Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

এখনও শক্তিশালী জঙ্গিরা

মার্চ ২৮, ২০১৭, ০৫:১১ এএম


এখনও শক্তিশালী জঙ্গিরা

 পুুলিশ কর্মকর্তারা যা-ই বলুন না কেন, জঙ্গিরা যে হারিয়ে যায়নি এবং তারা যে এখনো যথেষ্ট শক্তিশালী, তারই প্রমাণ পাওয়া যায় সিলেটের সর্বশেষ ঘটনায়। সেখানকার একটি ভবনে জঙ্গিরা আশ্রয় নিয়েছে এমন খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার রাত ৩টা থেকে ভবনটি ঘিরে রেখেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে অভিযানে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো দলও যোগ দিয়েছে। ইতিমধ্যে ভবনে থাকা মোট ৭৮ জন বাসিন্দাকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু গতকাল রবিবার বিকেল পর্যন্ত ভেতরে থাকা জঙ্গিদের আটক বা দমন করা যায়নি। তখন পর্যন্ত তারা ভেতর থেকে নিয়মিত বিরতিতে গুলিবর্ষণ ও বোমার বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছিল।

এরই মধ্যে শনিবার রাতে ঘটনাস্থলের কাছেই জনতার ওপর বোমা হামলা চালিয়েছে বাইরে থাকা জঙ্গিরা। এতে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন এবং র‌্যাব কর্মকর্তাসহ আহত হয়েছেন ৩৫ জন। আইএস এই হামলার দায়ও স্বীকার করেছে। সংগত কারণেই সারা দেশের মনোযোগের কেন্দ্র এখন সিলেটের দিকে। মানুষ এই হামলার শেষ পরিণতি জানার জন্য রীতিমতো রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষায় রয়েছে।

সিলেটের দক্ষিণ সুরমা এলাকার এই ঘটনা অনেককেই অবাক করেছে। উত্তর সুরমা এলাকায় আগে জঙ্গি তৎপরতার কিছু ঘটনা ঘটলেও দক্ষিণ সুরমায় তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি। জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা ও শীর্ষনেতা শায়খ আবদুর রহমানও শেষ মুহূর্তে উত্তর সুরমায় এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং এখান থেকেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সে হিসেবে এলাকাটিতে জঙ্গিদের আনাগোনা থাকতেই পারে। আমাদের গোয়েন্দা বিভাগ সেসব তথ্য কতটুকু রাখতে পেরেছে বা পারছে, তা আজ প্রশ্নের মুখোমুখি। শনিবার রাতে বহিরাগত জঙ্গিরা যেভাবে হামলা চালিয়েছে, তা দেখেও গোয়েন্দা ব্যর্থতার কথাই বেশি করে উচ্চারিত হচ্ছে। ফলে জঙ্গিরা আরো হামলা চালাতে পারে এমন আশঙ্কা থেকেও মানুষ মুক্ত হতে পারছে না।

জঙ্গিদের মেরুদ- ভেঙে গেছে, তাদের আর বড় কোনো হামলা চালানোর সক্ষমতা নেই পুলিশ কর্মকর্তাদের এমন দাবি কতটুকু যৌক্তিক? আমরা দেখলাম, সীতাকু-ে জঙ্গিদের বড় আস্তানা ছিল। স্থানীয় একজন বাসিন্দার দূরদর্শিতায় সেটি ধরা পড়ে। বিমানবন্দরের সামনের মোড়ে পুলিশ চেকপোস্টে এক আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। ঢাকায় র‌্যাবের নির্মাণাধীন দপ্তরের সামনে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটেছে। এর আগে কুমিল্লায় বাসে থাকা দুই জঙ্গি ঘটনাচক্রে ধরা পড়ে যায়। কোথাও গোয়েন্দা নজরদারির নূন্যতম দক্ষতা বা সফলতা আমরা দেখতে পাই না। এমনটা কেন হবে? স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, রাষ্ট্রীয় অর্থে এত বড় গোয়েন্দা বিভাগ পালনের সার্থকতা কোথায়? আমরা মনে করি, অবিলম্বে গোয়েন্দা কর্মকা-ে জবাবদিহি বাড়াতে হবে।

এ দেশে জঙ্গি তৈরি হওয়ার মতো আবহ রয়েছে। জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষকতাও যথেষ্ট শক্তিশালী। তাই কথায় নয়, বাস্তবে জঙ্গি দমন করতে হলে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। পুলিশ বাহিনীকে আরো শক্তিশালী ও দায়িত্বশীল করে গড়ে তুলতে হবে। জঙ্গিদের অর্থের উৎস এবং তাদের কাছে অস্ত্র ও গোলাবারুদ আসার পথ বন্ধ করতে হবে। তরুণদের যারা মগজ ধোলাই করছে, তাদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। পাশাপাশি যথেষ্ট সুরক্ষা প্রদানের মাধ্যমে জনগণকে জঙ্গিদের সম্পর্কে তথ্য দিতে উৎসাহিত করতে হবে। আমরা জঙ্গিমুক্ত বাংলাদেশ চাই।