Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

সাঁথিয়ায় হত্যা মামলা নিয়ে চলেছে নানা গুঞ্জন

সাঁথিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি

সাঁথিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি

জুন ২১, ২০২২, ০১:২৫ পিএম


সাঁথিয়ায় হত্যা মামলা নিয়ে চলেছে নানা গুঞ্জন

পাবনার সাঁথিয়া নাগডেমড়া ইউনিয়নরে সোনাতলা গ্রামে সাবেক চেয়ারম্যান হারিুন অর রশিদ ও বর্তমান চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান হাফিজের সাথে এলাকায় আধিপাত্য বিরোধে গত ৪ জুন রাতে সাঁথিয়া পৌরভাধীন পুঠিপাড়া গ্রামের আব্দুল মতিন নামে এক ব্যাক্তি দৃর্বৃত্তদের হাতে নির্মমভাবে খুন হন। এ সময় নিহতের সাথে থাকা সাবেক চেয়ারম্যান হারুনের ভাই জুয়েল আহত হয়। পরের দিন জুয়েলের বর্ণনাতে গত ৫জুন সাবেক চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ বাদী হয়ে ১৯জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন।

মামলার বাদী হারুন অর রশিদ এজহারে যা উল্লেখ করেন, তার ছোট ভাই জুয়েল চাচাতো ভাই মতিনকে সাথে নিয়ে প্রথমে ছেচানিয়া বাজারে যান। সেখান থেকে মতিনকে নিয়ে জুয়েল তার মেয়ের বাড়িতে যান। রাতে সেখান থেকে পায়ে হেঁটে বাড়ির দিকে রওনা দিলে পথি মধ্যে আওলাঘাটা ঘোনারচর এলাকায় আসামি রোসনাই’র হুকুমে চেয়ারম্যান হাফিজ হত্যার উদ্দেশ্যে চাপাতি দিয়ে মতিনকে কোপ দেয়। পরে আসামী রতন, মিজানুর, জাহিদ ও মতিনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায় এবং অন্যান্য আসামিরাও মতিনকে মারপিট করে। পরে ফেঁচুয়ান গ্রামের কাজল হারুন চেয়ারম্যানকে ফোন দিলে তিনি ঘটনাস্থলে এসে প্রথমে মতিনকে রক্তাক্ত অবস্থায় পায়। পরে জুয়েলকে নদীর কচুরি পানার মধ্যে থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় প্রধান আসামি বর্তমান চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান হাফিজ ও সবুজকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করেন। 

যে কারণ নিয়ে অনুসুন্ধান- চেয়ারম্যান আটকের পর থেকেই মতিন হত্যার রহস্য নিয়ে এলাকায় চলছে নানা গুঞ্জন।  টক অব দা গ্রামে পরিণত হয় হত্যা মামলার ৬ নং আসামি মালেশিয়া প্রবাসী আজিবরকে নিয়ে। তিনি ২০১৪ সাল থেকে মালেশিয়াতে অবস্থান করছেন। অথচ তিনি মামলার ৬ নম্বর আসামি। একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী জুয়েলের দেয়া বক্তব্য’ আর মামলার এজহারে নামের কোন মিল নেই। মামলায় বাদী যাদের উদ্ধৃতি দিয়ে অভিযোগ করেছেন তাদের বক্তব্যে জানা যায় ভিন্ন কথা। এসব ঘটনার রহস্য নিয়ে অনুসন্ধানে নামে সাংবাদিকরা খুজে পায় অজানা কিছু তথ্য-

অনুসুন্ধানে জানা গেছে, ঘটনার দিন ৪ জুন বিকেলে জুয়েল মতিনকে নিয়ে বের হয়। বিকেলে সোনাতলা থেকে সড়ক পথে পার্শ্ববতী ছেচানিয়া বাজারে যায়। সেখানে কিছু সময় অতিবিাহিত করে সন্ধার দিকে জুয়েলের মেয়ের বাড়িতে যায় বলে মামলার এজহারে লিখলেও। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই দিন জুয়েলের মেয়ে ও জামাই বাড়ি ছিল না। তারা গত ঈদের পর থেকেই পাবনা অবস্থান করছিল। প্রশ্ন রয়ে যায় এখানে তাহলে কেন মেয়ের বাড়ি কিভাবে ফলমুল নিয়ে গেল। কে তাদের আপ্যায়ন করলো? মেয়ে এবং জামাই বাড়িতে না থাকায়ও তাদের ওখানে যাওয়া। 

শুধু তাই নয়- শেষে রাত সাড়ে আটটার দিকে সড়ক পথে না গিয়ে রহস্যজনক কারণে নির্জন ইছামতি ডাইক দিয়ে পায়ে হাঁটা পথে যাওয়ার পরিকল্পনায় ফেঁচুয়ান ঘাটে নদী পারের জন্য অপেক্ষা করে মতিন ও জুয়েল। যে ঘাটে  শুধু কৃষকেরা ওপারে জমিতে চাষাবাদ ও কৃষিপণ্য আনা নেয়ার জন্য পারাপার হয়। ঘটনার দিন ওই নদীতে মাছ শিকার করতে যাওয়া মৎস্য শিকারী কাজল ও বাবুর সহযোগীতায় তারা চারজনই ওপারে যায়। 

এদের মধ্যে বাবু জানান, ওরা দুজন কচুরি পানার কারণে নৌকা দিয়ে পার হতে পারছিলেন না। তাই তারা দুজন তাদের সাহায্যে করেন পার হওয়ার জন্য। 

মৎস্য শিকারী বাবু আরো জানান, তারা পার হয়ে চলে যাওয়ার ১৫/২০ মিনিট পর  একজন মানুষের চিৎকার শুনা যায়। চিৎকার শুনে বাবু কাজলকে সাথে নিয়ে এগিয়ে গেলে ভয় পেয়ে আশ পাশের লোকজনকে ডাকতে থাকে। অথচ আশপাশে প্রায় ১ কিলোর মধ্যে কোন বাড়িঘর নেই। এখানেও রহস্য রয়ে যায়। পরে নদীর কিনারে গিয়ে দেখতে পায় জুয়েল কচুরি পানার মধ্যে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করে বলতেছে আমি হারুনের ছোট ভাই আমাকে বাঁচান। কিছুক্ষণ পরে জুয়েলের স্বজনেরা এসে কোন কিছু জিজ্ঞাসা না করেই জুয়েলকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। 

এ সময় বাবু বলেন, জুয়েলকে নিয়ে যাওয়ার পর আমরা দুজন ফিরে আসতে কিছুদুর এসে রাস্তার পাশে মতিনের লাশ দেখতে পাই। ভয়ে আমরা কাউকে কিছু না বলে চলে আসি পরে লাশের দিকে একটা মটরসাইকেল আসতে দেখি।

খুনের সময় সাথে থাকা একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী জুয়েল, বাহাদুরসহ ৭/৮ জনকে চিনতে পারে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান। কিন্তু অদৃশ্য কারণে বাহাদুরের নাম এজারভুক্ত করা হয়নি। এদিকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া জুয়েলের সাংবাদিকদের কাছে দেয়া বক্তব্যতে হাফিজের নাম আসেনি। তা ভিডিও দেখলে বুঝা যাবে। যা এ প্রতিনিধির নিকট সংরক্ষিত রয়েছে। অথচ রহস্যজনকভাবে প্রধান আসামি হয়ে যায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নবনির্বাচিত তরুণ চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান হাফিজ। এ নিয়ে এলাকায় চলছে নানা গুনজন। 

কে এই রোসনাই? হাফিজ চেয়ারম্যান রোসনাইর হুকুমে মতিনকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করে। রোসনাই হলো ৬ নং আসামি মালেশিয়া প্রবাসী আজিবরের ভাই। তিনি বাদীসহ বিভিন্ন লোকের বাড়িতে কাজকর্ম করে খাওয়া দিন মজুর।

মতিনের মেঝো মেয়ে শারমিন বলেন, আমার মা বাদী হতে চেয়ে ছিলো কিন্তু সাবেক চেয়ারম্যান হারুন জোর করে সে নিজেই বাদী হয়েছে।

এজাহারভূক্ত ৬ নাম্বার আসামি আজিবরের স্ত্রী সনজীদা বলেন, আমার স্বামী ২০১৪ সালে মালাসিয়ায় গেছে। এ পর্যন্ত একবারো সে বাংলাদেশে আসে নাই। মামলার বাদীর ভাই একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী জুয়েল আমার স্বামীর বন্ধু ছিলো। জুয়েলের কাছে আমরা জমি বাবদ টাকা পাবো। আমার স্বামী মালেশিয়া থেকে কিভাবে হত্যা মামলার আসামি হলো সেটাই আমার প্রশ্ন?

এলাকাবাসীর দাবি জুয়েলকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদেই বের হতে পারে মামলার আসল রহস্য। এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের ১৬ দিন অতিবাহিত হলেও আসল রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মঈনুল হোসেন মিলন বলেন, নিবিড়ভাবে মামলার তদন্ত চলতেছে। 

কেএস 

Link copied!