Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

পিরোজপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী

ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল আলিম’র সাফল্যের দেড় বছর

মোঃ মনিরুল ইসলাম চৌধুরী, পিরোজপুর

মোঃ মনিরুল ইসলাম চৌধুরী, পিরোজপুর

মে ২২, ২০২২, ০৩:২৬ পিএম


ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল আলিম’র সাফল্যের দেড় বছর

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই), স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন একটি সংস্থা। নিরাপদ পানি সরবরাহের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের দায়িত্ব অর্পণ করে ১৯৩৫ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৫৪ সালে এর সাথে যুক্ত করা হয় স্যানিটেশন সেবা প্রদানের দায়িত্ব। 

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পরে সরকার প্রথমেই ধ্বংস প্রাপ্ত পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন পদ্ধতিগুলো পুনর্বাসনে গুরুত্ব আরোপ এবং তৎপরবর্তীতে নতুন অবকাঠামো স্থাপন শুরু করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। 

বর্তমানকালে ওয়াসার আওতাধীন এলাকা ব্যতীত সমগ্র দেশের নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব অধিদপ্তরের উপর ন্যস্ত। পিরোজপুর জেলায় পল্লী ও পৌর এলাকায় সুপেয় পানি সরবরাহ এবং স্বাস্থ্য সম্মত স্যানিটেশন কার্যক্রম নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় এবং উপজেলা সহকারী/ উপ-সহকারী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়। 

পিরোজপুর জেলার পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো এই এলাকাটি বলেশ্বর, কচা এবং সন্ধ্যা নদী বেষ্টিত এবং কোস্টাল এরিয়ায় অবস্থিত। অত্র জেলার অধিকাংশ উপজেলা নদী, খাল বেষ্টিত এবং দূর্গম। সমুদ্র ও নদী এলাকার মানুষের মধ্যে শিক্ষার অভাব থাকায় তারা স্যানিটেশনের বিষয়ে খুবই অসর্তক। তাছাড়া বর্তমানে প্রচলিত পাচঁ রিং বিশিষ্ট টয়লেট এখানে টেকসই নয়, সমুদ্র ও নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেই তা অচল হয়ে পড়ে। 

এ জেলা সমুদ্র ও নদী বেষ্টিত হওয়ায় বেরিবাধ ভেঙ্গে এখানে হঠাৎ বন্যাতে (Flash Flood) আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত জনগণের জন্য জরূরী পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা করার জন্য পর্যাপ্ত জরূরী তহবিল বরাদ্ধ পাওয়া যায় না। 

এছাড়া জেলার অধিকাংশ এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ পানি লবণাক্ত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় নিরাপদ খাবার পানি তীব্র সংকট বিদ্যমান। পিরোজপুর জেলার বৃহৎ অংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মানুষের বসবাস থাকায় তাদের পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য প্রয়োজন পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন খাতকে বিশেষ অগ্রাধিকার প্রদান পূর্বক পৃথক বাজেট বরাদ্দ। 

এখানে বিদ্যমান পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা সারা বছর কার্যকারিতা রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। শুষ্ক মৌসুমে পানির স্থিতিতল আস্তে আস্তে নিচে নেমে যাচ্ছে। এছাড়াও পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা অপ্রতুল অধিদপ্তরীয় জনবল।

এ বিষয়ে পিরোজপুর জেলার বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী “দৈনিক আমার সংবাদ”কে জানান, পিরোজপুর জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নতির জন্য বেশ কিছু ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়েছে যেমন প্রতি ৫০ জনের জন্য একটি পানির উৎস স্থাপন, ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানির যথাযথ ব্যবহার এবং সংরক্ষণ, পুকুর খননের মাধ্যমে ভূ-পৃষ্ঠের পানি ব্যবহার বৃদ্ধিকরণ, জেলার প্রতিটি  ইউনিয়নে পাইপড ওয়াটার সাপ্লাই সিস্টেম স্থাপন। স্বাস্থ্যসম্মত উন্নতমানের ল্যাট্রিনের কভারেজ বৃদ্ধিকরণ এবং নিরাপদ সুপেয় পানি সরবরাহের কভারেজ শতভাগে উন্নীতকরণ।

এরই ধারাবাহিকতায় বিগত ২০২০-২০২১ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে পিরোজপুর জেলাতে বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল আলিম গাজী, গত ১০ জানুয়ারী ২০২১ দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, পিরোজপুর কর্তৃক বাস্তবায়িত উন্নয়নমূলক কাজের সুফল গ্রামীণ এলাকাতে পৌছে দেওয়ার জন্য সাত উপজেলার অফিসার ও অন্যান্য সহকর্মীদের সহযোগিতায় আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। 

বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বিগত ২০২০-২০২১ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে পিরোজপুর জেলাতে বাস্তবায়িত কিছু উল্লেখযোগ্য কাজের বিবরণ নিম্নরূপ: গ্রামীণ এলাকাতে ৬নং গভীর নলকূপ স্থাপন ২৪০০ টি, রেইনওয়াটার হার্ভেস্টার সরবরাহ ৯২০০ টি, পুকুর খনন কাজ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে পুকুরপাড়ে সোলার পিএসএফ/ পিএসএফ নির্মাণের মাধ্যমে নিরাপদ পানি সরবরাহ ১০ টি, পুকুর পুনঃখনন পূর্বক পুকুরপাড়ে সোলার পিএসএফ নির্মাণের মাধ্যমে নিরাপদ পানি সরবরাহ ৯৩ টি, রিভার্স অসমোসিস প্লান্ট নির্মাণের মাধ্যমে নিরাপদ পানি সরবরাহ ১৬ টি, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানির উৎস স্থাপন ৬০ টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সোলার নলকূপ স্থাপন ০২ টি, কমিউনিটি টয়লেট নির্মাণ ৩৩ টি, পাবলিক টয়লেট নির্মাণ ৫টি, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতল বিশিষ্ট ওয়াশব্লক নির্মাণ ১৩৯ টি এবং কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ের জন্য হ্যান্ডওয়াশ বেসিন নির্মাণ ৪টি। 

এছাড়াও রাজস্ব বাজেটের আওতায় উপজেলা সহকারী প্রকৌশলীর কার্যালয় নির্মাণ করা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী জেলা ও উপজেলা কার্যালয়ে মেরামত কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, পিরোজপুর এর ইনস্পেকশন বাংলোটি সংস্কার পূর্বক আধুনিকায়ন করা হয়েছে। 

জায়গার সমস্যা ও দীর্ঘদিন ঠিকাদার কর্তৃক ফেলে রাখা কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তন্মধ্যে পিরোজপুর জেলাতে জেলা আঞ্চলিক পানি পরীক্ষাগার নির্মাণ কাজটি বর্তমানে চলমান রয়েছে এবং কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক আছে। 

আমারসংবাদ/এআই

Link copied!