Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

আশ্রয়কেন্দ্রে পানি ঢুকে দুর্ভোগ

মুহাজিরুল ইসলাম রাহাত, সিলেট ব্যুরো 

মুহাজিরুল ইসলাম রাহাত, সিলেট ব্যুরো 

মে ২০, ২০২২, ০৬:৪৭ এএম


আশ্রয়কেন্দ্রে পানি ঢুকে দুর্ভোগ

সিলেটে গত দুইদিনে বৃষ্টি কমলেও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সুরমা, কুশিয়ারা, সারিসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি এখনো বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

গতকাল জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলেও অধিকাংশ উপজেলায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সিলেট শহরেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে বন্যাকবলিত এলাকার বাসিন্দাদের। 

প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের নদী ও হাওরের পানির উচ্চতা গত বুধবার সকাল থেকে দুই ইঞ্চি বেড়েছে। গতকাল বিকেল পর্যন্ত নগরীর অন্তত ৩০টি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জেলার ১৩টি উপজেলায়ও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বন্যায় জেলা ও নগরীতে প্রায় ১২ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

এদিকে বন্যার কারণে বিভিন্ন উপজেলা ও সিলেট নগরীর কয়েকটি এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে প্রায় ১১.৫ লাখ গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় বিপিডিবির দুটি উপকেন্দ্র ও পল্লী বিদ্যুতের দুটি উপকেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় সিলেটের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের কয়েকটি স্থানে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। 

জেলার সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানিগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া অনেক এলাকায় বন্যার্তরা এখনো ত্রাণ পাননি বলে অভিযোগ করেছেন। অনেকে ত্রাণ পেলেও মজুত ফুরিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন। দিন দিন এসব এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি এবং খাবারের তীব্র সংকট। 

বন্ধ ৭০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : সিলেটের অন্তত সাড়ে ৫০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া ২০০-এর মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। ফলে জেলার অন্তত সাড়ে ৭০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস জানায়, জেলায় এক হাজার ৪৭৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এর মধ্যে গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৪০০টি পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ফলে এসব বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

আশ্রয়কেন্দ্রে বন্যার হানা : এদিকে বন্যার পানিতে বাড়িঘর প্লাবিত হওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে মানুষজন। সেখানেও পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটছে তাদের। একতলা বিশিষ্ট অনেক আশ্রয়কেন্দ্রের ভেতরেও বন্যার পানি উঠে গেছে। জেলার কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ ও কানাইঘাটে এমন চিত্র দেখা গেছে। 

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অনেকগুলো আশ্রয়কেন্দ্রের নিচতলায় পানি উঠেছে। আর একতলা আশ্রয়কেন্দ্রেগুলো থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র পানিবন্দি থাকায় জরুরি প্রয়োজনে নৌকা ব্যবহার করে অন্যত্র ঝুঁকি নিয়ে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে। সময় যত গড়াচ্ছে ততই বাড়ছে বানভাসি মানুষের সংখ্যা। 

সিলেট আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমেদ চৌধুরী গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে আমার সংবাদকে জানান, আগামী কয়েকদিন সিলেটে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া ভারতের মেঘালয় রাজ্যে বৃষ্টিপাত না কমায় উজান থেকে পানির প্রবাহ অব্যাহত আছে। যার ফলে সহসাই এই পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। এদিকে গতকাল সকালে সিলেট মহানগরীর প্লাবিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। 

এসময় তিনি বলেন, পরবর্তী ঘোষণার আগ পর্যন্ত বন্যা পরিস্থিতির কারণে সিসিকের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অবস্থানকারী নাগরিকদের খাবার সংকট, পয়ঃসুবিধা, বিশুদ্ধ খাবার পানি, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে সিসিকের ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসক দল কাজ করছে বলেও জানান সিসিক মেয়র। 

সিলেট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমদ বলেন, ‘সিলেটের নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। এরই মধ্যে সবগুলো নদ-নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। বিভিন্ন জায়গায় নদ-নদীর পানি পাড় উপচে শহর-গ্রামকে প্লাবিত করে দিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার প্রতিটি জায়গায় পানি এক থেকে দেড় ফিট বেড়েছে বলেও জানান তিনি। 

সিলেট জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, জেলায় ৩২৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ৯৫টিতে মানুষ অবস্থান করছে। এছাড়া বন্যার্তদের মাঝে এ যাবত ২৩৬ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। এর সঙ্গে তিন হাজার ৯৪ বস্তা শুকনো খাবারও বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও নগদ ১৩ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

ত্রাণের জন্য বানভাসি মানুষের আকুতি : গত দুই দিনে সিলেটে বৃষ্টি কমলেও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সুরমা, কুশিয়ারা, সারিসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি এখনো বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল জেলার অধিকাংশ উপজেলায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সিলেট শহরেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। 

এদিকে দুর্ভোগ বেড়েছে বন্যাকবলিত এলাকার বাসিন্দাদের। অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, অন্যদিকে ঘরে মজুত করা খাবারও শেষ হয়ে গেছে। বন্যাদুর্গত মানুষ পর্যাপ্ত ত্রাণ পাচ্ছে না বলেও অনেকে অভিযোগ করেছেন। বানভাসি মানুষের অভিযোগ, অনেক ঘরবাড়িতে এখনো বুক ও গলা সমান পানি। অনেকে নিজের বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ ঘরের ভেতরে মাচা বানিয়ে থাকছেন। 

প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের নদী ও হাওরের পানির উচ্চতা গতকাল সকাল থেকে দুই ইঞ্চি বেড়েছে। গতকাল বিকেল পর্যন্ত নগরীর অন্তত ৩০টি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জেলার ১৩টি উপজেলায়ও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বন্যায় জেলা ও নগরীতে প্রায় ১২ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় সিলেটের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের কয়েকটি স্থানে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। জেলার সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানিগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদিকে সিলেটের সিভিল সার্জন এস এম শাহরিয়ার জানিয়েছেন, বন্যাকবলিত মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ১৪০টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এসব দলে চিকিৎসক ছাড়াও নার্সসহ স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট অনেকেই আছেন।

বন্যার্তদের পাশে মেয়র : এদিকে গতকাল সকালে সিলেট মহানগরীর প্লাবিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ সময় তিনি বলেন, পরবর্তী ঘোষণার আগ পর্যন্ত বন্যা পরিস্থিতির কারণে সিসিকের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। 

আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অবস্থানকারী নাগরিকদের খাবার সংকট, পয়ঃসুবিধা, বিশুদ্ধ খাবার পানি, স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণে সিসিকের ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসক দল কাজ করছে বলেও জানান সিসিক মেয়র। 

সিলেট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৗশলী আসিফ আহমদ বলেন, ‘সিলেটের নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার প্রতিটি জায়গায় পানি এক থেকে দেড় ফিট বেড়েছে। 

সিলেট জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, জেলায় ৩২৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল বিকেল পর্যন্ত ৯৫টিতে মানুষ অবস্থান করছে। এছাড়া বন্যার্তদের মাঝে এ যাবত ২৩৬ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। এর সঙ্গে তিন হাজার ৯৪ বস্তা শুকনো খাবারও বিতরণ করা হয়েছে। এছড়াও নগদ ১৩ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
 

Link copied!