি সমর্থক। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই, আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থীর বেলায়ও এমন ঘটনা ঘটতে পারতো। নির্বাচনে কালো টাকার খেলা বন্ধ করতেই হবে, না হলে নির্বাচনের সুষ্ঠুতা বজায় থাকবে না। আমরা মনে করি, যেকোনো নির্বাচনী এলাকায় ভালো লোকের সংখ্যা একেবারে কম নেই, তারা উদ্যোগ নিলে নির্বাচনে টাকার খেলা প্রতিরোধ করা সম্ভব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাও জনগণের সহযোগিতা নিয়ে এই কালো টাকার ভোট কেনাবেচা বন্ধ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের চেয়ে কমিশনার প্রার্থীর সমর্থকরা টাকার খেলাটা চালাবে বেশি। কমিশনার প্রার্থীর সমর্থকরাই নিজেদের মধ্যে টাকা ভাগাভাগি নিয়ে একজনকে পিটিয়ে হত্যা করে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পরিবেশ কালিমালিপ্ত করেছে। এই ঘটনাকে সতর্কবার্তা হিসেবে ধরে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ অভিযান চালাতে পারে, যাতে ফের ভোট কেনাবেচার হাট না বসে। আমরা চাই যেকোনো মূল্যে সুষ্ঠু নির্বাচন। সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে মানুষের ভোটের মূল্য থাকে না, প্রার্থীর যোগ্যতা যাচাই হয় না। কেন্দ্র দখল, জোর করে সিল মারা ও ভোটের বাক্স নিয়ে দৌঁড় দেওয়ার চেয়ে কালো টাকা দিয়ে ভোট কেনার অপরাধ কম নয়। মনে রাখা দরকার, তৃণমূলের একজন নির্বাচিত প্রতিনিধির গুরুত্ব যথেষ্ঠ। নির্বাচিত মেয়ররা কমিশনারদের ওপরই নির্ভরশীল সর্বাধিক। এলাকার জটিল সমস্যা কমিশনারদের দেখতে হয়। এলাকার উন্নয়ন হয় কমিশনাদের মাধ্যমে। সুতরাং একজন কমিশনারও যাতে জাল ভোট কিংবা কালোটাকার ভোটে জয়ী হতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করা জরুরি। অযোগ্য প্রাথ্যীরাই টাকা দিয়ে ভোট কিনে জয়ী হতে চায়। আমাদের দাবি, সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে উদ্যোগ নিয়ে নির্বাচনে টাকার খেলা বন্ধ করতে হবে।