Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

সারা বিশ্বের শিশুরা অসহায়

আগস্ট ১১, ২০১৫, ০৭:৩৪ এএম


সারা বিশ্বের শিশুরা অসহায়

    শিশু রাজন হত্যার আর্তনাদ সারা বিশ্বের বিবেকের দুয়ারে কান্নার রোল তুলেছে। এটা নাকি সভ্য যুগ! এই যুগে এমন এমন পাষন্ডেরও জন্ম হয়েছে যে একজন অসহায় শিশুকে অকারণে হত্যা করে তা আবার ফেসবুকে প্রচার করেছে। তার ভিডিও ছেড়েছে মার্কেটে। মানুষের মনে প্রশ্ন জেগেছে, ‘এ কোন অদ্ভূত আঁধার নেমে এসছে পৃথিবীতে?

শুধু রাজন নয়, বাংলাদেশে আরও অনেক শিশু অমানবিক নির্যাতনে প্রাণ হারিয়েছে। সমগ্র বিশ্বের শিশুরা আজ মারাত্মক অসহায়। ভারতের রাজধানী দিল্লিতে এক ব্যক্তি বিগত সাত বছরে অন্তত ১৫ শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যা করার পর গ্রেফতার হয়েছে। মাত্র কয়েকদিন আগে ৬ বছরের একটি শিশুও তার শিকার হয়েছে। ২৪ বছর বয়সী ওই ব্যক্তিরনাম রবিন্দর কুমার। রবিন্দ্রর কুমার মানসিক ভাবে অসুস্থ। তার ভেতরের বিকৃত বাসনা তাকে শিশু ধর্ষণ ও শিশু হত্যার প্রবণতা জাগিয়ে দিত বলে পত্রিকায় মন্তব্য করা হয়েছে।

অর্থাৎ একজন মানসিক ভারসাম্যহীন দুর্বত্তের হামলা মিয়ম মাফিক শিশুর ওপরই এসে পড়ছে। জঙ্গীরাও এক ধরনের মানসিক রোগী। তাই তারা বিকৃত মানসিকতা থেকে অকারণ উল্লাস বোধ করার জন্য নির্বিচারে শিশু হত্যা করে যাচ্ছে। পত্রিকায় এসেছে, ইরাকের ২য় বৃহত্তম মসুল থেকে ১১১ জন শিশুকে অপহরণ করেছে আইএস জঙ্গীরা। মসুলের বিভিন্ন জেলা থেকে ওই সব শিশুকে অপহরণ করা হয়েছে। এই সব শিশুদের বয়স ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে।

শিশুদের অপহরণের প্রতিবাদ করায় ৭৮ জন লোককে অপহরণ করেছে আইএস জঙ্গীরা। এক বছর আগে ইরাকের মসুল শহর আইএস দখলে নেয়ার পর ১ হাজার ৪২০ হন শি অপহরণ করেছে আইএস। নাইজেরিয়ায় বোকো হারাম নামক উগ্র, জঙ্গী সংগঠন নির্বিচারে শিশু হত্যা করে যাচ্ছে। আটক করে রেখেছে কয়েক হাজার নারী ও শিশু তাদের ক্যাম্পে। যে সব নারী বোকো হারামের ক্যাম্প থেকে পালিয়ে অন্য দেশে আশ্রয় নিচ্ছে, তারা সাংবাদিকদের কাছে শিশু হত্যার লোম হর্ষক বর্ণনা দিয়েছে। পাকিস্তানেও চলছে একই বর্বরতা।

তালেবানরা যখন মালালা ইউসুফ জাইকে হত্যা করার জন্য তার গাড়ি আক্রমণ করেছিলো তখনতো মালালা এক রকম শিশুই ছিলো। পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্তানে যে ড্রোন হামলা চালানো হচ্ছে জঙ্গী দমনের জন্য, সেখানে অনেক, অগনিত শিশু প্রাণ হারাচ্ছে। আফগানিস্তনে ও ইরাকে এ পর্যন্ত, কত শিশু প্রাণ হারিয়েছে তার পরিসংখ্যান আমরা পাইনি। পুরোনো পত্রিকার ফাইল ঘাটলে শিশু হত্যার লোমহর্ষক চিত্র বের হয়ে আসবে। সিরিয়া ও মিশরে যে গৃহ যুদ্ধ চলছে সেখানে প্রাণ হারাচ্ছে নিষ্পাপ শিশুরা।

পত্রিকায় দেখেছি, পাকিস্তানের একটি সরকারি বালক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন উড়িয়ে দিয়েছে জঙ্গীরা। আফগানিস্তান সীমান্ত সংলগ্ন নওয়াগি তেহশিলের কারাই কানাগ্রা এলাকায় রোববার এ ঘটনা ঘটে। এই পাশবিকতার জবাব কি? লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, মধ্য প্রাচ্যের যেখানে যেখানে শিয়ারা বসবাস করছে সেখানেই উগ্র-সুন্নী-আই.এস সমরাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে। সেখানেই আইএস নারী ধর্ষণ করছে এবং শিশু হত্যা করছে।

ইরাকের রাজধানী বাগদাদের উত্তরে শিয়া অধ্যুষিত দিয়ালা প্রদেশের খানবনি সাদ শহরে এব ব্যস্ত মার্কেটে শুক্রবার জঙ্গী সংগঠন আইএস কর্তৃক চালানো গাড়ি বোমা হামলায় ১২০ জন নিহত এবং ১৪০ জন আহত হয়েছে। হামলায় হতাহতের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। আইএস ও বোকোহারাম নারী ও শিশু অপহরণ করে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। অগনিত, অমানবিক সংখ্যায় শিশু মারা যাচ্ছে প্যালেষ্টাইনে, গাঁজায় উভয় পক্ষের যুদ্ধে।

বার্মায় মুসলিম নিধনের নামে রেকর্ড সংখ্যক শিশু হত্যার উৎসব লক্ষ করা যায়। সেখানে বড় চুল্লি বানিয়ে আগুন প্রজ্জলিত করে উপরে ঢেউটিন দিয়ে নবজাতকসহ ছোট ছোট শিশুদের উত্তপ্ত টিনের উপর রেখে হত্যার করুণ দৃশ্য উপভোগ করছে।

পত্রিকায় পেলাম, ইয়েমেনের রাজধানী সানায় বোমা হামলা করে ৪জন শিশুকে হত্যা করেছে আইএস। আরো ৮জন আহত হয়েছে। বাংলাদেশে শিশু হত্যা বন্ধ নেই। একটি দৈনিক পত্রিকায় জানাচ্ছে, কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় দুই মাসের ব্যবধানে আবারো দুই শিশুকে গলা কেটে হত্যা করেছে এক পিতা। গত ১৫ মে চকরিয়ার বদর খালিতে স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্যের জের ধরে ঘুমন্ত ৩ কন্যা শিশুকে গলা কেটে হত্যা করেছে আব্দুল গণি নামের এক পাষন্ড পিতা।

পিতা-মাতার কাছে যদি শিমুরা নিরাপত্তা না পায় তাহলে কোথায় তাদের নিরাপত্তা? একটা নাটকে দেখেছি এক নব দম্পতির একটি সন্তান হয়েছে। পিতা বলছে, শিশুটি কত অসহায়!একমাত্র আমরাই ওর ভরসা, ওর নিরাপত্তা! এই ছোট্ট কথাটুকুর তাৎপর্য সীমাহূন। যুদ্ধোম্মাদনার কারণে, আধিপত্যবাদের লড়াইয়ে, জঙ্গীদের ধর্মোম্মাদনার রক্তাক্ত আক্রমনে বিশ্বের শিশুরা আজ অসহায়।

মানবতার চর্চা, গণণগন্ত্রের চর্চা যেখানে পাত্তা পাচ্ছে না, সেখানেই শিশু নিরাপত্তা হারিয়ে ফেলছে। ইজরাইলের জায়নবাদীরা কি সংস্কৃতি চর্চা করে? সম্রাজ্যবাদী প্রভুরা কি সংস্কৃতি চর্চা করে? বিভিন্ন নামের ইসলামী জঙ্গীরা কি মানবতার চর্চা করে? বর্তমান জঙ্গীরাতো হিটলারের চেয়ে জঘন্য। ২য় বিশ্ব যুদ্ধে হিটলার বর্তমান জঙ্গীদের মত শিশু হত্যা করেছে, এমন তথ্য ইতিহাসে পাওয়া যায়নি।

সমাজে এখন বিকৃত পুঁজিবাদের চর্চা হচ্ছে। এক সময় বিশেষ করে ৮০র দশকে মার্কসবাদের বিকৃতি দেখা দিলে তা থেকে সুস্থ মুক্ত বাজারের কিংবা সুস্থ পুতিযোগিতা মূলক মুক্ত চিন্তা বের হয়ে আসেনি। এসেছে বিকৃত মার্কসবাদী চিন্তার বদলে বিকৃতপুঁজিবাদী সমাজ। এই বিকৃতি সমাজকে অসুস্থ করে ফেলেছে।

সমাজে শিশু হত্যার ব্যাপারটি মোটেও বিচ্ছিন্ন ব্যাপার নয়। টাকার লোভ, ক্ষমতার লোভ, জমির লোভ, আগ্রাসী মনোভাব, ক্ষমতায় টিকে থাকার লোভ সমাজের নৈতিক পাটাতন বিচূর্ণ করে ফেলেছে। তাই শিশুর নিরাপত্তা নেই।

সামাজিক অবক্ষয়ের কারণেও আমাদের দেশের শিশুরা প্রতিদিন হত্যার শিকার হচ্ছে। পত্রিকা থেকে জানা গেছে ২১ জুলাই একদল বখাটে যুবক নেশার টাকা না পেয়ে সাভারের একটি কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। ময়মনসিংহের ত্রিশালে বন পাথালিয়া গ্রামের ২য় শ্রেণির শিক্ষার্থী আট বছরে শিশু কন্যা ধর্ষন ঘটনায় পুলিশ ১৯ দিনেও গ্রেফতার করতে পারেনি ধর্ষক চান মিয়াকে।

ধর্ষিতার পরিবার জানায়, গত ২ জুলাই রাতে প্রস্রাব করতে বাইরে গেলে প্রতিবেশী আনারুল হক ওরফে ফালুর বখাটে ছেলে এক সন্তানের জনক চানমিয়া শিশুর মুখ চেপে ধরে গোয়াল ঘরের পাশে নিয়ে ধর্ষণ শেষে পালিয়ে যায়। শিশুর চিৎকারে শুনে তার মা রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে। বাংলাদেশের রাজন হত্যার পর খুলনায় রাকিব হত্যা মানুষের চোখের জল কেড়ে নিচ্ছে।

কত নৃশংস, কত জঘন্য মানসিকতা হলে একটি শিশুর পায়ুপথে হাওয়া মেশিনের পাইপ ঢুকিয়ে হাওয়া দিয়ে হত্যা করতে পারে? আর যারা নিরব দর্শক হিসেবে দেখেছে বা উপভোগ করেছে তারাই বা কোন স্তরের মানসিকতা বহন করেন আমার বুঝে আসেনা। লক্ষ্য করার বিষয় যে, মুসলিম প্রধান দেশগুলোতেই শিশু হত্যা ও শিশু ধর্ষনের ঘটনা ঘটছে অধিক হারে। এর প্রতিকার হিসেবে অবশ্যই প্রতিটি দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কঠোর পদক্ষেপ নেবার বিকল্প নেই। প্রতিটি দেশেই জঙ্গী দমনে সফল হতে হবে। একই সঙ্গে মানবিক, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চার প্রসার ঘটাতে হবে। কলাম লেখক ও গবেষক