সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২১, ১১:৩৫ এএম
জীবন বীমা কর্পোরেশনের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম ও বাণিজ্যের অভিযোগ পায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগ করা হয় স্বয়ং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. জহুরুল হক নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে জড়িত। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে গত সোমবার জীবন বীমা করপোরেশন কার্যালয়ে অভিযান চালায় দুদক। অভিযানে এমডি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বক্তব্য রেকর্ড করে দুদকের অভিযানিক টিমের সদস্যরা। অভিযোগ ও অভিযানের বিষয়ে দৈনিক আমার সংবাদের সাথে বিস্তারিত কথা হয় এমডি জহুরুল হকের । আলাপকালে তিনি উল্টো অভিযোগ করে বলেন, এ বিষয়টিতে একটি সুবিধাভোগী সিন্ডিকেট চক্র তাকে ফাঁসাচ্ছে। বাস্তবে তিনি স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করায় অসাধু চক্রের স্বার্থে আঘাত লেগেছে বলে মনে করেন জহুরুল হক।
তিনি বলেন, এর আগেও এই নিয়োগ দুইবার স্থগিত করেছিল সিন্ডিকেট চক্রটি। মূলত তারা এতে মোটা অংকের আর্থিক লেনদেন করেছে। বিষয়টি নিয়ে আমি কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করি। তারা আমাকে স্বচ্ছতার সাথে মেধাবী লোকবল নিয়োগের ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দেন। আমিও জীবন বীমার স্বার্থ বিবেচনা করে মেধাবী ও দক্ষ লোকবল নিয়োগে স্বচ্ছতার সাথে কাজ করার চেষ্টা করি। এতে অসাধু সিন্ডিকেট চক্র, যারা বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়েছে তাদের স্বার্থে আঘাত লাগে এবং তারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরুকরে।
তিনি বলেন, যখন পরীক্ষার প্রক্রিয়াই শুরু হয়নি তখন থেকেই একটি ‘ব্যান্ড হওয়া পত্রিকায়’ আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে চক্রটি। এরপর আমি গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে জানাই, কোন অসচ্ছতার প্রমাণ পেলে সেটি তুলে ধরার জন্য। এরমধ্যে পরীক্ষা হয়েছে, ফলাফলও প্রকাশ করা হয়েছে এতদিন কেউ কিছু বলেনি, যোগ করেন তিনি।
কারা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে আমি নির্দিষ্ট করে জানিনা তবে, যারা বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়েছিল এমন একটি সিন্ডিকেট আমার কাছে এসেছিল অবৈধ সুবিধার জন্য। আমি তাদের মুখের খাবার কেড়ে নিয়েছি। স্বচ্ছতার ভিত্তিতে মেধাবীদের নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। তাই তারা এখন একটি সংস্থার কাছে গিয়েছে। আমি আশাকরি তারা স্বচ্ছতার ভিত্তিতে বিষয়টি তদন্ত করবেন এবং দুদক যদি দেখেন আমার কোনো অন্যাায়-অপরাধ আছে তাহলে তারা ন্যায়-নীতির ভিত্তিতে কাজ করবেন।’
তার কার্যালয়ে দুদকের অভিযানের বিষয়ে গণমাধ্যমে ভুল সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি মনে করেন এতে সুবিধাভোগী সিন্ডিকেট চক্রটি লাভবান হবে। অভিযানের বিষয়ে তিনি আরো বলেন মূলত দুদকের একটি টাস্কফোর্সের সদস্যরা কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে আমার কার্যালয়ে এসেছিল। তারা অভিযোগের সত্যতা যাচাই করছেন।
এ সময় তাঁর কার্যালয়ে প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্রসহ বিভিন্ন আলামত পাওয়া গেছে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, এমন কিছুই পাওয়া যায়নি এবং দুদকও এটি বলেনি, গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, জীবন বীমা করপোরেশনে উচ্চমান সহকারীসহ ৫১২ পদে নিয়োগ পরীক্ষায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. জহুরুল হকের বিরুদ্ধে প্রশ্ন ফাঁস ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগে ওঠে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) জীবন বীমা করপোরেশন কার্যালয়ে অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সংস্থাটির সমন্বিত কার্যালয় ঢাকা-১ এর সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজীর নেতৃত্বে দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট এ অভিযান চালায়। এ সময় অভিযোগের বিষয়ে এমডি ও পরিচালকসহ (প্রশাসন) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়।
দুদক জানায়, সত্যতা উদঘাটনের জন্য এ সংক্রান্ত আরও তথ্য ও রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হবে। এরপর এগুলো বিস্তারিত পর্যালোচনা করে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমিশন বরাবর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
আমারসংবাদ/আরএইচ