মাগুরা প্রতিনিধি
জুন ১৭, ২০২৫, ০৮:২২ পিএম
মাগুরায় প্যাথিডিন ইনজেকশনের অপব্যবহার ভয়াবহ আকার নিচ্ছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় মাদকসেবীরা শিরা না পেয়ে শরীরের সংবেদনশীল অঙ্গ, এমনকি যৌনাঙ্গেও পুশ করছে এই ইনজেকশন। এতে শুধু শরীরিক ক্ষতি নয়,এক সুচ একাধিকজন ব্যবহার করায় দ্রুত ছড়িয়ে পরতে পারে এইচআইভি/এইডস ও অন্যান্য সংক্রমণ।
প্যাথিডিন মূলত একটি ব্যথানাশক ওষুধ,যা অস্ত্রোপচারের পর ব্যবহারের জন্য সরকার নির্ধারিত হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে সীমিতভাবে সরবরাহ করা হয়। মাগুরায় এমন লাইসেন্সপ্রাপ্ত স্থানের সংখ্যা ১০টির মতো। কিন্তু জেলা শহরের বাইরে, গ্রামগঞ্জেও এই ইনজেকশন এখন সহজলভ্য হয়ে উঠেছে।
মাগুরা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা.মামুন বলেন, “যৌনাঙ্গে ইনজেকশন দেওয়া খুবই বিপজ্জনক। এতে রক্তপাত, সংক্রমণ তো হয়ই, কখনো-কখনো পচন ধরে অঙ্গ হারানোর আশঙ্কাও থাকে। এক সুচ একাধিকজন ব্যবহার করলে এইচআইভি, হেপাটাইটিস দ্রুত ছড়ায়।”
মাগুরা শহরের একটি বেসরকারি পুনর্বাসন কেন্দ্রের কর্মী সুমন খান বলেন, “আমাদের কাছে ১৫-২০ বছরের অনেক তরুণ আসছে যারা একসময় ইয়াবা খেত, এখন ইনজেকশন নিচ্ছে। তারা নিজেরাও জানে না কত বড় ঝুঁকি নিচ্ছে।”তিনি বলেন, জেলা পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য ও ড্রাগ ডি-অ্যাডিকশন সার্ভিস নেই বললেই চলে। যেটুকু আছে, সেটা সচেতন নাগরিকদের কাছে প্রায় অজানাই।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্যাথিডিনের বিতরণে কঠোর নজরদারি, ইনজেকশনসেবীদের জন্য ‘হ্যাম রিডাকশন’ (সেফ ইনজেকশন প্রোগ্রাম), এবং তরুণদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে।
এ বিষয়ে মোঃ সাজ্জাদ হোসেন, সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (স্থানীয় সরকার শাখা,সংস্থাপন শাখা,)তিনি বলেন,“মাদক সেবন ও অবৈধ বিক্রির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে প্রশাসন কাজ করছে। নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। মাদক নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসন,আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জনসাধারণের সমন্বিত উদ্যোগ একান্ত জরুরি। কেউ অবৈধভাবে মাদক সংরক্ষণ বা বিক্রির সঙ্গে যুক্ত থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ডাঃ মোঃ শরিফুল হক মেডিকেল অফিসার,পাবনা মানসিক হাসপাতাল“ তিনি বলেন,পেথিডিন একটি শক্তিশালী ব্যথানাশক, যা চিকিৎসা ছাড়া সেবন করলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। এর অপব্যবহারে শারীরিক ও মানসিক নির্ভরতা তৈরি হয়। দেখা দিতে পারে শিরায় ইনফেকশন, মানসিক ভারসাম্যহীনতা, এমনকি আত্মহত্যার প্রবণতাও। নিয়মিত অপব্যবহারকারীদের সমাজ ও পরিবার থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।”
আজ দুপুরে ডা. শামীম কবির সিভিল সার্জন,মাগুরা বলেন,“প্যাথিডিন একটি নিয়ন্ত্রিত ওষুধ, যা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট চিকিৎসা প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়।এর অপব্যবহার অত্যন্ত বিপজ্জনক ও আইনগতভাবে দণ্ডনীয়। মাগুরায় আমরা অবৈধ প্যাথিডিন সরবরাহ ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছি। ক্লিনিক, ফার্মেসি ও চিকিৎসকদের কার্যক্রম নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। যারা প্যাথিডিন অপব্যবহার করছে বা অবৈধভাবে সরবরাহ করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আরএস