Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

আজ গণহত্যা দিবস বিশ্ব স্বীকৃতির প্রত্যাশা

মার্চ ২৫, ২০১৭, ০৫:৩৮ এএম


আজ গণহত্যা দিবস বিশ্ব স্বীকৃতির প্রত্যাশা

আজ ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস। এই দিনটিকে গণহত্যা দিবস হিসেবে গত ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, বিশ্বের দরবারে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করবেন। জাতিসংঘেও এই দিনকে গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেবার প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পার হওয়ার পর ২৫ মার্চকে গণহত্যার দিন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছে বাঙালি জাতি। এর পেছনে কাজ করেছে পাকিস্তানি বর্তমান শাসক ও পাকিস্তানের বিভিন্ন শ্রেণির লোকজনের আচরণ। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সূত্র ধরে তারা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিরোধী কথাবার্তা বলে যাচ্ছে। অস্বীকার করে যাচ্ছে ৯ মাসের মহান মুক্তিযুদ্ধ। অস্বীকার করে যাচ্ছে তারা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত ১১ টা থেকে সকাল পর্যন্ত গণহত্যা চালিয়েছিলো। মাত্র একরাতে অর্ধ লক্ষ মানুষ হত্যা করেছিলো। অপারেশন সার্চলাইট নাম দিয়ে সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে কামান-মেশিনগান-ট্যাংক দিয়ে হত্যা করে নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রতিটি নদ-নদীর জল রক্তে রঞ্জিত করে দিতে চেয়েছিলো। তারা বলেছিলো, ‘মানুষ চাই না মাটি চাই।’ তারা আক্রমণ করেছিলো অতর্কিতে। গভীর রাতে। ঘুমন্ত বাঙালি জাতির ওপর তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। বাংলার মানুষকে তারা বিভ্রান্ত করেছিলো আলোচনার নামে। জল্লাদ ইয়াহিয়া খান আর নাটেরগুরু ভূট্টো কাউকে কিছু না বলে পেছন দরজা দিয়ে প্লেনে করে পশ্চিম পাকিস্তান চলে যান। যাওয়ার আগে সেনাবাহিনী লেলিয়ে দিয়ে যান। বাঙালি রুখে দাঁড়িয়েছিলো সেই রাতেই, প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলো। বাঙালি পুলিশ, বিডিআর, আনসার, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অস্ত্র দিয়েই আক্রমণকারী পাকসেনাদের মোকাবেলা করেছিলো। বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে তাঁরা জীবন উৎসর্গ করেছিলো। পরিস্থিতির ভয়াবহতা আঁচ করে ২৫ মার্চ বিকেল থেকে সংগ্রামী জনগণ রাস্তায় গাছ ফেলে বেরিকেড তৈরি করেছিলো। পশ্চিম পাকিস্তানে ফিরে গিয়ে ভূট্টো ও ইয়াহিয়া খান বলেছিলেন, ‘আল্লা পাকিস্তানকে রক্ষা করেছেন।’ যদিও আল্লা পাকিস্তানকে রক্ষা করেন নি। ভূট্টো-ইয়াহিয়ার যৌথ ষড়যন্ত্রে বাংলাদেশে ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা শুরু হয়। সাদা পোষাকে সি-১৩০ বিমানে পাকসেনারা ঢাকায় অবতরণ করতে থাকে এবং চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ ভর্তি অস্ত্র-শস্ত্র, গোলাবারুদসহ এমভি সোয়াত এসে নোঙর করে। রাত ১১ টা ১৫ মিনিটে ৩ ব্যাটালিয়ন ঘাতক সেনানিবাস থেকে বেরিয়ে পড়ে। নারী-পুরুষসহ সবাইকে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয় রাত ১ টা ৩০ মিনিটে। তার আগে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। সেই কালরাতে মেশিনগানের গুলিতে কানপাতা দায় হয়েছিলো। সরকারি কোনো ঘোষণা সেদিন ছিলো না। ঘুমন্ত বাঙালি জানতেই পারে নি বাংলার মাটিতে খুলে গেছে নরকের দ্বার। পাকিস্তানি হায়েনাদের কবল থেকে রক্ষা পায় নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও। তারা প্রথমে রাজারবাগ পুলিশ লাইন, এরপর একে একে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ এর চারপাশ, ধানম-ি, পিলখানার রাইফেল্স্ সদর দফতর এবং রাজধানীর সর্বত্র নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। পাশাপাশি হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে চট্টগ্রামসহ দেশের কয়েকটি বড় শহরে। আগুন ধরিয়ে দেয় গান পাউডার ছিটিয়ে পুলিশ সদর দফতর ও বিভিন্ন এলাকায়। ওই কালরাতে ড. গোবিন্দচন্দ্র দেব, ড. জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মুনিরুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৯ জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। ঢাবির জগন্নাথ হলে চলে নৃশংসতম গণহত্যার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি। এখানে হত্যাযজ্ঞ চলে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত। মেডিকেল কলেজ ও ছাত্রাবাসে গোলার পর গোলা ছুঁড়ে হত্যা করা হয় অজস্র মানুষকে। নগর জুড়েও রাতভর চলে বর্বরোচিত নিধনযজ্ঞ ও ধ্বংসের তা-ব। হতচকিত বাঙালি কিছু বুঝে ওঠার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। হানাদাররা চলার পথে রাস্তার দুই পাশে গুলি ছুঁড়ে মেরে ফেলে অসংখ্য নিরীহ, গরিব মানুষকে। দানবীয় বাহিনীর আক্রমণের বিভীষিকায় নিমজ্জিত হয় ঢাকা। কেঁদে ওঠে ঢাকার রাজপথ, অলিগলি, ফুটপাত, খেলার মাঠ, ক্যাম্পাস। মানুষের কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে আকাশ বাতাস। সে কান্না ছাপিয়ে তখন কেবলই মুহুর্মুহু গোলার শব্দ আর আগুনের লেলিহান শিখা। চারদিকে কেবল ধ্বংস, মর্মন্তুদ আর্তনাদ। মধ্যরাতেই ঢাকা হয়ে যায় লাশের শহর। দেশের বড় শহরগুলোতেও একই ভাবে অতর্কিতে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকসেনারা। তবে ২৫ মার্চের কালরাতের পর স্বজনের লাশ আর ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকেই জেগে ওঠে বাঙালির প্রতিরোধ স্পৃহা- ২৬ মার্চের প্রত্যুষ থেকে। আর পিছু হটেনি তাঁরা। বঙ্গবন্ধু তাঁর ঘোষণায় বলেছিলেন, ‘আপনারা শেষ শত্রুটি দেশ থেকে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যান।’ ঠিক তাই করেছিলো বাঙালিরা, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলার মাটি শেষ শত্রুটিও বিতাড়িত করেছিলো। আজ থেকে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালিত হবে, তাতে খুলে যাবে পাকবর্বরদের মুখোশ।