Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

কুমারখালীতে মেলার নামে চলছে রমরমা অবৈধ লটারি বাণিজ্য 

কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি

কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি

মে ১৬, ২০২২, ০৬:০৪ পিএম


কুমারখালীতে মেলার নামে চলছে রমরমা অবৈধ লটারি বাণিজ্য 

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে গ্রামীণ মেলার অনুমতি নিয়ে এসে চলছে রমরমা র‌্যাফেল ড্র লটারি ব্যাণিজ্য। মেলা শুরুর দিন থেকেই চলছে এই অবৈধ র‌্যাফেল ড্র এর নামে ডেইলি লটারি ব্যবসা। এই অবৈধ র‌্যাফেল ড্র এখন এই মেলার মূল বিষয়ে পরিণত হয়েছে। চটকদার সব বিজ্ঞাপন প্রচার করে এবং মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন রকম পুরস্কারের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রকাশ্যে পিকআপ, ব্যাটারিচালিত ভ্যান, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে করে শতাধিক লাটারি বিক্রেতা কুমারখালী উপজেলা পাশ্ববর্তী খোকসা উপজেলা, রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামসহ কুমারখালী পৌর এলাকা চষে বেড়াচ্ছে র‌্যাফেল ড্র এর লটারি বিক্রি করতে। 

চটকদার এসব বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হয়ে মোটরসাইকেল, সাইকেল, টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন রকম পুরস্কার পাওয়ার আশায় গ্রামের নিরীহ নারী পুরুষ প্রতিদিনই এই লটারি কিনছেন। এভাবেই র‌্যাফেল ড্র এর নামে প্রতিদিন সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন মেলার আয়োজক ও র‌্যাফেল সংশ্লিষ্টরা। এতে আর্থিকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্খ হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ। 

এর আগে এই মেলা থেকেই র‌্যাফেল ড্র এর লটারি বিক্রি করে পুরস্কার না দিয়ে রাতের আঁধারে ১০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালানোর অভিযোগ রয়েছে একটি র‌্যাফেল ড্র কোম্পানির বিরুদ্ধে। এর পর বেশ কয়েক বছর র‌্যাফেল ড্র বন্ধ থাকলেও করোনা মহামারির নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর আবার গ্রামীণ মেলার নামে র‌্যাফেল ড্র এর আয়োজন করেছে এই মেলার আয়োজকরা। 

এদিকে কয়েকদিন ধরে গ্রাম, শহর ও শহরের আশে পাশের মোড়ে মোড়ে প্রকাশ্যে পিকআপ, ব্যাটারিচালিত ভ্যান, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক থামিয়ে মাইকে বিজ্ঞাপন প্রচার করে জান র‌্যাফেল ড্র নামের অবৈধ এসব দৈনিক র‌্যাফেল ড্র এর লটারি বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া এই র‌্যাফেল ড্র এর লটারির ড্র অনুষ্ঠান প্রতিদিন সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে কুষ্টিয়ার কেবল টিভি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। কিন্তু এসব অবৈধ কর্মকান্ড প্রকাশ্যে চললেও জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের নিরব ভূমিকা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের চাপাইগাছি এলাকায় চলছে ঐতিহ্যবাহী চাপাইগাছি গাজী কালু চম্পাবতীর মেলা। মেলার পেছনের দিকে র‌্যাফেল ড্র এর মঞ্চে সাজিয়ে রাখা হয়েছে টিভি ফ্রিজ, মোটরসাইকেলসহ নানা রকম পুরস্কার। মাইকে লাগাতার বিভিন্ন চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এই মঞ্চের সামনেই টেবিল চেয়ার পেতে গোল গোল বাক্স নিয়ে লটারি বিক্রি করছেন একাধিক লটারি বিক্রেতা। এখান থেকে লটারি কিনছেন শিশুসহ অনেকেই। মেলার প্রবেশ মুখের অদূরে চারদিক টিনদিয়ে ঘিরে যাত্রা মঞ্চও নির্মাণ করা করা হয়েছে। ওই খানে আপাততো চলছে কৌতুক, প্রস্তুতি চলছে আিশ্রল নৃত্যের আয়োজনের দুই একদিনের মধ্যে সুযোগ বুঝেই শুরু হবে সেসব নৃত্য। যাত্রা মঞ্চের ঠিক পেছনেই একটা জায়গা বানানো হয়েছে খরগুটি (জুয়া) খেলার জন্য সেটাও সুযোগের অপেক্ষায় প্রস্তুত রয়েছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক লটারি বিক্রেতা জানান, জান ভাই নামে এক ব্যক্তি এই লটারি কোম্পানির মালিক যেখানেই এসব মেলা হয় সেখানকার আয়োজকরা একটা চুক্তির মাধ্যমে লটারি কোম্পানিকে ডেকে নিয়ে যায়। র‌্যাফেল ড্র এর লটারি বিক্রি টাকার ভাগ মেলার আয়োজক ও লটারি কোম্পানি ভাগাভাগি করে নেয়। চাপাইগাছি গাজী কালু চম্পাবতীর মেলায় এবার ১৩৩জন লোক লটারি বিক্রি করছেন। তাদের প্রতিজনকে প্রতিদিন ৫শ টাকা মজুরি ও ২৭০ টাকা খাবার জন্য এবং ভ্যান ভাড়া বাবদ ৭০০ টাকা দেওয়া হয়। প্রতিটি বিক্রেতার হাজিরাসহ ভ্যান বা যানবাহন মাইক ভাড়া মিলিয়ে প্রতিটিতে ১৭ থেকে ১৮শ টাকা করে খরচ পরে। তাদের প্রতিটি ভ্যান বা যানবান থেকে প্রতিদিন ৩ থেকে ৫ হাজার টাকার লটারি বিক্রি হচ্ছে। কেউ কেউ এর চেয়ে অনেক বেশি টাকারও লটারি বিক্রি করেন। 

এ ব্যাপারে মেলা কমিটির সভাপতি মিজান বলেন, আমরা মেলার অনুমতি নিয়েই মেলা চালাচ্ছি।
র‌্যাফেল ড্র এর ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন লটারি চালানোর ব্যাপারে আমাদের নাও করেনি হ্যাও করেনি। ডিসি অফিস থেকে আমাদের আনঅফিশিয়াল অনুমোদন দিয়েছে। অবৈধ র‌্যাফেল ড্র ডিসি অফিস থেকে আনঅফিশিয়াল অনুমোদন দিলো কি করে বললে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন আপনি আসেন সরাসরি বসে কথা বলি।

এব্যাপারে কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মন্ডল বলেন, মেলা কমিটি অনুমোদনের আবেদন করেছিলো ডিসি অফিস সম্ভবত অনুমোদন দিয়েছে। মেলার লটারির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওদের আবেদনে হয়তো উল্লেখ ছিলো। আবেদনের কপিটা এখন আমার হাতে নেই। তবে মেলার অনুমোদনটা আছে। অবৈধ র‌্যাফেল ড্র এর লটারি সরকারিভাবে যেটা নিষিদ্ধ সেটার অনুমোদন ডিসি অফিস কি দেবে এমন প্রশ্নের জবাবে ইউএনও বলেন আমি একটা প্রোগ্রাম আছি আমি অবশ্যই এটা দেখবো। কি হচ্ছে এবং এটা কিসের অনুমোদন।

আমারসংবাদ/কেএস 

Link copied!