Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

মুঘল আমল থেকে অষ্ট্রগ্রামের পনিরের সুখ্যাতি

আশরাফুল ইসলাম তুষার

আশরাফুল ইসলাম তুষার

ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৩, ০৩:১১ পিএম


মুঘল আমল থেকে অষ্ট্রগ্রামের পনিরের সুখ্যাতি

অষ্ট্রগ্রামের পনিরের সুখ্যাতি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ায় ক্রেতার সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। কয়েক বছর আগেও পনিরের কারিগর ও ব্যবসায়ী ছিল হাতেগোনা। গত দুই বছর ধরে পনিরের চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় পনিরের কারিগর ও ব্যবসায়ী বৃদ্ধি পেয়েছে।

মুঘল আমল থেকে ইংরেজ শাসনামল হয়ে স্বাধীন বাংলা। মানুষের পছন্দের তালিকায় যুগ যুগ ধরে শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে অষ্টগ্রামের সুস্বাদু পনির।

সরেজমিন অষ্টগ্রাম সদর ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকা ঘুরে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ৪০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অষ্টগ্রামের পনির তৈরি হয়ে আসছে। জনশ্রুতি আছে মোঘল আমলে অষ্টগ্রামে আসা দত্ত পরিবারের হাত ধরে এখানে পনির তৈরি শুরু।  ১৯৬০ সালে অষ্টগ্রামের প্রায় প্রতি বাড়িতেই তৈরি করা হতো পনির। 

সে সময় উপজেলায় পুরাদস্তর পনির ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন ৩০ থেকে ৩৫ জনের মতো। অষ্ট্রগ্রাম সদর ইউনিয়নের চৌধুরী পাড়া,হাবলী পাড়া গ্রামে ও বড়বাজার পাকপাঞ্জাতন মিষ্টি ভান্ডারে পনির তৈরি করা হয়। এ সব গ্রামে এখন ১০০-১৫০ টি পরিবার এ পনির তৈরি কাজে নিয়োজিত। 

স্থানীয় কারিগরদের তৈরি পনিরের কদর রয়েছে বঙ্গভবন-গণভবন হয়ে দিল্লীর মসনদেও। জিভে জল আসা এই পনির সীমিত পরিসরে জায়গা করে নিয়েছে ইউরোপের বাজারেও।পনির দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরাপের কয়েকটি দেশে রপ্তানী হয়। হাওরে অলওয়েদার সড়ক নির্মাণ হওয়ার পর থেকে হাওড়ের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রচুর পর্যটক আসছেন। পর্যটকরা এসে অষ্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী খাবার পনির ক্রয় করেন। 

এছাড়া অনলাইনেও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পনিরের অর্ডার আসে অষ্ট্রগ্রামের ব্যবসায়ীদের কাছে। বর্তমানে পনিরের ব্যাপক চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পনিরের কারিগর ও ব্যবসায়ী বৃদ্ধি পেয়েছে। 

অষ্টগ্রামে তৈরি হওয়া সুস্বাদু পনির দেখলেই বা ঘ্রান শুকলেই  জিভে জল এসে যায়। এই খাবারটি এখন  হয়ে উঠেছে গোটা কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যের অন্যতম স্মারক। জেলার ব্র্যান্ডিং পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়া পনিরের কদর এখন সর্বত্র। অলওয়েদার সড়কের কল্যাণে হাওরের যোগাযাগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসায় পনির হয়ে ওঠেছে সম্ভাবনার এক শিল্প।

অষ্ট্রগ্রাম বড়বাজারের পাকপাঞ্জাতন মিষ্টি ভান্ডারের স্বত্ত্বাধিকারী মো.কাঞ্চন মিয়া জানান, আমাদের অষ্ট্রগ্রামের পনির দেশের বিভিন্ন জেলায় যায় এমনকি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমাদের তৈরি পনিরের সুখ্যাতি রয়েছে। পাইকাররা আমাদের এলাকা থেকে পনির নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করে থাকে।  আমি প্রতিদিন খুচরা প্রায় ১৫-২০কেজি পনির বিক্রি করে থাকি। আর আমার দোকানে কর্মরত ৫-৭ জন কর্মচারী কাজ করে। এদের জীবিকা আমার ব্যবসার উপর নির্ভরশীল।

যেভাবে তৈরি হয় ঐতিহ্যবাহী পনির, প্রথম একটি বড় পাত্রে দুধের সঙ্গে তেঁতুল মিশ্রিত টক পানি ও স্বাভাবিক পানি রাখা হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে দুধ জমাট বাঁধতে শুরু করে। এ সময় হাত দিয়ে মিশ্রণ নাড়াচাড়া করতে হয়। পর তা চাকু দিয়ে কেটে ছোট ছোট পিস করা হয়। এরপর পানি থেকে তুলে পনির ছোট ছোট অংশে বাঁশের টুকরিতে রাখা হয়। 

টুকরিতে রাখা অবস্থায় পনির থেকে পানি চুঁইয়ে পড়তে থাকে। পানি পড়া শেষ হলে পনির ছোট ছোট ছিদ্র করে লবণ দিয়ে রাখা হয়। লবণ দেওয়ার পর তা ইছামতো আকার প্যাকেট পুরে বা সংরক্ষণ করে রাখা হয়। এভাবে প্রায় ১০ লিটার দুধ থেকে এক কেজি পনির পাওয়া যায়। স্থানীয়ভাবে পনির ৭০০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে কারিগররা।

আরএস

Link copied!