Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪,

ঝুপড়ি ঘরে তাদের মানবেতর জীবন

মো: বোরহান উদ্দিন বুলবুল, বড়াইগ্রাম

মো: বোরহান উদ্দিন বুলবুল, বড়াইগ্রাম

ডিসেম্বর ৩, ২০২২, ০৯:৩২ পিএম


ঝুপড়ি ঘরে তাদের মানবেতর জীবন

শারীরিকভাবে অক্ষম কানাইলাল মাহাতো (১০০) ও তার স্ত্রী ফুলবতি মাহাতো (৯২)। বয়সেরভারে অনেকটাই ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন। চোখে ঝাপসা দেখেন, কানেও কম শোনেন। পুত্র-পুত্রবধূ-নাতনি, কন্যারা থাকেন অন্যত্র আলাদা ঘরে। ঝুপড়ি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।

বয়সের ভারে কানাই লাল মাহাতো আর চলতে পারেন না। কোন কাজ কর্ম করতে পারেন না। একসময় কানাইনাল মাহাতো বাসের চাটাই, কুঞ্চির তৈরি মাটির কাটার ঢাঁকি, ঝাঁকা, মাছ ধরার পলো, গরুর মুখে দেবার টোনা, মাছ রাখার জন্য খালোই তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে যা আয় হতো তাতেই তাদের সংসার চলতো।

স্ত্রী ফুলবতি মাহাতো (৯২) বলেন, আমার স্বামীর আর শক্তি সামর্থ্য নেই। চোখেও কম দেখে কানেও কম শোনে। হাঁটতে চলতে ফিরতে পারে না। তাই আমাদের চলার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। আমার তিন ছেলে এবং দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। তিন সন্তানের মধ্যে দুই ছেলেই আজ থেকে ১০/১২ বছর পূর্বে  মারা গেছে। আমার স্বামীর সামান্য জমি জমা রয়েছে, যা শুধু বাড়ির ভিটা।  

আমাদের দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। এরমধ্যে একজনের নাম আমতি রাণী। তাকেও বিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস স্বামীর ঘরে তাদের ঠাঁই হয়নি। হতে হয়েছে স্বামী পরিত্যাক্তা। আর ছোট মেয়ে লক্ষী রানী মাহাতো হয়েছেন বিধবা। দুই মেয়ে এসে আমার বাড়িতেই বসবাস করছে। তাদেরও নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যায়। একজন হার্ট ঝাড়ু দেয়, আর অন্যজন অন্যের গৃহে কাজ করে।

স্বরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কানাইলাল মাহাতোর ঘরের চালাটি চারটি ভাঙ্গা টিন দিয়ে ছাপরা দেওয়া। টিনগুলো ছিদ্র আর বেশিরভাগই ফুটো যা রাত্রিবেলা চাঁদের আলো যেন ঘর থেকেই দেখা যায়। বৃদ্ধার স্ত্রী কিছু পাটকাঠি, ছন চেয়ে, কুড়িয়ে এনে সঙ্গে কিছু পেপার কুড়িয়ে বেড়া দিয়ে, উপড়ি ঝুপড়ি ঘরেই মধ্যে তাদের বৃদ্ধাদের বসবাস।

ফুলবতি মাহাতো আবেগঘন কন্ঠে বলছিলেন, ‘‘হামরাতো কাউকে বলতে পারিনা, হামাগারে তো কেউ নাই, যে  হামাদের কে  ঘর করে দেবে, জায়গা আছে  খানেক কিন্তু  ঘর করার মত টাকা পয়সা হামাদের নাহি, মেম্বার, চেয়ারম্যানকে তো অনেকবার বলেছি হামাদেরকে  একটা ঘর করে দেওয়ার জন্য। তারা বলেছে সরকারি সুযোগ-সুবিধা আসলে ঘর করানোর ব্যবস্থা করে দিবে।এখন আর কত দিন গেলে আর কত বয়স হলে হামাদের ঘর করে দেবে, হামরা তা বলতে পারিনা। হামাদের শুধু উপরে আছে উপরওয়ালা আর আছে ভগবান, তিনি হামাদেরকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। এখন হামি হাটে-বাজারে, মাইনষের  বাড়ি  ভিক্ষা করে যা পাই, যা চাল -ডাল, তরি-তরকারি পাই  তাহা খাইয়া হামরা বেঁচে আছি’’।

কানাইলাল বলেন, ‘‘হামরাতো শুনেছি জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাকি দরিদ্র অসহায়দের ভূমিহীনদের কে নাকি ঘর করে দিচ্ছে, হামরা আর কতদিনে বাঁচবো, হামাদের সাথে যারা সঙ্গী সাথী ছিল তারা তো অনেক শ্মশানে চলে গেছে। আর কত বছর বয়স হলে ঘর পাব সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাবো জানিনা এমনটাই বলছিলেন বৃদ্ধা কানাইলাল। শেষ বয়সে যদি একটা ঘর পেতাম তো হামরা স্বামী-স্ত্রী মইরাও শান্তি পেতাম’’।

ঘরের বিষয়ে ৬ নং ওয়ার্ড সদস্য মো: ওয়ারসেল আলী আকন্দর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, যাদের জায়গা আছে ঘর নেই তাদের একটা তালিকা এসিল্যান্ডের অফিসে জমা দেওয়া হয়েছিল। বড়াইগ্রাম ভূমি অফিসার মোঃ শাহাদৎ হোসেন স্বর জমিনে তদন্ত করেছিলেন। কিন্তু কেন বৃদ্ধা ঘর পেল না তার বিষয় সঠিক তথ্য তিনি জানেন না।

বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো মারিয়াম খাতুন বলেন, যারা আদিবাসী সম্প্রদায় আছে এবং যাদের নিজস্ব জায়গা আছে কিন্তু ঘর নেই।তাদের জন্য প্রতি বছরই ঘর নির্মাণের জন্য  বরাদ্দ আসে। যদি বৃদ্ধার নিজস্ব জমি থাকে এবং ঘর না থাকে তাহলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী একটি মানুষও গৃহীন থাকবে না। প্রত্যেক দরিদ্র অসহায় ভূমিহীন মানুষেরাই পর্যায়ক্রমে ঘর পাবে। এর জন্য ইউপি চেয়ারম্যান অথবা মেম্বারের মাধ্যমে আবেদন করে পাঠালে যাতে উনারা ঘরটি পায় তার ব্যবস্থা করে দেব বলে আশ্বাস প্রদান করেন। 

এআই

Link copied!