Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

নেত্রকোনায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণের মাস্টাররোলে নয়ছয়

নেত্রকোনা প্রতিনিধি

নেত্রকোনা প্রতিনিধি

মে ১৬, ২০২২, ০৬:৫৩ পিএম


নেত্রকোনায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণের মাস্টাররোলে নয়ছয়

কাগজে-কলমে (অফিসিয়ালি) উত্তোলন-বিতরণ সম্পূর্ণ দেখানো হলেও নেত্রকোনার মদনে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০টাকা দরের ৩০ বস্তা চাল মিলল ডিলারের গুদামে।

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সদস্যরা  এ কর্মসূচির ডিলারের গুদামে ৩০ বস্তা চালের সন্ধান পায়। খবর পেয়ে উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. শাহনুর রহমান চালের বস্তাগুলো ইউনিয়ন পরিষদ চেয়াম্যানের হেফাজতে রাখেন। এসব চাল ১০টাকা দরে জনপ্রতি ৩০ কেজি করে দুস্থ্য কার্ডধারী উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণ করার কথা।

ওই ডিলারের নাম মো. ছদ্দু মিয়া। তিনি মদন উপাজেলার কাইটাল ইউনিয়নে বটতলা কেন্দ্রের খাদ্যবান্ধব কমর্সূচির ভারপ্রাপ্ত ডিলার। এছাড়া একই ইউপির বাড়রি কেন্দ্রর ডিলারও তিনি।

এদিকে মার্চ মাসের মাষ্টাররোল হাতে পেয়েছেন বলে জানান উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ মো. রুবাইদ রানা। আর ডিলারের ছেলে মেহেদি হাসান জানায় মার্চ-এপ্রিল দুই মাসের মাষ্টাররোলই এখনো জমাই দেননি।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ডিলারের লোকজন ভুয়া মাষ্টাররোল তৈরিতে তার ছেলে মেহেদি হাসান ভুয়া টিপসহি নেওয়ার কাজটির দেখভাল করেন। তাছাড়া খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকায় রয়েছে মৃত ব্যক্তির নাম, এক পরিবারে একজনের স্থলে স্বামী-স্ত্রী দুজন কার্ডধারী, নিখোঁজ ব্যক্তিসহ অনেকে গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন পেশায় ঢাকায় থাকেন তাদেরও নাম রয়েছে। আবার অনেকে জানেন না এ তালিকায় তাদের নামও আছে। এনএসআই এর অভিযানের পরে এলাকাবাসীর মনে কৌতুহল ও ঘুরপাক খাচ্ছে এসব ব্যক্তিদের ১০টাকা দরে জনপ্রতি ৩০ কেজি চাল কোথায় বা কে নিচ্ছেন?

কাইটাইল ইউপি আওয়ামী লীগের সভাপতি লিয়াকত আলী জানান, কার্ডধারী অনেকে চাল পায় নাই। জেনেদা, বিল্লাহসহ আরো অনেকে আমার কাছে বিচার দিয়েছে। এছাড়া মানিক রবিদাস, বেবি আক্তার, হযরত আলী, মো. সবুজ মিয়া, সোলেমা আক্তার, মো. তাহের ফকির, মোসা. সজিদা, বেদেনা আক্তার, হাজেরা খাতুন, ববিতা রানী, বিউটি রবিদাস এরা নাকি জানে না তাদের নামে কার্ড হয়েছে। বেবি আক্তার-রতন মিয়া দম্পত্তির দুজনের নামে কার্ড ইস্যু হলেও একজন পায় আরেকজন পায় না।

নাম না প্রকাশে ওই ইউপির বাড়রি গ্রামের একজন বলেন, মাষ্টাররোলে একশোর মতো উপকারভোগী টিপসহি ঠিক থাকলেও অধিকাংশ টিপসহি অন্যের দেয়া। এ কাজটি তার ছেলে মেয়েদি হাসান করে থাকেন নিজে বা অন্যান্যের মাধ্যমে। জয়পাশা গ্রামের ওয়াফিজ মিয়া, দিলোয়ারা আক্তার ও সালাম মিয়া। কেশজানী গ্রামের রমজান মিয়া, শিবাশ্রম গ্রামের গোলাম ফারুক এবং কার্ডধারী সিদ্দিক মিয়া, সিরাজ মিয়া, গনি মিয়া এরা প্রায় এক-দুই বছর আগে তারা মারা গেছেন। কিন্তু তালিকায় ও মাষ্টাররোলে তাদের নাম রয়েছে। আব্দুল মিয়া, চঞ্চলা রানী বিশ্বাস, পারভীন আক্তার, সাইকুল ইসলাম তারা এক-দুই বছর ধরে গার্মেন্টসসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে কাজ করেন ও সেখানে অবস্থান করেন। ৬৫৫নং কার্ডধারী সীমা রানী দে স্বামী লিমন চন্দ্র দেসহ রাজধানীতে থাকায় তার শ্বাশুড়ি এত দিন কার্ড দিয়ে চাল নিতেন। কিন্তু গত মাসের চাল তিনি পাননি।

আলমগীরের কার্ড প্রায় দুই বছর হয় হারিয়ে গেছে, নতুন কার্ড তিনি পাননি। মাষ্টাররোলে এসকল সুবিধাভোগী সকলের নাম আছে। কার্ড থাকা সত্ত্বেও হালেমা আক্তার, মাজেদা আক্তার, আলেহা আক্তারসহ আরো কয়েকজনকে আজ না কাল করে করে ঘুরিয়েছে ডিলার। শেষে বলে চাল গুদামে জমা হয়ে গেছে। দেবেন্দ্র ভৌমিকের প্রতিবন্ধী ছেলে অজিত ভৌমিকের স্ত্রী তিন-চার মাস আগে মৃত্যুর পর এখন নিখোঁজ। গেল মাসে সেও চাল নেয়নি। মাস্টাররোলের টিপসই যাচাই করলেই সব অনিয়ম বের হয়ে যাবে।

খাদ্যগুদামের দারোয়ান শাহীন অফিসের কাগজপত্র নিয়ন্ত্রণ করেন। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, ছদ্দু মিয়ার ডিলারের সম্পূর্ণ বিতরণ আনুমানিক গত মাসের (এপ্রিল) শেষ দিকে দেখানো হয়েছে। ৩০ বস্তা চালের বিষয়ে তিনি বলেন, সব চাল অফিসিয়ালি বিতরণ দেখানো আছে। আনঅফিসিয়ালি থেকে যেতে পারে। জানা সত্বে গোডাউনে কোন চাল ফেরত আসতে দেখিনি।

সহকারি কৃষি কর্মকর্তা ও ট্যাগ অফিসার মো. দিদারুল আলম জানান, অনিয়ম হয় নাই। এপ্রিল মাসে ৩৬৯ জনের মধ্যে না নেয়ায় ৩০ বস্তা রয়ে গিয়েছিল। ওইদিনই খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও ইউএনও দুজনকেই জানিয়ে দিয়েছি। মার্চ মাসে ৩৬৯ জনের সম্পূর্ণটাই উপকারভোগীদের মাঝে বিক্রি হয়েছে।

ডিলারের ছেলে মেহেদি হাসান টিপসহি বিষয়ে বলেন, ‘এটা কি সম্ভব। ভূক্তভোগীদের মাল না দিয়ে কি টিপসহি নিতে পারবেন। যারা চাল নিয়েছে তাদের নামেই মাষ্টাররোল জমা দিই।’ 

গত মার্চ মাসের শতভাগ মাষ্টাররোল উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিসে জমা দিয়েছন কিনা ও এপ্রিল মাসে ৩০ বস্তা চাল থাকলো কীভাবে এ প্রশ্নে তিনি বলেন,‘ যেটা না নেয় সেটা অন্যজনকে দিয়ে দেই।’ 

কার্ডের বাইরে অন্যজনকে দেয়া যায় কিনা জবাবে তিনি জানান, ‘এ চাল জীবনভর পড়ে থাকবে নাকি। এ ব্যাপারে খাদ্য নিয়ন্ত্রক যেভাবে নির্দেশ দেয় সেভাবে আমরা কাজ করি।’ তবে মার্চ মাসের মাষ্টাররোল এখনো জমাই দেইনি। মাস্টাররোল খুঁজে পাচ্ছি না। ’

উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক রুবাইদ রানা এ বিষয়ে জানান, ‘৩০ বস্তা চাল ব্যাপারে আমরা অবগতি আছি। মার্চ মাসের মাষ্টাররোল হাতে পেয়েছি বিধায় এপ্রিল মাসের বরাদ্দ ইস্যু করা হয়েছে। তবে এপ্রিল মাসের মাষ্টারোল ঈদ পরবর্তীদের ছুটির কারণে এখনো হাতে পায়নি।’ 

কার্ডধারী উপকারভোগীর বাইরে অন্য কারো কাছে বিতরণ করা যায় কিনা এমন প্রশ্নে তিনি জানান, ‘কার্ড ব্যতিত অন্য কাউকে দেওয়ার নিয়ম নেই।’

আমারসংবাদ/কেএস 

Link copied!