Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

ইলিশ মাছ সংরক্ষন করেত গণসচেতনতা জরুরি

অক্টোবর ৩, ২০১৫, ০৬:০২ এএম


ইলিশ মাছ সংরক্ষন করেত গণসচেতনতা জরুরি


ইলিশ আমাদের বেশিরভাগ মানুষের কাছে সবচেয়ে প্রিয় একটি মাছ। এ মাছের স্বাদ, গন্ধ ও বর্ণ খুবই লোভনীয়। ইলিশ ছাড়া অতিথি আপ্যায়নের বিষয় ভাবাই যায় না। বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনে ইলিশ মাছ তো অপরিহার্য।ইলিশ মাছের এত চাহিদা ও জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও এর সংরক্ষণ, পরিচর্যা ও পালনে সচেতনতাবোধ কিন্তু খুব বেশি দেখা যায় না। এটি ভাবতে অনেকেরই কষ্ট হয়।

ইলিশ মাছ নোনাপানিতে বিচরণ করে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় নোনাপানির এ মাছ স¦াদু পানিতে ডিম পাড়ার জন্য আসে। বাংলাদেশের স্বাদু পানির নদীতে ডিম পাড়ার সময় এখনই। সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে অক্টোবর মাসের আট- নয় দিন পর্যন্ত। এসময় মা ইলিশ নদীতে ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার সময় মা ইলিশ ধরা নৈতিকভাবে অনুচিত। এ মা ইলিশই হাজার হাজার ইলিশের জন্ম দেবে।

ইলিশ মাছের ডিম পাড়ার জন্য প্রায় দুসপ্তাহ বা পনের দিন সময় দেওয়া আমাদের স¦ার্থেই প্রয়োজন। এ ব্যাপারে ব্যাপক গণসচেতনতা খুবই জরুরি। এর কোনো বিকল্প নেই।ইলিশ মাছ নদী ও নদীর মোহনায় বিচরণ করে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার ও পারস্য উপসাগর এলাকায় ইলিশের বিচরণ ক্ষেত্র। তবে বাংলাদেশের স¦াদু পানির ইলিশ মাছের স¦াদ অন্য স্থানে পাওয়া ইলিশ মাছের চেয়ে অনেক বেশি।

ইলিশ তেল সমৃদ্ধ মাছ যা ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডযুক্ত। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এ মাছ গ্রহণে কোলেস্টরেল মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। পাঁচ রকমের ইলিশ মাছ পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া যায়। পৃথিবীতে যত ইলিশ ধরা হয় তার ৫০-৬০ শতাংশ বাংলাদেশেই আহরণ করা হয়। ভারত ও পাকিস্তান আহরণ করে ১৫-২০ শতাংশ। বাকি ৫-১০ শতাংশ আহরণ করে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, চীন, ভিয়েতনাম ও শ্রীলংকা।

পৃথিবীর যে সব দেশে ইলিশ পাওয়া যায় তার মধ্যে বাংলাদেশের ইলিশই উৎকৃষ্ট মানের। এর স¦াদ ও গন্ধ অতুলনীয়। এ মাছ আহরণে পাঁচ লাখ মৎসজীবী সরাসরি জড়িত। এছাড়া এ ব্যবসায়ের আয়ের সাথে সম্পৃক্ত পরোক্ষভাবে ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ।

বাংলাদেশের মাছের রাজা ইলিশ সংরক্ষণ, পরিচর্যায় আমাদের জেলেদের সচেতনতা বাড়ানো খুবই জরুরি। সরকার ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ আহরণ ও বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এটি মেনে চললে জেলেদের উপকার হবে। মাত্র পনের দিনের ধৈর্য্য ও সহনশীলতা তাদের এ পেশায় লাভবান করতে সহায়তা করবে।

অসহিষ্ণু ও ধৈর্য্যহারা হলে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন কমে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রজনন মৌসুমে ইলিশের বংশ বিস্তারে সহায়তায় জেলেদের ও এখাতে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গকে সততার সাথে কাজ করতে হবে। নৌবাহিনী, কোষ্টগার্ড, নৌ-পুলিশ, র‌্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী, জেলা প্রশাসন এবং মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাদের নজরদারি ছাড়াও মৎস্য ক্রেতা, বিক্রেতা ও সাধারণ ভোক্তাদের মধ্যে এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে হবে। মাত্র পনের দিনের নিষেধাজ্ঞা পালন করলে পরবর্তী সময়গুলোতে ইলিশের আকাল দেখা দেবে না - এটি সংশ্লিষ্ট সকলকে উপলদ্ধি করতে হবে।

ইলিশের জনপ্রিয়তা এখন যেমন আছে ভবিষ্যতেও তেমনি থাকবে। এর সহজ প্রাপ্যতা বজায় রাখতে জেলে, ক্রেতা, বিক্রেতা, মৎস্য কর্মকর্তাসহ সবাইকে আরো সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এটা আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতারই অংশ। ইলিশ বাংলাদেশের সেরা মাছ, এটি যেন হারিয়ে না যায় সে দিকে সকলকে খেয়াল রাখতে হবে। আসুন, ইলিশ সংরক্ষণে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার প্রতি সকলে শ্রদ্ধাশীল হই।