Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

জাতীয় স্বার্থে সন্ত্রাস দুর্নীতি রোধের এখনই সময়

সেপ্টেম্বর ২, ২০১৫, ০৭:৫১ এএম


জাতীয় স্বার্থে সন্ত্রাস দুর্নীতি রোধের এখনই সময়

   রক্ষকই ভক্ষক হিসেবে যেমন আইনে দোষী তেমনি অসাধুতার আশ্রয়, প্রশ্রয় ও অমার্জনীয় অপরাধ। ইংরেজীতে একটি প্রচলিত প্রবাদ হচ্ছে-Too much anything is bad. অর্থাৎ কোন কিছুই বেশী ভালো নয়। তেমনি সীমানা লংঘনকারীকে আল্লাহ তায়ালাও পছন্দ করেন না। যখনই কোন কিছু সীমার বাহিরে চলে যায়, তখনই জনমনে বিভিন্ন প্রশ্নের সূত্রপাতও দানা বাধে। যতক্ষণ সব কিছু আয়ত্বের মধ্যে থাকে তখন দেশের মানুষ সাধারণত এগুলো নিয়ে খুব একটা মাথা ঘাতামে চায় না। মানুষ চায় শান্তি, স্বস্তি, নিরাপত্তা, গণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকার। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, অনিয়ম যখন নির্ধারিত পরিসীমা অতিক্রম করে, তখনই এগুলো নিয়ে দেখা দেয় নানামুখী প্রশ্ন ও সমাধানের যৌক্তিক পথ নির্দেশনা। দুনিয়ার যে কোন দেশে দুর্নীতি, সন্ত্রাস অবসানকল্পে শান্তি, স্বস্তি ও স্থিতিশীলতা স্থাপনের লক্ষ্যে নেয়া হয়েছে সুবিন্যস্থ কঠোর সরকারী পদক্ষেপ।

ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ হলেও, দুর্নীতি, সন্ত্রাস মাথা চড়া দিয়ে উঠলে, তদানীন্তন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী এসবের অবসান কল্পে ১৯৭৪ সালে জরুরী অবস্থা জারী করেছিলেন। জরুরী অবস্থাই বড় কথা নয়, জাতীয় স্বার্থে সরকার ভেবে চিন্তে সুচিন্তিতভাবে যদি দৃঢ় চিত্তে অন্য কোন সুদৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহন করে তাতেও জনগণ মিশ্র প্রতিক্রিয়া ঘটায় না। মোদ্দা কথা বর্তমান দেশের দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও সার্বিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে আর কালক্ষেপন না করে এখনই সিদ্ধান্ত নেয়ার মুখ্য সময় বলে দেশের জনগণ ও বিজ্ঞজনরা মনে করে থাকে। যত তাড়াতাড়ি বাস্তব সম্মত পদক্ষেপ গ্রহন করা হয় ততই মঙ্গল।

এর জন্য প্রয়োজন সরকারের দৃঢ়তা, সচেতনতা ও নিরপেক্ষতা। জ্ঞাতব্য যে, রুম জ্বলিয়া ছাড়কার নীরু বাঁশী বাজায়- এ প্রবনতা থেকে সরে আসাটাই দেশের জন্য হিতকর। বিলম্বে হলেও যতসব কিছুর জন্য জবাবদিহী সরকারকেই করতে হবে। তার জন্য দেশের অন্য কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠি ও দল কোন মতেই দায়ী নহে। সাংবিধানিকভাবে সবকিছুর ব্যর্থতার জন্য সরকারই দায়ী। অন্যদিকে সাফল্য যেমন সরকারের ব্যর্থতাও সরকারের। যারা সময়ে অসময়ে আবোল তাবোল বলে কয়ে পরিবেশকে দুষিত করে ওরা এক সময় কেটে পড়ে। যার প্রমান ইতিহাসের পাতায় অগনিত উদাহরণ হিসেবে সুস্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে।

কেউ যে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না, সেইটা ইতিহাসের শিক্ষা। That nobody takes lesson from history is itself a lesson of history. জাতীয় স্বার্থে সরকার নিজের কাঁধে দোষ নেয় তাতে অন্যায়ের কিছু নেই। দায়িত্ব থাকলে দোষ আসতেই পারে। যার দায়িত্ব নেই, তার দোষ গুণ কোনটার জন্যই জবাব দিহীতার সুযোগ নেই। কথায় বলে যার মাথা নেই, তার মাথা ব্যাথাও নেই। বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধার উপক্রম হলে, ভোক্তভোগীকেই ঘন্টা বাঁধতে হয়। অন্য কেউ এগিয়ে আসেনা বরং নীরবে নিভৃতে সাফল্য ও ব্যর্থতা চেয়ে চেয়ে দেখে। এটাই বাস্তবতা।

স্বাধীনতার পর দেশে কালোবাজারী, সন্ত্রাস ও দুর্নীতি মাথা চড়া দিয়ে উঠলে, পুলিশ, বিডিআর, সেনাবাহিনী ও সিভিল প্রশাসনে থাকা স্বত্বেও ৭২ সালে রক্ষিবাহিনী মাঠে নামিয়েও সরকার এসব কিছু থেকে পরিত্রান লাভ করতে পারেনি। ফলশ্রুতিতে ১৯৭৪ সালে লাল ঘোড়া দাবড়ানোর কথা বলে দ্বিতীয় বিপ্লবের নামে সেনাবাহিনী, রক্ষিবাহিনী, পুলিশ ও বিডিআর সমন্বয়ে জরুরী অবস্থার আদলে কম্বাইন্ড অপারেশন শুরু করে।

কালোবাজারী, দুর্নীতিবাজ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জিত হয়। বর্তমানে পত্র পত্রিকা ও মিডিয়াতে প্রতিনিয়ত যে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, খুন খারাবী, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও প্রকাশ্য ঘুষ কেলেংকারী ও সরকারী অর্থের যথেচ্ছার যেভাবে প্রদর্শিত হচ্ছে তাতে দেশের সাধারণ মানুষ থেকে আরম্ভ করে সুশীল সমাজের ধারণা, যে প্রেক্ষাপটে দেশে ৭৪, ২০০২ ও ২০০৭ এসেছিল তার চেয়ে বর্তমানে দেশের অবস্থা ভাল না।

জেলা পরিষদসহ সরকারী অফিস আদালতে প্রকাশ্যে সরকারী টাকার দেদারছে আত্মসাৎ, উন্নয়নের কাজ না করেই অর্থ আত্মসাৎ, কোটি কোটি টাকার (পাউবোর) পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থ আত্মসাৎ, হাজার হাজার টন টিআর, কাবিখার গম/চাউল লোপাট, রাস্তাঘাট, স্কুল কলেজ, মাদ্রাসার উন্নয়নের নামে বরাদ্দকৃত কোটি কোটি টাকার আত্মসাৎ, সরকারী খাস জমি বরাদ্দে সীমাহীন অনিয়ম, দুর্নীতি, সংরক্ষিত আসনের এমপির ছেলে আনন্দ ফুর্তি করে গুলি করে নীরিহ রিক্সা শ্রমিক ও জনকন্ঠের সিএনজির ড্রাইভার হত্যা, বিনা কারণে ধরে এনে সিলেট, খুলনা, কুষ্টিয়াসহ দেশের অন্যান্য স্থানে প্রকাশ্যে নির্মমভাবে কিশোর হত্যা, প্রকাশ্যে পোড়াইয়া হত্যা, অহরহ প্রকাশ্যে শ্রীলতাহানী, বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে মেয়েদের উপর ন্যাক্কারজনক ঘটনাসহ প্রতিনিয়ত একটার পর একটা ঘটনা ঘটেই চলছে। অপর দিকে একশ্রেণীর কালো বাজারী সিন্ডিকেট করে প্রতিনিয়ত নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম মনখুশীমতো বাড়িয়েই চলছে।

১০/১৫ দিন পূর্বে বিক্রী হওয়া ৩০/৩২ টাকা কেজির পিঁয়াজ এ লেখা পর্যন্ত ৬৫/৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রী হচ্ছে। বাদ পড়া মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী ও কক্সবাজারের এমপি বদিসহ অনেকের বেলাল্লাপনা কর্মকান্ড, সরকারী কর্মচারীদের দুর্নীতি আজ নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া এমপিদের পিএ এবং পিএ টু পিএদের বিড়ম্বনাও এমপিদের চেয়ে দাপট কম শুনা যায় না। তদোপরি ১০ জুলাই দৈনিক যুগান্তরে সাবেক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীর এপিএসের আমলনামার যে চিত্র বেড়িয়ে এসেছে তারপর বলারই বা কি থাকতে পারে।

ব্রাজিল, ফ্রান্স ও রোমানিয়া থেকে আমদানীকৃত কোটি কোটি টাকার নিুমানের পোকায় খাওয়া ও পঁচা গম আমদানী একশ্রেণীর লোক অফিস আদালতে নতুন করে বঙ্গবন্ধুভক্ত সেজে নিজেদেরকে রাজা ধিরাজ মনে করছে। যদিও খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য এ বাহনা বা কেমোপ্ল্যাক্স করলেও সেই সমস্ত ব্যক্তিতো বটেই, তার চৌদ্দ গোষ্ঠিও কোনদিন আওয়ামী লীগ করেনি। ওরাই আওয়ামী লীগ ঘরানার কোন ব্যক্তি অফিস আদালতে কাজের জন্য গেলেও, নিজে আওয়ামী লীগের ভুয়া রক্ষক হিসেবে অহরহ নাটক করছে এবং অনেকের নাম ভাঙ্গাচ্ছে।

তদোপরি তাদের কাছে তো সাধারণ লোকের কোন পাত্তাই নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী হিসেবে দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনেক। একটার পর একটা ঘটনা যেভাবে নিপতিত হচ্ছে এর থেকে পরিত্রান ও জাতীয় স্বার্থে এর একটা সুরাহা হওয়া দরকার বলে দেশের মানুষ আপনার নিকট প্রত্যাশা করে। ১৯৭৪, ২০০২ ও ২০০৭ এর মতো কম্বাইন্ড অপারেশন, অপারেশন ক্লিনহার্ট ও ওয়ান ইলেভেনের মতো জরুরী অবস্থাই এসব থেকে মুক্তির পথ এমন নয়। যে পন্থাতেই এহেন দুর্গতি ও দুরবস্থা থেকে জাতির মুক্তি আসে এপথই জন প্রত্যাশা।

গ্রীক দার্শনিক এ্যারিস্টটল বলেছেন, দেশের মানুষের মুক্তির জন্য, শান্তির জন্য, সংবিধান মেনে চলা কোন দাসত্ব নয়। তা মেনে চলাই বরং মুক্তির পথ। To live by the rule of the constitution on ought not to be regarded as slavery. But rather as solvation. দেশের প্রথিতযশা জ্ঞানী গুনী ব্যক্তিরাও মনে করে সংবিধানকে পাশ কাটিয়ে নয়, দেশের বর্তমান এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সংবিধানেই রয়েছে এর পথ নির্দেশ ও সুষ্ঠ সমাধানের দিক নির্দেশনা।নিকট অতীতে আইডি কার্ড, ভোটার লিস্ট, ভিজিডি কার্ড, টিআর কাবিখার সুষ্ট বিতরণ এবং এর দায়ী দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থার নজির এখনো মানুষের মন থেকে দূরে সরে যায়নি।

২০০২ সনের অপারেশন ক্লিনহার্টের সময়ের একটি ঘটনা, যা কোনদিন জীবন থেকে ভুলার নয়। তখন কিশোরগঞ্জে সেনাবাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন কর্ণেল ফরিদ আহমেদ (আর্টিলারী)। সেই সময় কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মন্ত্রীর সভাপতিত্বে সভা চলছিল। সভা চলাকালে জেলা প্রশাসকের অফিসের নীচে সেনাবাহিনীর গাড়ীর খবর পেয়েই মন্ত্রীর সভাস্থল হতে ২/৩ মিনিটের মধ্যেই একমাত্র সরকারী পর্ষদের লোকজন ও হাতে গোনা অন্যসব ৫/৬ জন বাদে কক্ষটি প্রায় খালি হয়ে গেল। এতে যা বুঝার তা বুঝতে বাকি রইল না।


আজ দেশের দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের যে অবস্থা, এসব কিছুর দানব ও রাঘব বোয়ালদের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে এমন কিছু করা উচিত যাতে দুর্নীতিবাজরা অতীতে মতো বনে জঙ্গলে নামীদামী গাড়ী ফেলে, ছালায় ভর্তি টাকার ব্যাগ রাস্তায় ফেলে জীবন বাঁচানোর পথ খোঁজে এবং সন্ত্রাসীরা জীবন বাঁচানোর জন্য আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেয়। দেশের আপামর জনগণের প্রত্যাশা ও জাতীয় স্বার্থে যত তাড়াতাড়ি দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের পথ অবমুক্তি হয়ে শান্তির সুবাতাস প্রবাহিত হয় এপথই হোক শান্তি ও স্বস্থির পথ। কোন ফাঁক ফোঁকড় জনগণের এ প্রত্যাশায় ফাটল ধরলে দুর্নীতিবাজ, কালোবাজারী ও সন্ত্রাসীরা হয়তো উল্লসে গেয়ে উঠবে পল্লীগীতির মেঠো সুর।