Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

মসজিদে মাওলানাকে ছুরিকাঘাত থামাতে হবে এই দুর্বৃত্তায়ন

মার্চ ২৩, ২০১৭, ০৫:৪২ এএম


মসজিদে মাওলানাকে ছুরিকাঘাত থামাতে হবে এই দুর্বৃত্তায়ন

গতকাল ২২ মার্চ বুধবার পত্রিকায় এই ভয়ঙ্কর খবর ছাপা হয়েছে যে, চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে মসজিদের ভেতরে ঢুকে নামাজরত অবস্থায় এক বুজুর্গান মাওলানাকে ছুরিকাঘাত করে আহত করা হয়েছে। আহত মওলানা শাহ আলম নঈমী আশরাফী বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। হামলাকারী সালাউদ্দীনকে আটক করেছে পুলিশ। তার বাড়ি ও মওলানা নঈমীর বাড়ি একই ইউনিয়নে। সে গণপিটুনির শিকার হয়েছে, আহত অবস্থায় তাকেও চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত সোমবার রাত ৯ টার দিকে কারবালাটিলা নামক স্থানে ‘রহমাতুল্লিল আলামিন’ মসজিদ ও মাদ্রাসায় এশার নামাজের সময় মওলানা নঈমীকে ছুরিকাঘাত করে সালাউদ্দীন।

এ সময় নঈমী মসজিদে লুটিয়ে পড়লে উপস্থিত মুসল্লীরা সালাউদ্দীনকে পিটুনি দেন। নামাজীরা জানিয়েছেন, মাওলানা নঈমীকে ছুরিকাঘাত করার সময় আরো ২/৩ জন ছিলো সালাউদ্দীনের সঙ্গে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। সালাউদ্দীনের সঙ্গীরা হৈ চৈয়ের মধ্যে পালিয়ে যায়। এলাকার জনগণের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ তাদের শান্ত করে। জনতা সালাউদ্দীনের বিচার ও পলাতকদের আটকের দাবি করে। দুর্ববৃত্তদের গ্রেফতারের দাবিতে স্থানীয় মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষকরা মিছিল করেছেন। আহত মাওলানা শাহ আলম নঈমী অভিযোগ করেছেন, মওদুদী পন্থীরা এই হামলার সঙ্গে জড়িত। একটি সহযোগী দৈনিকে খবরের শিরোনাম করা হয়েছে, ‘ফটিক ছড়িতে মওলানাকে ছুরিকাঘাত, মওদুদী পন্থীদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ।’ আমরা জানি বাংলাদেশে কারা মওদুদী পন্থী প্রধানত জামায়াত-শিবির।

তারা যেমন বাংলাদেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারে নি, তেমনি তারা বাংলাদেশের পীর, আউলিয়া, গাউস-কুতুব, মাজার শরীফের ওলামা-মাশায়েখদেরও মানতে পারে না। সর্বজন পরিচিত, সমগ্র বাঙালি জাতির ভক্তিস্থল হজরত শাহজালালের মাজারে জামায়াত-শিবির বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। নামাজে দাঁড়ানো মুসল্লিদের হত্যা করছে মধ্যপ্রাচ্যে ও পাকিস্তানে আইএস নামক সন্ত্রাসী-জঙ্গিরা। ওদের আত্মঘাতী বোমার আঘাতে রক্তাক্ত হচ্ছে মসজিদ। ইতিহাসে আছে, ৮ম শতাব্দীর দিকে বাগদাদে আব্বাসীয়রা ক্ষমতায় এসে মৃত উমাইয়াদের হাড়গোড় কবর থেকে উঠিয়ে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে প্রতিশোধ নিয়েছে। তার একটা ইতিহাসগত পুনরাবৃত্তি চলছে মুসলিম জাহানে। প্রতিশোধের আগুন যখন মগজে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে, তখন হিতাহিত, ধর্মাধর্ম কোনো জ্ঞান থাকে না। এর মোক্ষম দৃষ্টান্ত হলো মসজিদে ঢুকে নামাজে দাঁড়ানো মুসল্লীদের হত্যা করা।

ফটিকছড়িতে মসজিদে ঢুকে ছুরিকাঘাতের রহস্যটি আপাতত পত্রিকায় আসেনি। আঘাতপ্রাপ্ত মওলানা নঈমী অভিযোগ করেছেন মওদুদী পন্থী অর্থাৎ জামায়াতীদের বিরুদ্ধে। তাঁর অভিযোগ কতটুকু বাস্তব ও তথ্যমূলক তা সাংবাদিকরা বারান্তরে বের করে ফেলবেন। তবে অনুমান করা অসঙ্গত নয় যে, পবিত্র মসজিদে ঢুকে গু-ামী করার সাহস জামায়াত-শিবির-হেফাজতীদের ছাড়া আর কারো নেই। সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, শিবিরের সন্ত্রাসীরা মাদ্রাসার পরীক্ষার সময় হাদিসের পাতা ছিঁড়ে নকল করে বাথরুমে ফেলেছে।

আর হেফাজতীরা গত ২০১৪ সালের ৫ মে তা-ব চালাতে চালাতে পবিত্র কোরআন শরীফে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এদের সাঙ্গপাঙ্গরা ছাড়া কারা এমন সাহস দেখাবে যে মসজিদে ঢুকে একজন জনপ্রিয় বুজুর্গান মওলানাকে ছুরিকাঘাত করবে? এই সম্পাদকীয় স্তম্ভে আগেও বলা হয়েছে, অতি সম্প্রতি জঙ্গি হামলার ঘটনা হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। পত্রিকায় জঙ্গিদের আস্তানার খবর ছাপা হচ্ছে প্রতিদিন। প্রধানমন্ত্রী বারবার বলেছেন, সন্ত্রাসী-জঙ্গিদের জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এখন দরকার, তৃণমূল পর্যন্ত পুলিশ প্রশাসনের কঠোর সতর্কতা। যথাযথ পদক্ষেপ। আমরা বিচার বিভাগের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই নিবেদন করবো, জঙ্গিরা যেন জামিন না পায়। ফটিকছড়ির মওলানাকে ছুরিকাঘাত করার ব্যাপারে পুলিশের যথার্থ তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।