Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

আহত শিক্ষার্থীর বাবা আটক

কৃষি কর্মকর্তার বিরোদ্ধে শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ

আল-আমিন, নীলফামারী:

আল-আমিন, নীলফামারী:

জুন ২৪, ২০২২, ০৪:৪৭ পিএম


কৃষি কর্মকর্তার বিরোদ্ধে  শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ

নীলফামারীর ডোমার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আনিছুজ্জামানের বিরুদ্ধে ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সিয়ামকে মাটিতে ফেলে বুকে লাথি দিয়ে মারধরের অভিযোগ করেছেন সিয়ামের পরিবার। এ ঘটনায় সিয়ামের বাবা তার ছেলেকে মারার কারন জানার জন্য উপজেলা পরিষদে কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ে গেলে সেখানে উভয়ের মধ্যে বাক-বিতন্ডার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে। অফিসের ঘটনায় রাতে কৃষি কর্মকর্তা সিয়ামের বাবাসহ ৬জনের নাম উল্লেখ করে সরকারী কাজে বাধা ও অফিস ভাঙচুরের মামলা আনয়ন করেন ডোমার থানায়। এ ঘটনায় দুইজনকে গ্রেফতার করেছে ডোমার থানা পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন ডোমার থানার অফিসার ইনচার্জ।

 সোমবার(২১ জুন)  বিকালে উপজেলা হেলিপ্যাড মাঠে ঘটনাটি ঘটে। সিয়াম ছোটরাউতা ডাঙ্গাপাড়া এলাকার মোফাজ্জল হোসেন মোফার ছেলে ও উপজেলা আদর্শ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আনিছুজ্জামানের  ছেলে উপজেলা আদর্শ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র রাহাদ আহমেদ মৃন্ময় সাথে একই বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র সিয়াম আহমেদের খেলার মাঠে সাইকেল চালানোকে কেন্দ্র করে ঝগড়া বাধে। ঝগড়ার এক পর্যায়ে দুইজনের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। বিষয়টি মৃন্ময়ের মা উপজেলা কৃষি অফিসারের স্ত্রী তাদের কোয়াটারের জানালা দিয়ে দেখতে পেয়ে মাঠে গিয়ে সিয়ামকে মারধর করে টেনে হেচরে তাদের কোয়াটারের দিকে নিয়ে যায়। এরেই এক পর্যায়ে তিনি তার স্বামী কৃষি অফিসারকে ফোন দিলে কৃষি অফিসার, অফিস থেকে উত্তেজিত হয়ে তাদের কোয়াটারের সামনে এসে সিয়ামকে মারধর ও তার বুকে লাথি মারেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ছাত্র সিয়াম। সিয়ামকে মারধরের ঘটনার সময় মাঠে থাকা অন্যান্য শিক্ষার্থীরা এগিয়ে এসে সিয়ামকে মারার কারন জানতে চাইলে কৃষি অফিসার তাদের গায়েও হাত তুলেন বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন।

 এ সময় শিক্ষার্থীরাসহ স্থানীয় লোকজন সিয়ামকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়। কর্তব্যরত ডা. নাহিদা বলেন, শিশুটি গায়ে ও বুকে আঘাতের চিহৃ রয়েছে। শিশুটিকে বর্তমানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে সে সুস্থ্য রয়েছে।

এই ঘটনার জের ধরে সন্ধ্যায় সিয়ামের বাবা মোফাজ্জল হোসেন মাঠে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীদের নিয়ে উপজেলা পরিষদে কৃষি অফিসারের কার্যালয়ে যান।এবং কৃষি অফিসারের কাছে তার ছেলেকে মারধরের কারন জানাতে চাইলে উভয়ে তর্ক বির্তকে জড়িয়ে পরেন। এক পর্যায়ে সেখানে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের জন্য থানায় খবর দেয়া হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। পুলিশ এ সময় সিয়ামের বাবা মোফাকে আটক করে।
ওইদিন রাতে কৃষি কর্মকর্তা আনিছুজ্জামান বাদী হয়ে ৬জন নামীয় ও অজ্ঞাত নামীয়দের নামে সরকারী কাজে বাধা,অফিসে ঢুকে কর্মকর্তাকে লাঞ্চিত করার অভিযোগে থানায় মামলা করেন। মামলা নং-৬, তাং-২১/৬/২২। ওই মামলায় মোফাজ্জল হোসেন ও সৌরভ নামে দুইজনকে আটক করে মঙ্গলবার সকালে আদালতে প্রেরন করেন পুলিশ।

আহত শিশুটির মা স্বপ্না আক্তার জানান, তার ছেলে সিয়াম দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ্য। তার খাদ্যনালি চিকন হয়ে যাচ্ছে। ৫ম শ্রেণিতে পরলেও অসুস্থ্য থাকার কারনে তাকে খাৎনা দেওয়া যায়নি। অপারেশনের জন্য দ্রæত ভারতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। তিনি বলেন, আমার ছেলে ভুল করলে তিনি আমাকে জানাতে পারতেন। আমি তাকে শাসন করতাম। কিন্তু তিনি এসে আমার অসুস্থ্য ছেলের বুকে লাথি মারেন। একজন দায়িত্বশীল অফিসার হয়ে এমন জঘন্য কাজ কিভাবে করেন তিনি। আবার উল্টো তিনি আমার স্বামীসহ এলাকার লোকজনের নামে মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে মামলা দিয়েছেন। মুন্না নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আমি অফিসার স্যারের কাছে সিয়ামকে কেন মারছেন জানতে চাইলে তিনি আমার কলার চেপে ধরে উপজেলায় কোন ডাঙ্গাপাড়ার লোক আসতে পারবেনা বলে হুমকি দেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে বিষয়টি জানার জন্য তার অফিসে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার সেলফোনে ফোন দেওয়া হলে ফোন রিসিভ না করায় তার মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।। জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। তাছাড়া এটি ডোমার উপজেলা পরিষদের বিষয়। তারা বসে হয়তো কোন সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে পারেন।

ডোমার থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে তাদের আদালতে প্রেরন করা হয়েছে। 

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রমিজ আলম জানান, সোমবার সন্ধ্যায় অফিসে এসে কিছু লোক হামলা করে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।

আরইউ

Link copied!