Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

"আজাদুল তোর মা মরেনি, এখনও বেঁচে আছে"!

মাসুম বিল্লাহ, গাইবান্ধ

মাসুম বিল্লাহ, গাইবান্ধ

জুলাই ২, ২০২২, ০৬:০০ পিএম


গাইবান্ধায় দারিদ্র্য পরিবারের ৭৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধার মৃত্যুর আগেই মারা গেছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। পুরাতন কাঁথায় ঢেকে রাখা হয় বৃদ্ধার পুরো শরীর।

পরিবারে চলে শোকের মাতম। ডাকা হয় হুজুর, প্রস্তুতি নেয়া জানাজা ও কবর খননের। কিন্তু গাইবান্ধা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান দেখতে গিয়ে বৃদ্ধার পা নড়ছে বলে দৃষ্টি গোছর হয়। পরে শরীর থেকে কাঁথা নামিয়ে নিবিড় চোখে তাকালে আবারো নড়ে উঠে পা। 

ডিএলও চিৎকার দিয়ে বলেন, "আজাদুল তোর মা মরেনি, এখনও বেঁচে আছে"। পরে তার আর্থিক সহযোগিতার চিকিৎসায় সম্পূর্ণ সুস্থ্য হয় বৃদ্ধা। (২ জুলাই) শনিবার দুপুরে পীরগঞ্জের সাবেক এক সাংসদের ওই বৃদ্ধার জন্য পাঠানো টাকায় দুই বস্তা চিকন চাল, মুরগী, শিং মাছ, ডাল, তেলসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করে দেখতে যান তিনি। 

গাইবান্ধা সদর উপজেলার সাহাপাড়া ইউনিয়নের সাহাপাড়া গ্রামের ৭৫ বছর বয়সী দারিদ্র এক বিধবা মহিলা। ওই গ্রামে "দুলালের দাদী" বলেই পরিচিত। কৃষক বাবা আজাদুলের অস্বচ্ছল সংসার বলে দুলাল কৃষি কাজ করেই দাদিকে দেখা শোনা করে। 

বর্তমান গাইবান্ধা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ডিএলও) মাসুদুর রহমানের বাড়ি ওই গ্রামেই। সেদিন (গত ২৪ জুন শুক্রবার) তিনি সাহাপাড়া তাঁর  গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে জানতে পারেন দুলালের দাদি মারা গেছেন। ১৮ বছর বয়সী দুলাল তাঁর অতি স্নেহের। বাড়ী গেলেই সবসময়ই তাঁর সাথেই থাকে। মাসুদার রহমানকে বড় আব্বা বলে ডাকে। দুলালের দাদির আকস্মিক মৃত্যুর খবরে ভারাক্রান্ত মনে দুলালের দাদিকে দেখতে গেলেন তিনি।

দুর-দুরান্তের আত্বীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী দিয়ে বাড়ি ভরপুর। সবাই দোয়া দরুদ পড়ছে। বাহিরে হুজুর অপেক্ষা করছে। কবর খননের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ঘরের মধ‍্যে ঢুকে দেখেন উত্তর-দক্ষিন দিকে শোয়ায়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত কাঁথা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে বৃদ্ধাকে। 

বৃদ্ধার মাথা থেকে পা পর্যন্ত গভীর মনোযোগে তাকাচ্ছিলেন মাসুদার রহমান। হঠাৎ মনে মনে হলো বৃদ্ধার পা টা যেন নড়ে উঠল। বড় অদ্ভুত মনে হলেও শরীর থেকে পুরো কাঁথাটা সরাতে বললেন তিনি। মহিলাদের হাজারো বাঁধা উপেক্ষা করে কাঁথা সরানো হল।এবার আরো গভীর নজরে বৃদ্ধার পায়ের দিকে তাকাতেই আবারো পা নড়ালেন বৃদ্ধা। 

মাসুদার রহমান এবার বৃদ্ধার ছেলে আজাদুলের নাম ধরে চিৎকার দিয়ে ডেকে বললেন " আজাদুল তোর মা মরেনি, এখনও বেঁচে আছে"! পরে স্থানীয় ডাক্তার ডেকে স‍্যালাইনের ব‍্যবস্হা করা হলে দুপুরের দিক থেকে হাত-পা নাড়তে থাকে বৃদ্ধা। বিকেলে ডিএলও মাসুদুর রহমান আবার দেখতে গেলেন। তখন হাত-পা নাড়লেও চোখ, মুখ ছিল একেবারেই নীরব। তখন আরো একটা স‍্যালাইনের ব‍্যবস্হা করা হলো। 

ধীরে ধীরে উন্নতি হতে থাকে বৃদ্ধার শরীর। পরের দিন বৃদ্ধা চোখ খোলেন এবং কথা বলেন। বিষয়টি মাসুদার রহমানকে জানালে আবেগ আপ্লুত ডিএলও আবারো দেখতে যান। এবার বৃদ্ধাকে ডিএলও'র বাবার নাম ধরে বলে পরিচয় করে দিতেই "মাসুদ বাবা" বলেই ডাকেন বৃদ্ধা। বর্তমানে সম্পূর্ণ সুস্থ্য আছেন ওই বৃদ্ধা। 

গাইবান্ধা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, যেদিন বৃদ্ধার সাথে আমি নিজে কথা বলতে পেরেছি, ওই দিনটিই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আনন্দের দিন ছিল। 

এসময় তিনি আরো বলেন, গ্রামে এভাবেই হয়তো গরীব-অসচেতন অনেক পবিবারগুলোর ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বয়স্কদের মরার আগেই কবরস্হ হতে হয়। চিকিৎসার ব‍্যবস্হা না করে মরার আগেই কান্নাকাটি, জানাযা এবং কবর খোঁড়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। 

আমার মনে হয় গ্রামের উচ্চ শিক্ষিত লোকেরা যে কারনেই শহরে বসবাস করুকনা কেন, তাদের নিজ নিজ এলাকার এমন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং পরামর্শ প্রদান করা উচিৎ। একইসাথে এমন পরিবেশে স্থানীয় সচেতন ও সজ্জন লোকদের এগিয়ে আসা উচিত। 

আমারসংবাদ/এআই 

Link copied!