Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

গিরিশ চন্দ্র সেনের ভিটেবাড়ি বেদখল

সালমা সুলতানা, নরসিংদী 

সালমা সুলতানা, নরসিংদী 

মে ১৭, ২০২২, ০২:২৬ এএম


গিরিশ চন্দ্র সেনের ভিটেবাড়ি বেদখল

ভুয়া আত্মীয়-পরিজন সেজে এবং এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী মহল ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে গিরিশ চন্দ্র সেনের ভিটেবাড়িসহ যাবতীয় সম্পত্তি দখল করে নিয়েছে। এ মহৎ মানুষটির স্মৃতি রক্ষায় নেই কোনো উদ্যোগ। তার মৃত্যুর ১১২ বছর পরও তার জন্মস্থানে এ পর্যন্ত কোনো স্মৃতি ফলকও নির্মিত হয়নি। 

যারা তার স্মৃতিকে ধরে রাখার সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন তাদের অনেকেই আজ প্রয়াত। একটি গোষ্ঠী তার যাবতীয় স্মৃতি মুছে ফেলতে তৎপর বলে অভিযোগ রয়েছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, তার স্মৃতিচিহ্ন বলতে এখন শুধু রয়েছে ১.৩৬ শতাংশ বসত বাড়ির ভিটায় প্রায় সাড়ে তিনশ বছরের পুরোনা ভাঙা দু-তলা ভবনের বাড়ির কিছু ইটের চিহ্ন। 

পবিত্র কোরআনের প্রথম বাংলা অনুবাদকারী গিরিশ চন্দ্র সেন ১৮৩৪ সালে নরসিংদী সদর উপজেলার মেহেরপাড়া ইউনিয়নের পাঁচদোনা গ্রামের একটি সম্ভ্রান্ত হিন্দু সেন পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯১০ সালের ১৫ আগস্ট ৭৬ বছর বয়সে তিনি পরলোকগমন করেন। 

গিরিশচন্দ্র সেন পরিচিতি শীর্ষক একটি সংকলন থেকে জানা যায়, সুদীর্ঘ ছয় বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে ১৮৮৬ সালে গিরিশচন্দ্র সেন পবিত্র কোরআন শরিফ বাংলায় অনুবাদ ও তা প্রকাশ করেন। এই কারণে তৎকালীন আরবি শিক্ষক, মৌলভি ও মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকজন গিরিশ চন্দ্র সেনকে মাওলানা রূপে আখ্যায়িত করেন। মাওলানা গিরিশ চন্দ্র সেন আরবি, ফার্সি ও উর্দু ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। তার প্রকাশিত ৩৫টি গ্রন্থের মধ্যে ২২টি ইসলাম ধর্মবিষয়ক এবং ১৩টি নববিধান বিষয়ক ধর্ম পুস্তক রচনা করেন। 

গিরিশ চন্দ্র সেনের পিতা মাধব রায় সেন ছিলেন নবাব আলীবর্দী খাঁর দেওয়ান দর্পনারায়ণ রায়ের বংশধর। গিরিশ চন্দ্র সেন ছিলেন তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ। তার বয়স যখন ১০ বছর তখন তার পিতা মাধব রায় সেন মারা যান। 

সরেজমিন পাঁচদোনা গ্রামে গিরিশচন্দ্র সেনের ভিটেবাড়ি দেখতে গিয়ে তার বাড়ি সংলগ্ন মেহেরপাড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে জানা যায় যে, তার স্মৃতি চিহ্ন বলতে এখন শুধু আছে ১.৩৬ শতাংশ বসতবাড়ির ভিটির দোতলা বাড়ির ভাঙা সাড়ে তিনশ বছরের পুরাতন ইটের চিহ্ন। 

নরসিংদী সদর মানবাধিকার বাস্তবায়নের সভাপতি ও ভাই গিরিশচন্দ্র সেনের কেন্দ্রীয় গণপাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক মো. মানছার হোসেন রবিন দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন, ‘প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা কেন্দ্র ঐতিহ্য অন্বেষণের মাধ্যমে তার স্মৃতিরক্ষা, সংস্কার ও একটি প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর নির্মাণের জন্য ভারতীয় হাইকমিশন থেকে এক কোটি ২০ লাখ টাকা এবং বাংলাদেশ সরকার ৩০ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করেন প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা কেন্দ্রকে। প্রায় সাড়ে তিনশ বছরের পুরোনো ইটের ভাঙা ছবিটি দেখলেই বুঝা যাবে এখানে কি ধরনের কাজ হয়েছে। বরাদ্দকৃত এক কোটি ৫০ লাখ টাকার কাজ কে বা কারা কিভাবে করেছেন শুধুমাত্র তারাই জানেন। 

এলাকার কোনো ব্যক্তি বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য জানা সম্ভব হয়নি। সবচেয়ে আশ্চর্য্যের বিষয় হচ্ছে, তার নামের সাইনবোর্ডটিও বর্তমানে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পার্শ্বে দীর্ঘদিন ধরে ভেঙে পড়ে রয়েছে। দেখার কেউ নেই। গিরিশ চন্দ্র সেনের ভিটেবাড়ির প্রায় শতাধিক শতাংশ জমি রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে রয়েছে মাত্র ১.৩৬ শতাংশ জমি। বাকি যাবতীয় সম্পত্তি তার আত্মীয়-পরিজন সেজে ও স্থানীয় প্রভাবশালী মহল ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে অবৈধভাবে  দখল করে নিয়েছে। 

গিরিশচন্দ্র সেনের বাড়ি সংলগ্ন উদ্যোক্তা গিরিশ ভবন সংরক্ষণ ও গিরিশচন্দ্র সেন জাদুঘর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও গিরিশ চন্দ্র সেন কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির গবেষক খন্দকার ফয়সাল আহমেদ জানান, উপমহাদেশের প্রখ্যাত এই ব্যক্তির জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী যেন সরকারিভাবে পালন করা হয়। 

তার স্মরণে প্রতি বছর ক্ষুদ্র আকারে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হলেও যারা তার স্মৃতিকে ধরে রাখায় সক্রিয় ছিলেন তারা সবাই আজ প্রয়াত। এলাকাবাসীর দাবি, গিরিশ চন্দ্র সেনের যাবতীয় সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য উচ্চপর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা এবং তার স্মৃতি রক্ষার জন্য একটি পাঠাগার, ভবন সংস্কার এবং সীমানা প্রাচীর ও কিছু প্রদর্শনী স্থাপন করা হোক।

Link copied!