Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

হরিজন শিশুদের সঙ্গে বৈষম্য

হোটেলে বসে খাওয়ার অধিকার নেই, দেওয়া হয় না প্লেটও

শায়েস্তাগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি 

শায়েস্তাগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি 

ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৩, ০৬:৩৩ পিএম


হোটেলে বসে খাওয়ার অধিকার নেই, দেওয়া হয় না প্লেটও

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে হোটেল-রেস্তোরাগুলোতে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষেরা। তাদের অভিযোগ তারা শুধুমাত্র হরিজন সম্প্রদায়ের হওয়ার কারণে তাদেরকে হোটেলে বসতে দেওয়া হয় না।

এমনকি তাদের স্কুল পডুয়া শিশুদেরকে কাগজে দেওয়া হয় খাবার, খেতে হয় বাহিরে দাঁড়িয়ে। তাই তারা দিন দিন স্কুলের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন। এই বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন অমল হরিজন নামে একব্যক্তি।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শাযস্তোগঞ্জ উপজেলার রেলওয়ে কলোনীর স্থায়ী বাসিন্দা তারা। টিফিনের সময় অন্যান্য ধর্মের বাচ্চারা হোটেলে বসে খায়। তবে তাদের ছেলে মেযরো স্কুল ড্রেস পরে গেলেও তাদেরকে কাগজে নাস্তা এবং ময়লা পাত্রে দেওয়া হয় পানি। যা দেখে অন্যান্য সহপাঠীরা তাদের সঙ্গে মিশতে চায় না।

এতে করে হরিজন সম্প্রদায়েরে শিশুরা লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়ছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের মেহমান আসলে হোটেলে ঢুকতে দেওয়া হয় না। ফলে তাদের সঙ্গে আত্মীয়তাও করতে চায় না।

এ বিষয়ে অভিযোগকারী অমল হরিজন বলেন, রাস্তার পাগলকেও হোটেলের কাপ প্লেট এ খাবার দেওয়া হয়। তবে আমরা হরিজন সম্প্রদায় বলে আমাদের হোটেলে ঢুকতে দেওযা হয় না। আমরা কি মানুষ না?

তিনি জানান, পানাহার হোটেল, ধানসিঁড়ি রেস্টুরেন্ট, আল মদিনা, শেরাটন, আল সোহাগ হোটেলে তাদের শিশুদের সঙ্গে এই আচরণ করা হয় সবচেয়ে বেশি।

শায়েস্তাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাজা হরিজন জানায়, তাকে কখনোই হোটেলে বসতে দেওয়া হয় না। কাগজের ওপর খাবার নিয়ে তাকে হোটেলের বাইরে বসতে হয়। কারণ সে হরিজন সম্প্রদায়ের একজন। শুধু রাজা একা নয়।

রেলওয়ে কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী ঔম হরিজন (৮), একই বিদ্যালয়ের প্রেম হরিজন (৯), মেঘনা হরিজন (৮) একই আচরণ পায়। তাদের সবার ‘অপরাধ’, তারা হরিজন সম্প্রদায়ে জন্মগ্রহণ করেছে।

বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদ শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি রামপল হরিজন জানান, শহর পরিষ্কার রাখতে আমরাই কাজ করি। অথচ, সেই পরিষ্কার শহরে আমাদের সঙ্গেই বৈষম্য করা হয়। আমাদের ছেলে-মেয়েরা বিভিন্ন স্কুলে পড়ালেখা করে। টিফিনের সময় বাকি সব শিশু হোটেলে বসে খেতে পারলেও আমাদের ছেলে-মেয়েরা ঢুকতে পারে না। আমরা এটা থেকে পরিত্রান চাই।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান আল রিয়াদ বলেন, হরিজন সম্প্রদায়ে সঙ্গে যদি কেউ এমন আচরণ করে থাকে; তাহলে এটা চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। এর বিরুদ্ধে সকলকে সচেতন হতে হবে।

একই বিষয়ে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজরাতুন নাঈমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অভিযোগটি এখনো আমার হাতে আসেনি। আগামীকাল (আজ) অফিসে গিয়ে বিষয়টি দেখবো।

এআরএস

Link copied!