Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

খাবারে বিষাক্ত ক্রোমিয়াম: ভাবতে হবে এখনই

ডিসেম্বর ২১, ২০১৪, ০৭:০২ এএম


খাবারে বিষাক্ত ক্রোমিয়াম: ভাবতে হবে এখনই

    পানি, বায়ু, মাটি ও পরিবেশ দূষণের ফলে জনস্বাস্থ্যে যে হুমকি সৃষ্টি হয়েছে, তা প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ না থাকলে শুধু চিকিৎসা সেবা বাড়িয়ে অবস্থার উন্নয়ন সম্ভব নয়। কল-কারাখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, কৃষিতে হ্রাসায়নিকের ব্যবহার এবং পোল্ট্রি ফিড ও খাদ্যদ্রব্যের ভেজাল ও মাননীয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ক্যানসার, কিডনি, লিভারসহ যাবতীয় জটিল ও দূরারোগ্য ব্যাধির প্রকোপ অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব।
প্রতিদিন সকলটা শুরু হয় কোনো একটা দু:সংবাদ দিয়ে। নতুন নতুন দু:সংবাদ আমাদের জন্য যেন অপেক্ষা করে থাকে। গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন জাতিয় দৈনিকে এমনই এক আতঙ্কজনক খবর প্রকাশিত হচ্ছে। এবারের খবরটা যেন বেশি ভয়ংকর।  (১) মাছ-মুরগির খাবারে বিষাক্ত ক্রোমিয়াম   (২) হাঁসমুরগি আর মাছের খাবারে ক্যান্সারের উপাদান!  । জনমনে আতঙ্ক তৈরি হবার মতোই সংবাদ। আমরা মাছে ভাতে বাঙালি। প্রতিদিন, প্রতি বেলায় মাছ মাংস খেতে হয় আমাদের। হাঁস-মুরগির আর মাছের খাবারে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান ক্রোমিয়াম মাত্রাতিরিক্ত অবস্থায় আছে বলে ক’দিন ধরে যে সংবাদ ছাপা হচ্ছে তাতে ভয় হচ্ছে; ভীষণ ভয়! বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিষাক্ত উপাদানযুক্ত খাবারে বেড়ে ওঠা মাছ-মুরগি মানুষের জন্যও ক্যান্সার, কিডনি, লিভারের জটিল রোগের অন্যতম কাস্মরণ হতে পারে। অবশ্য এ বিষয়ের গবেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন ইতোমধ্যে সুস্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে, ট্যানারি বর্জ্য ছাড়া অন্য যেসব উপাদান ব্যবহার করে দেশে যে পোলট্রি ফিড তৈরি হয়, তাতে ক্রোমিয়ামের উপাদান থাকার আঁশড়খা নেই।
সে ক্ষেত্রে যেন গোটা পোলট্রি ফিডশিল্পের ব্যাপারে ভোক্তা ও উৎপাদকদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি না হয়, তাতে স্বত্বর্ক থাকা জ্বরুরি। অতীতে এ ধরনের আতঙ্কের কারণে আমাদের পোলট্রি শিল্প ধসের মুখোমুখি হয়েছিল। এর পুনরাবৃত্তি কোনোভাবে কাম্য নয়।
 এ ব্যাপারে দেশের গণমাধ্যমগুলোকেও বেশ স্বত্বর্কতার সাথে সংবাদ পরিবেষণ করতে হবে। মাছ-মুরগির খাবারে ক্রোমিয়াম! যা কিণা ক্যান্সার সৃষ্টি করে। এমন সংবাদে আতঙ্ক সৃষ্টিতো হবেই। ঢাকার হাজারিবাগ এলাকার বিভিন্ন কারখানায় তৈরি মাছ-মুরগির আর মাছের খাবারে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান ক্রোমিয়ামের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি প্রমাণ হওয়ার খবর উদ্বেগজনক সন্দেহ নেই। সম্প্রতি ভ্রাম্যমাণ আদালত রাজধানীর ক’টি পোলট্রি ফিড প্রস্তুত কারখানায় অভিযান চালায়। শেখানে প্রাপ্ত নমুনা তাৎক্ষণিক পরিক্ষায় মাত্রাতিরিক্ত ক্রোমিয়ামের উপস্থিতি পাওয়া যায়। ট্যানারি শিল্পের কাঁচামাল তথা গবাদীপশুর চামড়া, হাড়সহ অন্যান্য বিক্রয়যোগ্য উপাদানে বিপজ্জনক মাত্রায় এই উপাদানটি ব্যবহার হয়। ট্যানারি বর্জে তৈরি পোলট্রি ফিডেও রয়ে যায় এই বিষাক্ত উপাদান। ফলে কেবল পোলট্রি ফিড নয়; অন্যান্য উৎপাদনেও এই বর্জ্যের ব্যবহার এমনকি নির্বিচার নিক্ষেপ যে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষত্বিকর হতে পারে। প্রাণঘাতী প্রবণতা রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জ্বরুরি। আমরা চাই, খোদ ট্যানারি বর্জ্য ব্যবস্থাপনাতেই জোর দেওয়া হোক। পোলট্রি ফিডে ব্যবহার বন্ধের পাশাপাশি এই বর্জ্য যাতে পরিশোধন করা হয়, স্বেজন্যও চাই কড়া নজ্বরদারি ও নিয়মিতো অভিযান। এ কথাও মনে রাখতে হবে সকল পোলট্রি ফিড উৎপাদকই অসাধু নয়। আবার সকল মাছ মুরগির খামারেই বিষাক্ত ক্রোমিয়ামযুক্ত খাবার ব্যবহার করা হচ্ছে তাও না। কোনোভাবে এ নিয়ে জনমনে অতংক সৃষ্টি করা যাবে না। আতঙ্ক সৃষ্টি নয়, কেবল দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এমনকি সংবাদমাধ্যমেরও উচিত এ বিষয়টি স্পষ্ট করা যে, কেবল বিষাক্ত ট্যানারি বর্জ্য থেকে তৈরি পোলট্রি ফিডেই বিষাক্ত ক্রোমিয়ামের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি মিলেছে। একই সঙ্গে এর জন্য যাঁরা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিকল্প নেই। বড় দন্ডে লঘু শাস্তি যেন না হয়। তাতে অপরাধীরা পার পেয়ে যাবে, আবারও একই অপরাধ করতে উদ্বুদ্ধ হবে।
দেশে লাখ লাখ মানুষের ক্যান্সার, কিডনি বিকল ও যকৃৎ নষ্ট হওয়ার জন্য দায়ী এক শ্রেণির অসাধু কারখানা-মালিক। এরা মাছ-মুরগির বিষাক্ত খাবারের ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকা মুনাফা করবে আর ধরা পড়লে তাদের দিতে হয় মাত্র ১/২ লাখ টাকা। জরিমানার উপর দিয়েই সব খালাস! সামান্য দন্ড দিয়ে যদি কোটি কোটি টাকা বানানো যায়, তা হলে এ জাতিয় অপরাধতো এরা করবেই। উচ্চ আদালতের কঠোর নির্দেশ, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ব্যাপক তৎপরতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অব্যাহত অভিযানের পরও ট্যানারির বজ্র্যে পোলট্রি, ডেইরি, ফিশ ফিড তৈরির ঘৃণ্য কারবার বন্ধ হচ্ছে না। ট্যানারির বিষাক্ত বর্জ্য দিয়ে পোলট্রি, ডেইরি ও ফিশ ফিড তৈরির কারণে মাছ, মাংস, এমনকি মুরগির ডিম পর্যন্ত বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। এসব ক্ষেয়ে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে ঘাত্বকব্যাধি ক্যান্সারসহ নানা দূরারোগ্য ব্যাধিতে। পোলট্রি ফিডে শুধু যে ট্যানারির বর্জ্য ব্যবহার করা হচ্ছে তা-ই নয়, এনিথিন নামে আরও ক্ষত্বিকর একটি ওষুধ, চুনা, সোডিয়াম সালফাইডের মতো অ্যাসিড যুক্ত হচ্ছে প্রাণীর কথিত প্রোটিন ফিডে। এসবের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে পড়েছে শ্বিশুরা। চিকিৎসা-বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, কথিত প্রোটিন ফিড গ্রহণকারী গরুর খাঁটি দুধ আর পোলট্রি ডিমের মাধ্যমে অস্বাভাবিক মাত্রার ডাই-অক্সিন দেহে ঢুকে জীবন বিপন্ন করে তুলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্যানারিতে পশুর চামড়া প্রক্রিয়াজাত্বকরণে ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম, আর্সেনিক, জিংকসহ নানা রকম বিষাক্ত হ্রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহৃত হয়। এসব পদাথের্র উচ্ছিষ্ট সংমিশ্রণ করেই তৈরি হচ্ছে পোলট্রি, ডেইরি ও ফিশ ফিড। খামারগুলোতে নিয়মিতো সেই ফিড ক্ষেয়ে গরু, মুরগি, মাছ পস্মিরণত হচ্ছে বিষের কুলীতে। সেসব মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ক্ষেয়ে হুমকির মুখে পড়ছে মানুষের জীবন।
সংবাদ মাধ্যমে জেনেছি, হাঁস-মুরগি ও মাছের খাবার তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ট্যানারি বর্জ্য ব্যবহারের সুযোগকে কাজে লাগাতে রাজধানীর হাজারিবাগে গড়ে উঠেছে অনেকগুলো পোল্ট্রি ফিড কারখানা। বছরের পর বছর ধরে এসব কারখানা থেকে উৎপাদিত পোল্ট্রি ফিড ব্যবহার করছে দেশের পোল্ট্রি ও মৎস্য খামারিরা। হাজারিবাগের ট্যানারি বর্জ্য থেকে মিশ্রিত নানা ধরনের বিষাক্ত হ্রাসায়নিক পদার্থ নদীর পানি, মাটি, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের মারাত্মক দূষণ ঘটাচ্ছে বলে বলা হলেও ট্যানারি বর্জ্য থেকে উৎপাদিত পোল্ট্রি ফিডের উপাদান নিয়ে গবেষণা হয়নি এবং ক্যানসার সৃষ্টিকারী ক্রোমিয়ামযুক্ত পোল্ট্রি ও মৎস্য ফিড কারখানার বিরুদ্ধে যা বের অভিযানও এই প্রথম। তবে হাতেগোনা দু’একটি কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণই যথেষ্ট নয়।
হাজারিবাগ, রায়েরবাগসহ সারাদেশের সব পোল্ট্রি ফিড কারখানার উৎপাদিত পণ্যের মাননীয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় যে মাছ-মুরগি থাকে, তা প্রধানত আসে খামার থেকে।
 এসব খামারে ব্যবহৃত খাদ্যের গুণগত মান নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। এক শ্রেণির কারখানা ট্যানারিতে ব্যবহৃত চামড়ার অব্যবহৃত ঝুট চামড়া কুড়িয়ে এনে গুঁড়া করে মাছ-মুরগির খাবারে মেশায়। ট্যানারির চামড়ায় থাকে বেশি মাত্রায় ক্রোমিয়াম। মাছ-মুরগির প্রোটিনে সেই ক্রোমিয়াম যায়। আমরা পরম আনন্দে সেগুলো খাই। সেই সঙ্গে খাই অতিরিক্ত ক্রোমিয়াম।
 মানুষের শরীরে সহনীয় মাত্রার চেয়ে কয়েক শ থেকে কয়েক হাজার গুণ বেশি ক্রোমিয়াম আমরা না জেনে-বুঝেই খাচ্ছি। অতিরিক্ত ক্রোমিয়াম মানুষের কিডনি, যকৃৎসহ অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতি করে। ক্রোমিয়াম হল ক্রোমিয়াম (৩) -এর একটি যৌগ।



প্রক্রিয়াজাত্বকরণের সময় কিছু ক্রোমিয়াম (৩) অক্সিডাইজড হয়ে ক্রোমিয়াম (৬) এ পস্মিরণত হয়। এজন্য ট্যানারি-বজ্র্যে প্রচুর পরিমাণ ক্রোমিয়াম (৩) এবং ক্রোমিয়াম (৬) -এর উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিষাক্ত ট্যানারিবর্জ্য থেকে পোলট্রি ফিড তৈরি করা হচ্ছে। বিষাক্ত ক্রোমিয়াম মুরগির দেহের বিভিন্ন অংশে যেমন চামড়া, মাংস, যকৃৎ, হৃৎপি , মস্তিষ্ক ও হাড়ের ভেতরের লাল অস্থিমজ্জায় জমা হতে থাকে। ট্যানারিবর্জ্য থেকে তৈরি খাবার মুরগিকে দুমাস খাওয়ানোর পরে মুরগির বিভিন্ন অংশে ০.৩২ মিলিগ্রাম/কেজি থেকে ৪.৫৬ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ক্রোমিয়াম পাওয়া যায় যা মানবদেহের সহনীয় মাত্রার চেয়ে কয়েকশ গুণ বেশি। সুতরাং কোনো মানুষ যদি তার জীবনকালীন সময়ে ক্রোমিয়ামযুক্ত ১০ কেজি মুরগির মাংস ক্ষেয়ে থাকে তা হলে সহজে অনুমান করা যায় কি পরিমাণ ক্রোমিয়াম তার দেহে প্রবেশ করে এবং বিভিন্ন অঙ্গে জমা হয়ে কি ক্ষতিসাধন করতে পারে। মাত্রাতিরিক্ত ক্রোমিয়াম মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ বিশেষ করে লিভার ও কিডনিতে জমা হতে থাকে এবং একপর্যায়ে লিভার, কিডনির কার্যক্রম ব্যাহত করে জটিল রোগের সৃষ্টি করে। মানবদেহে ক্যান্সারও সৃষ্টি করে। ঢাকায় স্থানীয় গবেষকদের গবেষণায় দেখা গেছে, ট্যানারি বর্জ্য থেকে তৈরি পোল্ট্রি ফিডের প্রতি কেজিতে ৮ হাজার মিলিগ্রাম ক্রোমিয়ামের অস্তিত্ব রয়েছে। যেখানে মানবদেহে ক্রোমিয়ামের সহনীয় মাত্রা প্রতি কেজিতে .০৫ থেকে .২ মিলিগ্রাম পর্যন্ত শেখানে এই পোল্ট্রি ফিড খাওয়ানোর পর মুরগি ও মাছের মধ্যে প্রতি কেজিতে মানবদেহে সহনীয় মাত্রার চেয়ে কয়েকশ’ গুণ বেশি ক্রোমিয়াম জমা হয়। মাত্রাতিরিক্ত ক্রোমিয়ামযুক্ত মুরগি ও মাছ খাওয়ার পর মানবদেহের কিডনি, লিভারসহ বিভিন্ন অঙ্গে ক্রোমিয়াম জমা হতে থাকে এবং একসময় তা দূরারোগ্য ব্যাধির মাধ্যমে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। যে তাপমাত্রায় মাছ-মাংস রান্না হয় তাতে ক্রোমিয়ামের কার্যকারিতা নষ্ট হয় না। ক্রোমিয়াম মানবদেহ কোষের ডিএনএ’র গঠন ভেঙে দূরারোগ্য ক্যান্সারসহ জেনেটিক রোগের সৃষ্টি করে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতিবছর দেশে দেড় লক্ষাধিক মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে এবং লক্ষাধিক রোগী কার্যত বিনা চিকিৎসায়ই মারা যায়। দেশে ক্যান্সার চিকিৎসার ব্যবস্থা ও সুযোগ অত্যন্ত সীমিতো। পনের লক্ষাধিক ক্যানসার রোগীর জন্য হাসপাতালের বেড রয়েছে মাত্র ৫ শতাধিক। ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে সরকারের পরিকল্পনার কথা শোনোা গেলেও তার বাস্তবায়ন দেখা যায় নি। ক্যানসার, কিডনি ও লিভার রোগের চিকিৎসার বিশেসায়িত হাসপাতালের সংখ্যা বৃদ্ধি, উন্নত প্রযুক্তি ও সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। তবে পানি, বায়ু, মাটি ও পরিবেশ দূষণের ফলে জনস্বাস্থ্যে যে হুমকি সৃষ্টি হয়েছে, তা প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ না থাকলে শুধু চিকিৎসা সেবা বাড়িয়ে অবস্থার উন্নয়ন সম্ভব নয়। কল-কারাখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, কৃষিতে হ্রাসায়নিকের ব্যবহার এবং পোল্ট্রি ফিড ও খাদ্যদ্রব্যের ভেজাল ও মাননীয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ক্যানসার, কিডনি, লিভারসহ যাবৎীয় জটিল ও দূরারোগ্য ব্যাধির প্রকোপ অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব। তবে বাজারে থাকা সব পোল্ট্রি ফিডই বিষাক্ত ট্যানারি বর্জ্য ব্যবহার করে না। মাত্রাতিরিক্ত ক্রোমিয়ামযুক্ত, মানহীন স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে এমন পোল্ট্রি ফিড কারখানাগুলো বন্ধ করার পাশাপাশি পোল্ট্রি ফিড যেন আমদানি নিভর্র না হয়ে পড়ে সে দিকেও ক্ষেয়াল রাখতে হবে। তবে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ভেজালবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে এবং এর পরিধি আরো অনেক বাড়াতে হবে।
এটা কি ভাবা যায় পোল্ট্রি ফিডে ক্যান্সারের উপাদান! ক্যান্সার রোগের অন্যতম বীজাণু ক্রোমিয়াম মিশ্রিত খাবারেই আমাদের চারপাশে প্রতিপালিত হচ্ছে মানুষের খাদ্য তালিকার অন্যতম মাছ এবং মুরগি। বলাবাহুল্য যে, আমরা প্রতিদিন যেসব খাদ্য গ্রহণ করছি তার বেশিরভাগই বিষাক্ত কেমিক্যালযুক্ত। বিভিন্ন মাধ্যমেই এটি প্রমাণিত। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানেও খাদ্যে ভেজালের বিষয়টি গণমাধ্যমে উঠে আসে। এবার ট্যানারির বিষাক্ত বজ্র্যে তৈরি পোল্ট্রি ফিডের সন্ধ্যান পাওয়া গেল। এ প্রবণতা নিঃসন্দেহে প্রাণঘাতী, যা রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়াটাই জ্বরুরি। বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে বিএসটিআই কাজ করে বাংলাদেশে। কিন্তু বিএসটিআই কেন ঠুটোজগন্না? থ? এটি কাগুঁজে প্রতিষ্ঠান হিসেবেই আমরা জানি। কাস্মরণ এদেশে কোনো খাদ্যই ভেজালমুক্ত নয়। তা হলে খাদ্যেও মাননীয়ন্ত্রণকারী এ প্রতিষ্ঠনটি কি করছে? বাস্তবতা এই যে, প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে ভেজাল-নকল নিরোধ সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোয় স্বাস্থ্য পরিদর্শক এবং পাবলিক অ্যানালিস্টরা অর্পিত দায়ীত্ব যথাযথ পালন করেন না বলেই অভিযোগ পাওয়া যায়। অন্যদিকে ভেজাল নিরোধ করতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রতিটি জ্বেলায় খাদ্য আদালত গঠনের স্পষ্ট নির্দেশনা আছে হাইকোটের্র। সরকার একমাত্র ঢাকা জ্বেলায় একটি খাদ্য আদালত গঠন করে বসে আছে। ৬৪টি জ্বেলার ১৬ কোটি মানুষের খাদ্যের ফয়সালা এই এক আদালতে হয় কী করে? এ ক্ষেত্রে দেশের ১৬ কোটি মানুষের কাছে নির্ভেজাল খাদ্য পৌঁছে দেওয়ার লক্ষে জ্বেলায় জ্বেলায় একটি খাদ্য আদালত গঠন করতে হবে। উপজ্বেলা প্রশাসনকেও এ ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে হবে। জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি খাদ্য আদালত গঠনের কাজটি যত দ্রুত সম্ভব করা উচিত। সরকার জনস্বাস্থ্য রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নেবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা। সর্ব শেষ যাঁরা মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী এসব খাদ্যের জল্লাদদের ফাঁসি চাই আমরা।